যোগ ব্যায়ামে সুস্থ থাকবে শরীর
শরীর সুস্থ রাখতে হলে শুধু খাবার আর ওষুধ খেলেই হবে না। শরীর সুস্থ রাখতে হলে দরকার নিয়মিত ব্যায়াম। প্রতিদিন নিয়ম করে কিছুক্ষণ ব্যায়াম করলে শরীর চনমনে থাকে। যদিও সারা বছর আবহাওয়া বদলের কারণে প্রত্যেকেরই অল্পবিস্তর ঠান্ডা লাগার ভয় থেকেই যায়। গরমের দাবদাহ থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই বৃষ্টিতে ভেজেন। আর তা থেকেই সর্দি-জ্বরের মতো সমস্যার তৈরি হয়। এই বর্ষায় খানিক সাবধান হলেই আপনার কোনও চিন্তা থাকবে না। কোন যোগ ব্যায়ামে ভাল থাকবেন এই বর্ষার মরশুমে, জানাচ্ছেন যোগ ব্যায়াম প্রশিক্ষক রতন মাইতি।
সূর্যভেদ প্রাণায়াম
এই বর্ষায় শরীর সুস্থ রাখার জন্য করতে পারেন সূর্যভেদ প্রাণায়াম। একাগ্রতার অভাব, মস্তিষ্কের অবসাদ, ক্লান্তি, দুর্বলতা, স্মরণশক্তি হীনতা ও মনের অস্থিরতা দূর করতে এটি বিশেষ ভাবে সাহায্য করে। তা ছাড়া বর্ষায় সর্দিতে অনেকেরই নাক বন্ধ হয়ে যায়। সেই ক্ষেত্রে এই ব্যায়াম করলে সহজেই উপকার পাওয়া যায়। উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ সারাতেও এই ব্যায়াম অনেক বেশি কার্যকারী।
সূর্য নমস্কার
বলা হয়, যে কোনও রোগের অব্যর্থ দাওয়াই সূর্য নমস্কার। নিয়মিত সূর্য নমস্কার করলে পরিপাকযন্ত্র, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস এবং স্নায়ুমণ্ডলী সবল হয়। তা ছাড়াও যকৃতের গোলমাল, বহুমুত্র, সর্দিকাশি, হাঁপানি, বুক ধড়ফড়ানি, হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের ক্রিয়াবৈষম্য, মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের দুর্বলতাজনিত রোগসমূহ, সামান্য শ্রমে বেশি কাতরতা ইত্যাদি নিরাময় হয় সূর্য নমস্কারে। শরীর ও মন সুস্থ রাখতে হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে বহু যোগগুরু ভরসা রেখেছেন সূর্য নমস্কারে। এই ব্যায়াম অভ্যাসের ফলে দেহে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শরীরের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতা বাড়ে। সূর্য নমস্কারে মোট বারোটি আলাদা আলাদা অঙ্গবিন্যাস রয়েছে৷ যার প্রতিটির আলাদা আলাদা উপকারিতা রয়েছে৷ এক মাত্র এই একটি আসনেই সারা শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কাজ একসঙ্গে হয়। তবে আপনার হাই ব্লাড প্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপ এবং কোমরে ব্যথা বা স্লিপ ডিস্কের সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই এই ব্যায়াম করা উচিত।
সূর্য নমস্কার
সেতু বন্ধনাসন
এই আসনের নাম সেতু বন্ধন কারণ এই আসন আমাদের মস্তিষ্ক ও শরীরের ক্লান্তি কমাতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে। এছাড়াও এই আসন করলে আমাদের পিঠের ও কোমরের শক্তি বৃদ্ধি হয়। আবার ঘাড়ের ক্ষেত্রেও এই আসন ভীষণ উপকারী। কী ভাবে করবেন এই আসন? চিত হয়ে শুয়ে হাত দুটো প্রথমে শরীরের সমান্তরালে দু’পাশে রাখতে হবে। এর পরে পায়ের তালু এবং কাঁধে ভর দিয়ে কোমরটা ওপরের দিকে তুলতে হবে। এর মাধ্যমে পেলভিক পেশির ব্যয়াম হয়। বর্ষার সময় অনেকেরই শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ব্যাথা বাড়ে। সেক্ষেত্রে এই আসন আপনাকে উপকার দেবে অনেকাংশে।
নৌকা আসন
বর্ষাকালে নৌকা আসনের থেকে উপকারি আর কিই বা হতে পারে? এই আসন করার সময় শরীরের আকৃতি অনেকটা নৌকার মতো দেখায় বলে এই আসনের নাম নৌকা আসন। এই আসনের মাধ্যমে দেহের প্রায় সমস্ত অংশেই কমবেশি উপকার পাওয়া যায়। বিশেষ করে হাত, পা, কাঁধ, ঘাড়, বুক, পেট, পিঠ, কোমর, মেরুদণ্ড, মেরুদণ্ডের দু’পাশের পেশি ইত্যাদি।
ভুজঙ্গাসন
ভুজঙ্গের অর্থ হল সাপ। এই আসন করার সময় সাপের মতো দেখতে লাগে বলে এই আসনটির নাম ভুজঙ্গাসন। আসনটি নিয়মিত করলে স্পন্ডিলাইটিস, স্লিপ ডিস্ক জাতীয় রোগ সহজেই নিরাময় হয়। সমস্ত ধরনের স্ত্রীরোগের মহৌষধ হিসেবে কাজ করে এই আসন। কী ভাবে করবেন এই আসন? প্রথমে উপুড় হয়ে পা দু’টি জোড়া রেখে মাটিতে শুয়ে পড়তে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যাতে হাত দু’টি শরীরের দু’পাশে ও হাতের পাতা মাটিতে লেগে থাকে। এরপর হাত দু’টি টেনে নিয়ে এসে দুই বাহু বরাবর উপুড় করে রাখতে হবে। দুই হাতের ওপর ভর করেই মাথাটি ওপরের দিকে তুলতে হবে। কোমর থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত পা জোড় অবস্থায় সোজা থাকবে। নাভি মেঝেতে লেগে থাকবে। দম থাকবে স্বাভাবিক। এভাবে পূর্ণ ভঙ্গিমায় এসে ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ড রাখতে হবে। ৩ থেকে ৫ বার এই একই পদ্ধতি মেনে আসনটি করতে হবে। স্পন্ডিলাইটিস, স্লিপ ডিস্ক ও স্ত্রীরোগের রোগ নিরাময়ের পাশাপাশি, যে সব ছেলে বা মেয়ের বয়স অনুযায়ী বক্ষের গড়ন সরু বা অপরিণত তাদের এ আসনটি করা উচিত। তা ছাড়াও এই আসনটিতে ঘাড় গলা মুখ বুক পিঠ কোমর ও মেরুদণ্ডের উপরে চাপ পড়ায় ঐ অঞ্চলের স্নায়ুতন্ত্র ও পেশি সতেজ এবং সক্রিয় থাকে। পিঠের মাংসপেশিকে মজবুত ও বেশি কর্মক্ষম করে, মেরুদণ্ডের হাড় নমনীয় থাকে, বর্ষায় অনেকেরই ঠাণ্ডা লেগে টনসিল বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। টনসিল থেকে মুক্তির জন্যে এই আসন যেন ম্যাজিকের মতো কাজ করবে। তা ছাড়া এই আসনটি হাই ব্লাডপ্রেসার রোগীদের জন্যে খুবই উপকারী। মানসিক উদ্বেগ ও উত্তেজনার ফলে আমাদের শরীরের রক্তে অ্যাড্রিনালিন বেড়ে গিয়ে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। এই আসন নিয়মিত অভ্যাস করলে অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিকে ত্রুটিমুক্ত ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত এই আসন করলে হজমশক্তি বাড়ে। যকৃৎ ও প্লীহা সুস্থ থাকে।
এই প্রতিবেদনটি সংগৃহীত এবং 'আষাঢ়ের গল্প' ফিচারের অংশ