সংক্রমণ বাড়ছে শিলিগুড়িতে

উত্তরবঙ্গে অন্য প্রান্তের সঙ্গে শিলিগুড়ি শহরেও এনসিফ্যালাইটিস সংক্রমণের ঘটনা বাড়ছে। সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থকেন্দ্র এবং নার্সিংহোমগুলিতে প্রতিদিন জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তা সত্ত্বেও শিলিগুড়ি শহরে মশা ও শুয়োর ঠেকাতে পুরসভা সক্রিয় নয় বলে অভিযোগ উঠেছে। কাউন্সিলরদের একাংশের অভিযোগ, পুর কর্তৃপক্ষের হেলদোল না থাকায় পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৪ ০৩:২০
Share:

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত স্বামীর পাশে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন স্ত্রী। ভিড় সামলাতে জরুরি বিভাগে রোগী দেখছেন জলপাইগুড়ি হাসপাতালের সুপার সুশান্ত রায়।

উত্তরবঙ্গে অন্য প্রান্তের সঙ্গে শিলিগুড়ি শহরেও এনসিফ্যালাইটিস সংক্রমণের ঘটনা বাড়ছে। সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থকেন্দ্র এবং নার্সিংহোমগুলিতে প্রতিদিন জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তা সত্ত্বেও শিলিগুড়ি শহরে মশা ও শুয়োর ঠেকাতে পুরসভা সক্রিয় নয় বলে অভিযোগ উঠেছে। কাউন্সিলরদের একাংশের অভিযোগ, পুর কর্তৃপক্ষের হেলদোল না থাকায় পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

Advertisement

পুরসভা সূত্রের খবর, ব্লিচিং পাইডার, মশা মারার তেল থেকে শুরু করে ফগিং মেশিন ব্যবহার চললেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগন্য বলে কাউন্সিলরেরাই অভিযোগ করেছেন। শহরের সদ্য প্রাক্তন মেয়র থেকে শুরু করে পুরসভার বিরোধী দলনেতা, প্রাক্তন মেয়র পারিষদ এবং একাধিক কাউন্সিলরকে নিজেদের প্রচেষ্টায় ব্লিচিং পাউডার-সহ নানা জিনিসপত্র জোগাড় করে ওয়ার্ডে কাজ করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ।

পুরসভার প্রাক্তন মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “আজ অবধি তিন বস্তা ব্লিচিং পাউডার পেয়েছি। মশা মারার তেল কিছু ছেটানো হয়েছে। আর ফগিং মেশিন এখনও অবধি দুদিন চলেছে। তাও আবার একদিন কিছু চলার পর মেশিন খারাপ হয়ে যায়।” তিনি জানান, বাসিন্দাদের সাহায্যে ব্লিচিং জোগাড় করা হয়। একই বক্তব্য প্রাক্তন মেয়র পারিষদ স্বপন চন্দেরও। তিনি বলেন, “আমি ১০ বস্তা ব্লিচিং নিজে কিনে রাস্তায় ছড়িয়েছি।”

Advertisement

এ হেন বেহাল পরিষেবার জন্য রাজ্য সরকারকে দায়ী করেন বিরোধী দলনেতা নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, “বিভিন্ন ফাঁকা জলা জমি পরিষ্কার, বহুতলে জমা জল সরানো নিয়ে পুরসভা পদক্ষেপ করেনি। খাপছাড়া ভাবে কিছু কাজ হচ্ছে মাত্র। কলকাতা থেকে আজ অবধি শহরে কোনও বিশেষজ্ঞ দল আনেনি পুরসভা।” শহরের আরেক প্রাক্তন মেয়র পারিষদ সুজয় ঘটক বলেন, “গতবার ডেঙ্গির সময় শুয়োর পালনকারী সাফাই কর্মীদের বেতন বন্ধের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। এতে শুয়েরোর দাপট কমে। এ বার তো কিছুই হয়নি। পরিকাঠানো নিয়ে না বলাই ভাল।”

এ দিকে, যে বাম কাউন্সিলরের বাবা এনসেফ্যালাইটিসে চিকিৎসাধীন, সেই দীপায়ন বসু বলেন, “আমার এলাকায় ৪০ কাঠার মত একটি খেত রয়েছে। জল জমে। বহু বার বলার পরেই কিছু হয়নি। বাবা আক্রান্ত হওয়ার পর সেগুলি পরিষ্কার শুরু করেছে পুর কর্তৃপক্ষ।”

তৃণমূল কাউন্সিলরা যাবতীয় নালিশ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন। প্রাক্তন মেয়র পারিষদ কৃষ্ণ পাল বলেন, “বামেরা এবং কংগ্রেস তো সংক্রমণ নিয়েও রাজনীতি করছে। আমরা পুরসভা থেকে যখন যা চাইছি, পাচ্ছি। শহরের অবস্থা এখন নিয়ন্ত্রণে।” দলের আরেক প্রাক্তন মেয়র পারিষদ দুলাল দত্ত বলেন, “ব্লিচিং একটু কম ছিল ঠিকই। তবে বাকি সব ঠিকই আছে।”

পুরসভা কর্তৃপক্ষ সাধ্যমত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন। পুর কমিশনার সোনাম ওয়াংদি ভুটিয়া বলেছেন, “ব্যানার, ফ্লেক্স দিয়ে প্রচার হচ্ছে। সাফাই কর্মী কম থাকায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সব ওয়ার্ডে কাজ করানো হচ্ছে।” তিনি জানান, ব্লিচিং পাইডার কাউন্সিলরদের দেওয়া হয়েছে। আবার দেওয়া হবে। মশা মারার তেল এবং ফগিং মেশিন ঘুরছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কুলিপাড়া, ডিজেল শেড, মহারাজকলোনি, হরিজনবস্তি, পোকাই জোত, বিফাইবস্তি, বাগরাকোট এবং দুর্গানগর কলোনি, বাল্মীকি বস্তি-সহ একাধিক অঞ্চলে অবাধ শুয়োর পালন চললেও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি যদিও পুরসভার কমিশনারের বক্তব্য, “আমরা খবর পেলে শুয়োর ধরছি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement