জেই রুখতে কেন বিদেশি মশারি, প্রশ্ন বিস্মিত মমতার

দেশি মশা, বিদেশি দাওয়াই! জাপানি এনসেফ্যালাইটিস (জেই), ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া মোকাবিলায় স্বাস্থ্য দফতরের টোটকা ভিয়েতনামি মশারি। ইতিমধ্যেই এক লক্ষ মশারির বরাত দেওয়া হয়ে গিয়েছে। উত্তরবঙ্গের তিন জেলা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস। এ বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত এই রোগে মৃত্যু হয়েছে ৪৯ জনের। আক্রান্ত ২৮২ জন। প্রকোপ বেশি জলপাইগুড়ি জেলায়। তবে কোচবিহার ও দার্জিলিঙেও আক্রান্ত হয়েছেন কিছু মানুষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৪৬
Share:

দেশি মশা, বিদেশি দাওয়াই!

Advertisement

জাপানি এনসেফ্যালাইটিস (জেই), ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া মোকাবিলায় স্বাস্থ্য দফতরের টোটকা ভিয়েতনামি মশারি। ইতিমধ্যেই এক লক্ষ মশারির বরাত দেওয়া হয়ে গিয়েছে।

উত্তরবঙ্গের তিন জেলা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস। এ বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত এই রোগে মৃত্যু হয়েছে ৪৯ জনের। আক্রান্ত ২৮২ জন। প্রকোপ বেশি জলপাইগুড়ি জেলায়। তবে কোচবিহার ও দার্জিলিঙেও আক্রান্ত হয়েছেন কিছু মানুষ। এ নিয়ে জলঘোলা হয়েছে বিস্তর। চার জন চিকিৎসককে সাসপেন্ডও করে স্বাস্থ্য দফতর। তার পরে অবশ্য বেশ কিছু দিন শিরোনামে নেই জেই। তা ফের সামনে এল শুক্রবার টাউন হলে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক বৈঠকে। সরকারি সূত্রের খবর, এ দিন জেলাভিত্তিক পর্যালোচনা করছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক পৃথা সরকারের কাছে জেই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখন মশাবাহিত রোগ বাড়ছে। আগামী ক’মাসে আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সতর্ক থাকতে হবে।” মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য জানিয়ে দেন, অফিসারেরা যদি তাঁকে ঠিকঠাক ওয়াকিবহাল না-ও করেন, তা সত্ত্বেও তিনি সমস্ত খোঁজখবর রাখেন।

Advertisement

জলপাইগুড়ির জেলাশাসক জানান, জাপানি এনসেফ্যালাইটিস মোকাবিলায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য দফতর কিছু মশারি দেবে বলেছিল, তা এখনও পাওয়া যায়নি। এ কথা শুনেই স্বাস্থ্যসচিব মলয়কুমার দে-র কাছে মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, “পৃথা কেন এখনও মশারি পায়নি? কবে পাবে?” স্বাস্থ্যসচিব জানান, বরাত দেওয়া হয়ে গিয়েছে। পুজোর পরেই মশারি পৌঁছে যাবে। আসলে ভিয়েতনাম থেকে ওষুধ মাখানো মশারি আসছে, তাই দেরি হচ্ছে।

ভিয়েতনাম থেকে মশারি আনা হচ্ছে শুনে মুখ্যমন্ত্রী তো অবাক! বলেন, “কেন, এখানে মশারি পাওয়া যায় না? ৫০ টাকায় যখন সাধারণ আপেল পাওয়া যায়, তখন বেশি দাম দিয়ে ‘জামা পরা’ আপেল কেনার কী দরকার? স্থানীয় বাজার থেকে সস্তায় মশারি কিনুন।” কেন ভিয়েতনামের মশারি, এ বার ব্যাখ্যা দেন স্বাস্থ্যসচিব। মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি জানান, মশাবাহিত রোগ মোকাবিলায় ভিয়েতনামি মশারির কদর রয়েছে। ওই মশারিতে ওষুধ মাখানো থাকে বলে তাতে মশা বসতেই পারে না। ফলে এই মশারি টাঙানো হলে কোনও অবস্থাতেই মশার কামড় খাওয়ার সম্ভাবনা নেই। মুখ্যমন্ত্রী তখন বলেন, “তাতে কী হয়েছে? মশারি কিনে দিন। সঙ্গে একটা করে মশা তাড়ানোর ক্রিম দিয়ে দিন!” তত ক্ষণে আমলাদের মধ্যেও মশারি নিয়ে ফিসফাস শুরু হয়ে গিয়েছিল বড়বাজার থাকতে ভিয়েতনাম কেন? স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, পূর্ব এশিয়ার অন্য অনেক দেশের মতো ভিয়েতনামও মশাবাহিত রোগে জেরবার। এমনকী, ভিয়েতনামের মাটিতে মার্কিন সেনাদেরও নাকাল করে ছেড়েছিল মশা। মশাবাহিত রোগ মোকাবিলায় ভিয়েতনাম নিজেদের মতো করে বেশ কিছু বন্দোবস্ত করতে পেরেছে। ওষুধ লাগানো মশারি যার অন্যতম।

স্বাস্থ্য দফতরের জন্য ওই মশারি আমদানি করছে তন্তুজ। প্রথম দিকে তারা এক লক্ষ মশারির জন্য মোটা টাকা চেয়েছিল। স্বাস্থ্য দফতর তাতে রাজি হয়নি। শেষে প্রতিটি মশারির জন্য ৩৬৫ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। তন্তুজ ওই দরেই স্বাস্থ্য দফতরকে মশারি দেবে। এত দিন ঠিক ছিল, পুজোর পর জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিং জেলায় এক লক্ষ মশারি বিলি হবে। কিন্তু এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টিতে জোর দেওয়ায় কাজটা পুজোর আগেই সেরে ফেলতে চায় স্বাস্থ্য দফতর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement