অভাবের তাড়নায় গর্ভাবস্থায় সন্তান ‘বিক্রি’র অভিযোগ নিয়ে তুমুল হইচই হল মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সোমবার সকালে এক মহিলার শিশুপুত্র হওয়ার পরে ঘটনাটি ঘটেছে। ওই প্রসূতির নাম রুমা পাল। রুমাদেবীর বাবা মনোহর শর্মা ও মা মমতা দেবী হাসপাতালে গিয়ে সদ্যোজাত নাতিকে দেখার পরে আচমকা ওই অভিযোগ তুললে শোরগোল পড়ে যায়। প্রসূতির স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ি অভিযোগ অস্বীকার করলেও বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালে উত্তেজনা ছড়ায়। তখন নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা কর্তৃপক্ষকে খবর দেন। হাসপাতালের ডেপুটি সুপার পুলিশকে জানান। পরে হাসপাতাল সুপারের লিখিত অভিযোগ পেয়ে প্রসূতির স্বামী, শাশুড়ি সহ বাবা-মাকে জেরা শুরু করেছে পুলিশ। ওই ঘটনার পর সদ্যোজাত শিশুটিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের হেফাজতে রেখেছে। যাঁকে সন্তান বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে তিনি অবশ্য দাবি করেছেন, “সন্তান কেনাবেচার কোনও প্রশ্নই নেই। আমার কোনও সন্তান নেই, তাই আমি কেবল ওই দম্পতির সন্তানের দায়িত্ব পালন করব, এটা বলেছিলাম।”
মালদহের পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, “ঘটনাটি জটিল। তবে গর্ভের সন্তান বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল এমন লিখিত অভিযোগ মেয়ের পরিবারের তরফে এখনও কেউ জানাননি। কিন্তু হাসপাতাল সুপারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।” মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডেপুটি সুপার জ্যোতিষচন্দ্র দাস জানান, কোথাও একটা গোলমাল রয়েছে। তিনি বলেন, “প্রসূতিকে প্রতিবেশী এক মহিলার নামে ভর্তি করানো হয়েছে। সে জন্যই সন্দেহ দৃঢ় হয়েছে। পুলিশকে সবই খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।”
পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক তদন্তে কিছু তথ্য অবশ্য সংগ্রহ করেছে। ওই তদন্তে জানা গিয়েছে, রুমাদেবীর স্বামী মালদহের পুরাতন সাহাপুরের দোকানকর্মী প্রদ্যোত পাল। তাঁদের ৩ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। অভিযোগ, ফের গর্ভবতী হওয়ার পরে প্রদ্যোতবাবু ও রুমা দেবী প্রতিবেশী নিঃসন্তান দম্পতি মিঠুন হালদার ও তাঁর শিখা দেবীর কাছ থেকে অর্থ সাহায্য নেন। সেই সময়ে ফের সন্তান হলে তাঁকে ওই নিঃসন্তান দম্পতিকে দেওয়ার শর্তে ৩০ হাজার টাকা রুমা দেবীর স্বামী নেন বলে অভিযোগ।
রবিবার সন্ধ্যায় রুমাদেবী হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করাতে নিয়ে যান প্রতিবেশী মিঠুনবাবু। তিনি পেশায় কল সারাইয়ের মিস্ত্রি। সেখানে রুমা দেবীকে শিখা হালদার নামে ভর্তি করানো হয়। সোমবার সকালে অস্ত্রোপচার করে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন রুমাদেবী। খবর পেয়ে সদ্যোজাত নাতিকে দেখতে যান রুমাদেবীর বাবা ও মা। মমতাদেবী জামাই প্রদ্যোতবাবুর সঙ্গে কথাবার্তার পরেই আচমকা হইচই শুরু করেন। মেয়ে-জামাই জন্মের আগেই নাতিকে বিক্রি করে দিয়েছে বলে হইচই করতেই হাসপাতালে শোরগোল পড়ে যায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানোর পর তিনি অভিযোগ জানাতে থানায় গেলেও বিকেল পর্যন্ত অবশ্য অভিযোগ জানাননি।
মমতাদেবী বলেন, “হাসপাতালে জামাইয়ের কাছে শুনতে পাই, প্রতিবেশী মিঠুন হালদারের কাছে ৩০ হাজার টাকায় গর্ভের সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছে। তাই মাথা ঠিক রাখতে পারিনি। এমনকী প্রথম থেকে আমার মেয়ের সব খরচও তাঁরাই বহন করেছেন। পরে জামাই ভুল স্বীকার করায় বিষয়টি মিটিয়ে নিতে চাই।”
প্রসূতির স্বামী ও শাশুড়ি অবশ্য সন্তান বিক্রির আভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁরা বলেন, “অভাবের সংসার। তাই প্রতিবেশী মিঠুনবাবুর থেকে সাহায্য নেওয়া হয়। কিন্তু সন্তান বিক্রির অভিযোগ ভিত্তিহীন।” তবে কেন রুমাদেবীকে ভুয়ো পরিচয়ে ভর্তি হতে হল? এই প্রশ্নে তাঁরা নীরব।
কী বলছেন মিঠুনবাবু? ৮ বছর আগে বিয়ে হয়েছে মিঠুন ও শিখার। কোনও সন্তান হয়নি। মিঠুনবাবুর দাবি, “অভাবের জন্য ওঁরা আর সন্তান চান না বলে আমার ঠাকুমার কাছে জানতে পারি। ওঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। গর্ভবতীর সব খরচ চালাতে রাজি হই। সন্তান হলেও সব দায়িত্ব পালন করব বলে কথা দিই। তা হলে সন্তান কেনাবেচার প্রশ্ন উঠছে কেন সেটাই বুঝতে পারছি না।”