বর্জ্যের পাহাড়ের পাশ দিয়েই যাতায়াত।—নিজস্ব চিত্র
কোথায় ফেলা হবে বর্জ্য? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই বছর কাবার। না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, না পুরসভা— কেউই জায়গা চিহ্নিত করতে পারেননি। ফলে পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালের আবর্জনা জমছে হাসপাতালেই এক কোণে। আর সেই জমা আবর্জনার দুর্গন্ধে জীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছে রোগীর পরিজন থেকে স্বাস্থ্যকর্মীদের।
পাশেই জেলা পরিষদ ভবন। জেলা পরিষদ ওই আবর্জনা সাফ না করার জন্য দুষছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযোগের তির ছুঁড়েছে পুরসভার দিকে। কিন্তু পুরসভাও হাত তুলে দিয়েছে। ফলে এই দায়সারা মনোভাবেই আবর্জনার স্তূপ ক্রমেই বেড়ে চলেছে হাসপাতালের ভিতরেই। তবে জেলা প্রশাসন আবর্জনা ফেলার জায়গা চিহ্নিত করার আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু কবে সেই কাজ শুরু হবে, তার সুনির্দিষ্ট জবাব মেলেনি।
হাসপাতালের আয়ুবের্দিক ও ডায়েরিয়া বিভাগের ঠিক পিছনেই দীর্ঘদিন ধরে জমে রয়েছে এই বর্জ্যের পাহাড়। এর কাছাকাছি শিশুসাথী প্রকল্পে শিশুদের রোগনির্ণয় কেন্দ্র, যক্ষা বিভাগ ও আকুপাংচার বিভাগ রয়েছে। ওই বিভাগগুলির কর্মীদের বক্তব্য, দীর্ঘদিন ধরে এখানে বর্জ্য জমতে জমতে অবস্থা এমন জায়গায় দাঁড়িয়েছে যে দুর্গন্ধে থাকা যায় না। দিন কয়েক আগে বৃষ্টি হয়েছিল। তাতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছিল। তখন অফিসের ভিতরেও দরজা-জানলা এঁটেও বসে থাকা যাচ্ছিল না। সমস্যায় রয়েছেন হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা রোগী ও তাঁদের পরিজনেরাও। ওই স্তূপের পাশ দিয়েই তাঁদের অনেককে নাকে রুমাল এঁটে যাতায়াত করচে হয়। যেখানে বর্জ্য জমছে, সেই দেওয়ালের পাশেই জেলা পরিষদ ভবনের প্রেক্ষাগৃহ। বেশ কয়েক মাস আগে এই প্রেক্ষাগৃহেই প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুর্গন্ধ যাতে পাঁচিল ‘টপকে’ ওই প্রেক্ষাগৃহ পর্যন্ত পৌঁছতে না পারে সে জন্য সুগন্ধি ফিনাইল ছড়ানো হয় গোটা এলাকায়।
রাখঢাক না করে তাই জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায় এই বর্জ্য না সরানো নিয়ে হাসপাতাল সুপারের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন। জেলা রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে এবং জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য বিভাগের স্থায়ী সমিতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেও কেন এই বর্জ্য সাফ করা হচ্ছে না, তা নিয়ে তিনি উষ্মা প্রকাশ করেছেন। এই ঘটনায় কার তরফে গাফিলতি রয়েছে তা খতিয়ে দেখতে জেলাশাসককে চিঠিও লিছেছেন তিনি। উত্তমবাবু বলেন, “বছরেরও বেশি ভাগ সময় ধরে এই আবর্জনা জমে থাকছে। রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে মাস চারেক আগেই সিদ্ধান্ত হয় এই বর্জ্য অবিলম্বে সরানো হবে। কিন্তু তা সরানো হয়নি। সুপার তাহলে কী করছেন?”
হাসপাতাল সুপার নীলাঞ্জনা সেন বলেন, “ওই বর্জ্য কোথায় ফেলা হবে তা এখনও চিহ্নিত হয়নি। পুরসভাকে সমস্যার কথা জানিয়েছি। কিন্তু পুরসভাও আমাদের কোনও জায়গা দেখাতে পারেনি।” তিনি জানান, আগে হাসপাতালের বর্জ্য শহরের উপকন্ঠে বোঙাবাড়ি এলাকায় ফেলা হতো। সম্প্রতি ওই এলাকার বাসিন্দারা এই বর্জ্য সেখানে ফেলতে আপত্তি জানিয়েছেন। ফলে আবর্জনা হাসপাতালেই জমছে। কেন বিকল্প জায়গা দেখাতে পারেনি পুরসভা?
পুরুলিয়ার পুরপ্রধান তারকেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা দু-তিনটি জায়গার সন্ধান করেছি। কিন্তু যখনই মানুষ শুনছেন যে হাসপাতালের আবর্জনা ফেলা হবে, তখনই তাঁরা আপত্তি জানিয়েছেন। মাটি খুঁড়ে গর্তে আবর্জনা ফেলার কথাও ভাবা হয়েছিল। কিন্তু তাও বাতিল করতে হয়েছে।’’ তিনি জানান, একবার মাটি খুঁড়ে এ রকম বর্জ্য ফেলা হয়েছিল। সেই এলাকার মানুষজনের প্রবল আপত্তিতে মাটি খুঁড়ে তা আবার তুলে অন্য জায়গায় ফেলতে হয়েছে। কোথায় ফেলা যাবে পুরসভা তা দেখছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
তবে আশার কথা শুনিয়েছেন জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “আবর্জনা ফেলার জায়গা খোঁজা নিয়ে সমস্যা ছিল। তবে আমরা প্রাথমিক ভাবে একটা জায়গা ঠিক করেছি। পরে সেখানে আবর্জনা নষ্ট করার জন্য মেশিনও বসানো হবে। আশাকরছি দ্রুত হাসপাতালের জমা আবর্জনা সেই জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।”