চলছে অনশন। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।
এ যেন নেই রাজ্য। পরিকাঠামোর বেহাল দশা। ফলে সমস্যায় পড়ছেন পড়ুয়া ও রোগীরা। তা নিয়ে সোচ্চার হতে গেলে হাজির হয় পুলিশ। কারণ, কর্তৃপক্ষ কোনও আলোচনায় নারাজ। বিধাননগরের ন্যাশনাল ইন্সস্টিটিউট অফ হোমিওপ্যাথি সম্পর্কে এমনই অভিযোগ ছাত্রছাত্রী-সহ অনেকেরই। কয়েক বছর ধরেই চলছে এমন দশা। তার জেরে গত চার দিন ধরে অনশনে বসেছেন ছাত্রছাত্রীরা। ইতিমধ্যে তিন জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মূল অভিযোগ, স্রেফ অধিকর্তার বৈষম্যমূলক আচরণের জন্যই এমন অবস্থা। তাই তাঁর পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অধিকর্তা।
হাসপাতালের কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, পরিকাঠামো যথেষ্ট বেহাল। অস্ত্রোপচারের পরে রোগীকে কোলে তুলে নিয়ে যেতে হয়, সঙ্গে এক জন স্যালাইনের বোতল হাতে নিয়ে যান। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘এটা চিকিৎসার নিয়ম বহির্ভূত। রোগীর ন্যূনতম অধিকার নষ্ট হচ্ছে।’’ অথচ হাসপাতালে রোগীদের জন্য লিফ্ট রয়েছে। অভিযোগ, ২-৩ বছর ধরে সেটি খারাপ হয়ে রয়েছে।
শুধু লিফ্টই নয়, রয়েছে অন্যান্য সমস্যাও। এই হাসপাতালে গড়ে প্রতি দিন বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় দু’হাজার মানুষ চিকিৎসা করাতে যান। কিন্তু প্যাথলজি বিভাগে পর্যাপ্ত কর্মী নেই। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই বাইরে থেকে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করাতে হয় বলে অভিযোগ রোগীদের একাংশের।
ব্যহত হচ্ছে পঠনপাঠনও। ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, মহিলাদের হোস্টেলে প্রায় ৯০ জন ছাত্রীর জন্য মাত্র দু’টি শৌচালয় রয়েছে। জলের অভাবও যথেষ্ট। ছেলেদের হোস্টেলেও জল সরবরাহের বেহাল দশা। পরিস্রুত পানীয়ের সুবন্দোবস্ত নেই। হোস্টেল বিল্ডিং-এর কোথাও সিলিং থেকে প্লাস্টার খসে পড়ছে, কোথাও বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। নিরাপত্তার অভাবও রয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের দাবি, এই সব নিয়ে প্রতিবাদ করলেই পুলিশ ডাকা হচ্ছে। এমনকী সাত জন ছাত্রের নামে এফআইআরও করা হয়েছে। যা আজও প্রত্যাহার হয়নি। ছাত্রছাত্রীদের আরও দাবি, তাঁদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। যার সাম্প্রতিক উদাহরণ হিসেবে ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ উপস্থিতি না থাকায় একটি বিভাগে অধিকাংশই পরীক্ষা দিতে পারবেন না বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন। অথচ অভিযোগ, অধিকর্তার মদতে ছাত্রছাত্রীদের একাংশ পরীক্ষায় বসতে চলেছেন। এমন ঘটনার পরেই অনশনে বসার সিদ্ধান্ত নেন ছাত্রছাত্রীরা।
যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে এই হাসপাতালের অধিকর্তা এস কে নন্দা বলেন, ‘‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এই আন্দোলন করা হচ্ছে। ২০১২ সালে এই হাসপাতালের দায়িত্ব নেওয়ার পরে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে উপস্থিতি চালু করতেই বিরাগভাজন হয়েছি। প্যাথলজিতে নতুন যন্ত্র কেনা হয়েছে। হোস্টেল মেরামতির জন্যও টেন্ডার ডাকা হয়েছে। কিছুটা সময় লাগবেই।’’ তিনি আরও জানান, একটি লিফ্ট খারাপ থাকলেও অন্য লিফ্ট কাজ করছে। খারাপ লিফ্টটি সারানোর জন্য সংস্থার সঙ্গে কথা চলছে। বাকি পরিকাঠামোর সংস্কারে দরপত্র ডাকা হয়েছে। ধীরে ধীরে সংস্কার হবে।
তবে উপস্থিতির হার নিয়ে অধিকর্তার স্পষ্ট জবাব, ‘‘নিয়ম অনুসারে ৭৫ শতাংশ না থাকলে পরীক্ষার বসতে দেওয়া যায় না। একাধিকবার আন্দোলনের নামে আমাকে হেনস্থা করা হয়েছে। বাধ্য হয়ে পুলিশকে ডেকেছিলাম।’’