পিঠে খেলে মনে সয়

আজকাল অবশ্য মায়ের হাতের পিঠে মিষ্টির দোকানের প্রপার্টি। ব্লগ লিখছেন অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়উত্তুরে হাওয়া বইলেই বাঙালির জীবনে দক্ষিণহস্তের কাজকর্ম একটু বেড়ে যায়। জয়নগরের মোয়া থেকে প্লাম কেক— বাঙালির শীতভোজনের ফিরিস্তি ফুরনোর নয়। তবে ক্ল্যাসিকাল বাঙালির লিস্টে সবার আগে রয়েছে পৌষের পিঠে, যা না খেলে সত্যিই পেটে সয় না তার!

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:০০
Share:

উত্তুরে হাওয়া বইলেই বাঙালির জীবনে দক্ষিণহস্তের কাজকর্ম একটু বেড়ে যায়। জয়নগরের মোয়া থেকে প্লাম কেক— বাঙালির শীতভোজনের ফিরিস্তি ফুরনোর নয়। তবে ক্ল্যাসিকাল বাঙালির লিস্টে সবার আগে রয়েছে পৌষের পিঠে, যা না খেলে সত্যিই পেটে সয় না তার!

Advertisement

ডাল পিঠে, গোকুল পিঠে, রস পুলি, চন্দ্র পুলি, বেণী পিঠে, তেলের পিঠে, চুটকি পিঠে, ভাপা পিঠে— পিঠে অনেক। পিঠে প্রণালীও অনেক রকম। ছোটবেলায় দেখতাম মকরসংক্রান্তিতে পিঠে ব্যাপারটা ছিল মা-র কাছে রীতিমতো রিচুয়্যালের মতো। কেক ছাড়া যেমন ক্রিসমাস হয় না, পিঠে ছাড়া পৌষ ছিল তেমনই অসম্ভব। আজকাল অবশ্য মায়ের হাতের পিঠে ব্যাপারটা মিষ্টির দোকানের প্রপার্টি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাড়িতে বাড়িতে পিঠে তৈরির চল কসমো-কলকাতায় প্রায় উঠতে বসেছে। জেলা কিংবা শহরতলির ছবিটা যদিও তেমন পাল্টায়নি আজও।

প্রবাসের ছবিটা অবশ্য বেশ এনকারেজিং। মুম্বইতে আমাদের সুইট বেঙ্গল আউটলেটগুলোতে দেখেছি অবাঙালিদেরও পিঠে-পুলি-পায়েসের জন্য কী তীব্র আকুলতা! বাঙালির রসনা নিয়ে অবাঙালিদের এই ভজনা দিন-দিনান্তরে দেখছি বেড়েই চলেছে। তবে এই পিঠে ব্যাপারটা শুধু বাঙাল বা বাঙালিদের ইউএসপি বললে ভুল হবে। ওড়িশা বা অসমেও কিন্তু এর সমান কদর। পিঠে বা পিঠার ঐতিহ্যে হয়তো তাঁরা বাঙালিদের চেয়ে বেশি আন্তরিকও। যে চিনেদের ডিমসাম নিয়ে আমাদের আধুনিকতার শেষ নেই, বস্তুত সে-ও তো এক পিঠেরই রূপান্তর। আসলে আজ বাঙালিদের ব্যাপারটা হল যতক্ষণ না এই ভিন্টেজ খাদ্যবস্তুটি মডার্ন প্যাকেজিংয়ে আসছে, মলফেরত বাঙালি তাকে আমলই দেবে না। উদারীকরণ হয়ে আমাদের ক্ষুদ্রচিন্তার সুযোগটা ক্রমশ বাড়ছে। ভয় হয়, কোনও দিন না শুক্তো কী পোস্তর বড়া খেতে আমাদের বিদেশ যেতে হয়!

Advertisement

হতাশা থাক বাতাসা হাতে। চলুন, আমরা বইমেলা, ট্রেড ফেয়ার, গঙ্গাসাগর, ফ্লাওয়ার শো, ইডেন গার্ডেন্স, পার্ক স্ট্রিট ঘুরে ফিরে যাই অন্তঃপুরে যেখানে পুলি-পিঠে-পাটিসাপটার পুর হিসেবে ঠাসা আছে আদি ও অকৃত্রিম বাঙালিয়ানা। হলই বা মেড ইন মিষ্টির দোকান, হাত পাল্টালে কতটাই বা তার জাত পাল্টায়, শুধু সব মায়ের আশীর্বাদ থাক মাথার ওপরে আর মনে থাক তাঁদের স্নেহ-মাখানো সেই সব অসামান্য পিঠে-স্মৃতি!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement