এক প্রসূতির চিকিৎসায় গাফিলতির জেরে মৃত্যুর অভিযোগে তমলুক শহরের এক নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ ও এক চিকিৎসককে সব মিলিয়ে ১৮ লক্ষ টাকা জরিমানার আদেশ দিল ক্রেতা সুরক্ষা আদালত।
পূর্ব মেদিনীপুরের ক্রেতা সুরক্ষা আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, তমলুক শহরের শঙ্করআড়া এলাকার বাসিন্দা ঊষা চৌরাসিয়া নামে ওই গৃহবধূকে ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি এলাকারই এক নার্সিংহোমে জন্য ভর্তি করানো হয়েছিল। নার্সিংহোমের সঙ্গে যুক্ত এক চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাঁর নানা শারীরিক পরীক্ষাও হয়। পর দিন, ২৬ জানুয়ারি সকালে ওই প্রসূতির কন্যা সন্তান হয়। কিন্তু, বিকেল থেকেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে।
ওই বধূর স্বামী রাজু চৌরাসিয়ার অভিযোগ, স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি হলেও নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ তা জানাননি। বিকেলে অবস্থার চূড়ান্ত অবনতির পরে স্ত্রীকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু সে জন্য যে জীবনদায়ী চিকিৎসা পরিষেবার সুবিধা যুক্ত অ্যাম্বুল্যান্সের প্রয়োজন ছিল তা ওই নার্সিংহোমে ছিল না। পরে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী, টাকা জমা দেওয়ার পরে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ওই বিশেষ অ্যাম্বুল্যান্স আসার আগেই ঊষাদেবীর মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ।
স্ত্রীর মৃত্যুর জন্য নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ জানিয়ে জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে আবেদন করেন রাজু চৌরাসিয়া। জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে ওই আবেদনের ভিত্তিতে উভয় পক্ষকে ডেকে শুনানি হয়। এরপর চলতি বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বিচারক এসএস আলি ও আর দে ওই প্রসূতির চিকিৎসায় অবহেলার জন্য নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে দায়ী করেন। ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাঁদের ১৮ লক্ষ টাকা জরিমানার আদেশ দেন।
ক্রেতা সুরক্ষা আদালত সূত্রে খবর, জরিমানার তিন চতুর্থাংশ অর্থাৎ সাড়ে ১৩ লক্ষ টাকা ঊষাদেবীর শিশুকন্যার নামে স্থায়ী আমানত হিসেবে ব্যাঙ্কে গচ্ছিত রাখতে হবে। এই নির্দেশের কথা মেনে নিয়ে নার্সিংহোমের মালিক সুমিতা জানা বলেন, “আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলাম। তা সত্ত্বেও ওই প্রসূতির মৃত্যু হয়।” একই সঙ্গে তাঁর দাবি, তাঁদের তরফে কোনও ত্রুটি ছিল না। ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের ওই নির্দেশের বিরুদ্ধে তাঁরা ইতিমধ্যে উচ্চতর আদালতে আবেদন করেছেন বলেও জানান।