আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়া রোগীকে বা দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হওয়া কোনও ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য কোথায় নিয়ে যাওয়া যায়, কোথায়ই বা পাওয়া যাবে অ্যাম্বুল্যান্স এ সব নিয়ে ভাবতে ভাবতেই পার হয়ে যায় ‘গোল্ডেন আওয়ার’। চিকিৎসকদের মতে, দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম বা আচমকা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া কোনও ব্যক্তির জন্য পরবর্তী এক ঘণ্টা বা ‘গোল্ডেন আওয়ার’ সবচেয়ে প্রয়োজনীয়। সেই সময়ের মধ্যে চিকিৎসা পাওয়াটা তাঁর জীবন বাঁচানোর জন্য খুবই উল্লেখযোগ্য।
ওই মূল্যবান সময় বাঁচিয়ে দ্রুত নাগরিকদের চিকিৎসার দোরগোড়ায় হাজির করতে আমেরিকায় আছে নাইন-ওয়ান-ওয়ান পরিষেবা, ইওরোপে আছে ওয়ান-ওয়ান-টু। এ বার আম কলকাতাবাসীকে সেই ধাঁচে চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দিতে চার জন প্রবাসী বাঙালি মিলে তৈরি করেছেন একটি সংস্থা ‘মিশন আরোগ্য’। আমেরিকার রকফেলার ফাউন্ডেশনের অর্থসাহায্যে ওই সংস্থা তৈরি করেছে ‘কলকাতা মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি সিস্টেম’ (কেএমইএস)। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে যে কোনও অবস্থায় যে কেউ ফোন করে, এসএমএসে বা ইন্টারনেটে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সাহায্য পেতে পারবেন। যে পরিষেবা যাত্রা শুরু করল বুধবার। তবে এ দিন চালু হয়েছে শুধুমাত্র ইন্টারনেটের মাধ্যমে জরুরি চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য মেলার ব্যবস্থা। এসএমএস এবং টেলিফোনে এই সাহায্য দেওয়ার ব্যবস্থা দ্রুত শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ‘মিশন আরোগ্য’র অন্যতম প্রধান রাজীব সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, “কলকাতা শহরে অ্যাম্বুল্যান্স, হাসপাতাল, ব্লাড ব্যাঙ্ক সব কিছুই রয়েছে। এই শহরে নতুন কোনও ইমার্জেন্সি ব্যবস্থা চালু করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমরা সেগুলি সম্পর্কে তথ্য সুসংহত ভাবে, দ্রুততার সঙ্গে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাইছি। যাতে রোগীর পরিজনেরা দ্রুত তাঁকে ঠিক জায়গায়, ঠিক সময়ে নিয়ে গিয়ে যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেন।”
রাজীব ছাড়াও বাকি যে তিন প্রবাসী বাঙালি এই প্রকল্পে যুক্ত, তাঁরা হলেন তন্ময় মহাপাত্র, রীতা ভট্টাচার্য এবং সঞ্চিতা মহাপাত্র। রাজীববাবু জানান, ইতিমধ্যেই কলকাতার ১৫টি বেসরকারি হাসপাতাল তাঁদের তৈরি করা এই তথ্যভাণ্ডারের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করেছে। বাকি হাসপাতালগুলির সঙ্গেও তাঁদের কথাবার্তা চলছে। খুব শীঘ্রই আরও বেসরকারি হাসপাতাল এই পরিষেবার আওতায় আসবে বলে আশাবাদী তন্ময়, রাজীবেরা। তন্ময়ের মতে, “শুধু রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াই নয়, সঠিক জায়গায় তাঁর সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করাটা খুুবই প্রয়োজনীয়। সেটা মাথায় রেখেই আমাদের তথ্যভাণ্ডার তৈরি হয়েছে।”
এ দিন ‘কলকাতা মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি সিস্টেম’-এর ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন কলকাতায় মার্কিন কনসাল জেনারেল হেলেন ল্যাফাভ। ছিলেন রকফেলার ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ডিরেক্টর কেরি ব্রুসও। এই ওয়েবসাইটে (www.kmes.in) গিয়ে দুর্ঘটনাস্থল বা রোগীর বাড়ির ঠিকানা ও পিন কোড দিলেই পাওয়া যাবে কাছাকাছি হাসপাতাল, সেখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থা, বেডের সর্বশেষ পরিস্থিতি এবং আ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবার বিশদ তথ্য। পরে হেলেন বলেন, “কলকাতায় এ ধরনের পরিষেবা নেই শুনে আমি অবাক হয়েছিলাম। কলকাতার মতো শহরে এ ধরনের পরিষেবা চালুর ক্ষেত্রে অল্প হলেও আমেরিকার অবদান রয়েছে, এতে আমি গর্বিত। আশা করি, ভবিষ্যতে এই পরিষেবার অনেক সাফল্যের কাহিনি আমরা শুনতে পাব।”
রকফেলার ফাউন্ডেশনের শতবর্ষে ৮টি সংস্থাকে উন্নয়নমূলক কাজকর্মে অর্থসাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সারা পৃথিবীতে মোট দু’হাজার সংস্থা ওই সাহায্য পাওয়ার জন্য আবেদন জানায়। শেষ পর্যন্ত আটটি সংস্থাকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেয় রকফেলার ফাউন্ডেশন। সেই তালিকাতেই জায়গা করে নেয় ‘মিশন আরোগ্য’।
কেএমইএস ছাড়াও দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবা উন্নয়নের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ওই সংস্থা। এর মধ্যে গ্রামীণ এলাকায় জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন, কন্যা ভ্রূণ হত্যার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক কাজের সঙ্গে ‘মিশন আরোগ্য’ যুক্ত বলে জানিয়েছেন ওই সংস্থার সদস্যেরা।