দুর্নীতির অভিযোগ, সরানোর সিদ্ধান্ত বিএমওএইচকে

অবশেষে বাগদা ব্লক হাসপাতাল থেকে বিএমওএইচ সূরজ সিংহকে সরানোর সিদ্ধান্ত নিল উত্তর ২৪ পরগনা জেলা স্বাস্থ্য দফতর। সূরজবাবুর বিরুদ্ধে বেআইনি কাজ কর্মে যুক্ত থাকার অনেক অভিযোগ রয়েছে বলে দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। অনেক দিন ধরেই ওই হাসপাতাল থেকে তাঁকে সরানোর দাবি তুলছিলেন এলাকার বাসিন্দারা।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৪ ০৩:২৩
Share:

সূরজ সিংহ।

অবশেষে বাগদা ব্লক হাসপাতাল থেকে বিএমওএইচ সূরজ সিংহকে সরানোর সিদ্ধান্ত নিল উত্তর ২৪ পরগনা জেলা স্বাস্থ্য দফতর।

Advertisement

সূরজবাবুর বিরুদ্ধে বেআইনি কাজ কর্মে যুক্ত থাকার অনেক অভিযোগ রয়েছে বলে দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। অনেক দিন ধরেই ওই হাসপাতাল থেকে তাঁকে সরানোর দাবি তুলছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয়কুমার আচার্য বলেন, ‘‘ওই বিএমওএইচ-এর বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগের তদন্ত আগে থেকেই চলছিল। ওঁকে বাগদা ব্লক গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’

বৃহস্পতিবার বাগদা হাসপাতালে বন্ধ্যাকরণের পরে নীলিমা সর্দার নামে এক আদিবাসী মহিলার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ করেন। রাস্তা অবরোধ করা হয়। একটি বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সও ভাঙচুর করা হয়। এর পরপরই শুক্রবারই সূরজবাবুকে হাসপাতাল থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যদিও জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ওই মহিলার মৃত্যুর ঘটনার সঙ্গে সূরজবাবুকে সরানোর কোনও সম্পর্ক নেই। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগটি এখনও তদন্তের পর্যায়ে রয়েছে।

Advertisement

তবে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, অতীতেও রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সূরজবাবুর বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠেছিল। বাগদা ব্লক তৃণমূল সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানান, ২০১১ সালে সাপের কামড়ে মৃত্যু হয় স্থানীয় খর্দ্দ কুলবেরিয়া এলাকার এক অষ্টম শ্রেণির ছাত্রের। সেই সময়ে সূরজবাবুর বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের কাছেই অভিযোগ জানিয়েছিলেন বাসিন্দারা। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। এছাড়াও বিভিন্ন বেআইনি কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগও উঠেছে ওই বিএমওএইচের বিরুদ্ধে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, প্রসূতিদের জন্য হাসপাতালে যে ‘মাতৃযান’টি রয়েছে, সেটি অন্য কাজে ভাড়া খাটাচ্ছেন সূরজবাবু। স্থানীয় বাসিন্দা দীনবন্ধু হীরা বলেন, ‘‘অন্য কাজে ‘মাতৃযান’ ভাড়া খাটাচ্ছেন উনি। অথচ সরকারি তহবিলে ওই গাড়িটির খরচের বিল করছেন। এ ভাবে মাতৃযানের জন্য বরাদ্দ সরকারি টাকা নয়ছয় করছেন সূরজবাবু।”

বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত ও পরিবহন কর্মাধক্ষ্য কার্তিক বাইনের অভিযোগ, হাসপাতালে সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স থাকা সত্ত্বেও বিএমওএইচ নিজের বাবার নামে থাকা একটি গাড়ি-সহ দু’টি গাড়ি অ্যাম্বুল্যান্স হিসেবে হাসপাতালে ভাড়া খাটাচ্ছেন। সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সে এখনও অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়নি। অথচ বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আরও অভিযোগ, বাগদা হাসপাতালে আর একটি গাড়ি যেটি হাসপাতালের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করার কথা, সেটি পড়ে রয়েছে। একটি বেসরকারি গাড়িকে ওই কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, যার বিল মেটানো হচ্ছে সরকারি তহবিল থেকে। অন্য দিকে, হাসপাতাল থেকে কম খরচে রোগীকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য যে সরকারি ভর্তুকিপ্রাপ্ত গাড়িটি রয়েছে, সেটি ফেলে রেখে বেসরকারি গাড়িকে দিয়ে ওই কাজ করিয়ে রোগীর আত্মীয় পরিজনদের তিনি বেশি টাকা দিতে বাধ্য করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

বাগদা ব্লকের প্রায় দেড় লক্ষ বাসিন্দা ওই গ্রামীণ হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল। তাঁদের বক্তব্য, হাসপাতালের পরিকাঠামো এমনিতেই বেহাল। মাত্র ত্রিশ শয্যা রয়েছে হাসপাতালে যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও খুব কম রয়েছেন। তার মধ্যে আবার সূরজবাবু বন্ধ্যাকরণ ছাড়া অন্য কোনও চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাজ করতেন না বলে অভিযোগ। স্থানীয় বিধায়ক উপেন বিশ্বাস রাজ্যের মন্ত্রী হওয়ার পরে কিছু উন্নতি হবে বলে আশা করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু উন্নতি তো দূরের কথা, সূরজবাবুর জন্য হাসপাতালের ন্যূনতম পরিষেবাটুকুও তলানিতে এসে ঠেকেছে বলে দাবি বাসিন্দাদের। এই সব বিষয় নিয়ে অনেক দিন ধরেই বিডিও, জেলাশাসক, জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক-সহ প্রশাসনের নানা স্তরে স্মারকলিপি দিচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবারের ঘটনার পরে নতুন করে বিডিও মালবিকা খাটুয়ার কাছে স্মারকলিপি দেন তাঁরা। এ দিন মালবিকাদেবী বলেন, ‘‘বিএমওএইচ-এর বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি-সহ অনেক গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। সব অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করা হবে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে সেই তদন্ত রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হবে।”

বৃহস্পতিবারের ঘটনার পর থেকে আর হাসপাতালে আসেননি সূরজবাবু। শুক্রবার ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘অভিযোগ নিয়ে যা বলার, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিরক বলবেন। ঘটনার সত্যি-মিথ্যে সবই তিনি জানেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement