চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি নিয়ে অভিযোগ উঠছিল দীর্ঘদিন ধরেই। মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পরিদর্শনে এসে শুক্রবার হাতেনাতে তার প্রমাণ পেলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি নিয়ে ক্ষুব্ধ সুশান্তবাবু হাজিরার বিশদ রিপোর্ট চেয়েছেন।
এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান সুশান্তবাবু। সেই সময় একাধিক বিভাগীয় প্রধান-সহ অন্তত জনা ৪০ চিকিৎসক হাসপাতালে ছিলেন না। পরে সুশান্তবাবু বলেন, “শল্য বিভাগের প্রধান-সহ অনেক চিকিৎসককে খুঁজে পাইনি। চিকিৎসকদের বলেছি যাঁরা কাজ করবেন না, তাঁরা ইচ্ছে করলে চাকরি ছেড়ে দিতে পারেন। অধ্যক্ষকে বলেছি, যাঁরা কাজে আসছেন না, তাদের শো-কজ করুন। বেতনও কাটতে বলেছি।” হাসপাতাল সূত্রের খবর, পরে মেডিক্যাল কলেজের বিভিন্ন বিভাগের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন সুশান্তবাবু। কারা নিয়মিত আসছেন না, কারা পরে এসে খাতায় সই করছেনসেই সমস্ত রিপোর্ট তিনি কলকাতায় তাঁর দফতরে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
বস্তুত, মালদহ মেডিক্যালে চিকিৎসকের সংখ্যা দু’শোরও বেশি হলেও বাস্তবে রোগীরা তাঁদের দেখা পান না। অভিযোগ, বুধ-বৃহস্পতিবারেই অর্ধেকের বেশি চিকিৎসক কলকাতায় চলে যান। এরপর সোমবার ফিরে তাঁরা হাজিরা খাতায় সব দিনের সই করেন। চিকিৎসকের সংখ্যা যথেষ্ট হলেও তাঁরা দিনের পর দিন না আসায় আইসিইউ-ও পুরোপুরি চালু করা যায়নি বলে অভিযোগ।
এ দিন পরিদর্শনের সময়ে রোগীদের পরিজনের একাংশ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধেও অনুপস্থিতির অভিযোগ তোলেন। সুশান্তবাবু বলেন, “সবকিছু দেখা হচ্ছে। কাউকে ছাড়া হবে না। এনআরএসের ঘটনাতেও আমরা কাউকে ছাড়িনি। মালদহেও কড়া পদক্ষেপ করা হবে।” তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্বন্ধে কিছু বলতে চাননি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্য চিকিৎসকদের অনুপস্থিতির রিপোর্ট চাওয়া সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য, “যা জানানোর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেব।”
চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি রোখার দাবিতে এ দিন সুশান্তবাবুকে ডেপুটেশন দেয় তৃণমূলের চিকিৎসক সংগঠন প্রোগ্রেসিভ ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের জেলা সভাপতি তাপস চক্রবর্তী বলেন, “দিনের পর কাজ না করে শতাধিক চিকিৎসক পুরো মাসের বেতন তুলছেন। আমরা তাঁদের বেতন
বন্ধ করে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়েছি।” এ দিন সুশান্তবাবু কলেজের আইসিইউ, ইএনটি বিভাগ ঘুরে দেখেন। পরে অর্ধসমাপ্ত ওপিডি ভবন, অ্যাকাডেমিক ভবন দেখে ঠিকাদার সংস্থার ইঞ্জিনিয়রকে বলেন, “৩১ মার্চের মধ্যে কাজ শেষ করুন, নইলে কাজ ছেড়ে চলে যান।”