উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে এমসিআই

অবরোধের গেরো বাড়াল পরিদর্শন-শঙ্কা

এ যেন মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘা। একে পরিদর্শনের জেরে এমসিআইয়ের কোপে পড়ার আশঙ্কা। সে দিনই রেল অবরোধের জেরে পরিদর্শনের জন্য আসা চিকিৎসকদের আটকে যাওয়া। সোমবার এমসিআই পরিদর্শনের দিন রেল অবরোধের জেরে এমনই বিপাকে পড়লেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। এমসিআই দল আসছে খবর পৌঁছতেই সোমবার সকাল থেকে তোড়জোড় শুরু হয়ে যায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে। ক্যাম্পাসে ইতস্তত ছড়ানো আবর্জনা জড়ো করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৫
Share:

আগুন দিয়ে মেডিক্যাল কলেজ চত্বরের জঞ্জাল পোড়ানো হচ্ছে। সোমবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

এ যেন মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘা। একে পরিদর্শনের জেরে এমসিআইয়ের কোপে পড়ার আশঙ্কা। সে দিনই রেল অবরোধের জেরে পরিদর্শনের জন্য আসা চিকিৎসকদের আটকে যাওয়া। সোমবার এমসিআই পরিদর্শনের দিন রেল অবরোধের জেরে এমনই বিপাকে পড়লেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

এমসিআই দল আসছে খবর পৌঁছতেই সোমবার সকাল থেকে তোড়জোড় শুরু হয়ে যায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে। ক্যাম্পাসে ইতস্তত ছড়ানো আবর্জনা জড়ো করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তার জেরে অবশ্য ওয়ার্ডে ধোঁয়া ঢুকে কিছুটা সমস্যা হয় রোগীদের। প্রসূতি বিভাগের ধারেকাছে থাকা কয়েকটি গুমটি দোকানকে চোখের আড়ালে ব্লাড ব্যাঙ্কের পিছনের ফাঁকা জায়গায় সরিয়ে দেওয়া হয়। তবে তাতেও বিপদ কাটেনি। এ দিন এমসিআই প্রতিনিধি দল এসে পৌঁছলেও অন্তত ৩০ জন চিকিৎসক-অধ্যাপক সময়ে পৌঁছতে পারেননি। তাঁরা তখন অবরোধের জেরে আটকে পড়া কলকাতা থেকে নিউ জলপাইগুড়িগামী দার্জিলিং মেল, পদাতিক এক্সপ্রেসে বসে। কখন অবরোধ উঠবে কখন তাঁরা পৌঁছবেন তা অনিশ্চিত। তাতেই মাথায় হাত পড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

বেলা ১১টা নাগাদ তিন সদস্যের এমসিআই প্রতিনিধি দল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ঢোকেন। তাতে দেখা যায় অন্তত ৩০ জন চিকিৎসক-অধ্যাপক নেই। ভোর থেকে কুমারগঞ্জ স্টেশনে রেল অবরোধের জেরে ওই চিকিৎসকরা যে আটকে পড়েছে সেই কথা বোঝাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। প্রথমে অবশ্য এমসিআই প্রতিনিধিরা তাদের নিয়ম মেনে গ্রাহ্য করতে চাননি। তাতে ১৫০ আসনের অনুমোদন আটকে যেতে পারে বুঝতে পেরে ফের বোঝানোর চেষ্টা হয়। তাতে কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস পড়ে।

Advertisement

তার মধ্যে আরও যে কয়েকজন চিকিৎসক-অধ্যাপক তখনও পৌঁছননি তাদের বিষয়টি মেটানোর চেষ্টা চলছে। এক চিকিৎসক শ্যামা প্রসাদ সাহাকে আদালতে শুনানির জন্য যেতে হয়েছিল। তাঁকে তড়িঘড়ি আসতে বলা হয়। প্যাথোলজি বিভাগের প্রধান অমিতা গিরি’র আত্মীয় বিয়োগে তিনি বাড়িতে রয়েছেন। সে ব্যাপারে সুপারের মোবাইল ফোনে পাঠানো অমিতাদেবীর এসএমএস এমসিআই প্রতিনিধিদের দেখিয়ে বিষয়টি বিবেচনার কথা জানানো হয়। বেলা ৩টে দার্জিলিং মেল রাঙাপানি স্টেশনে পৌঁছতে সেখানেই নেমে পড়েন চিকিৎসক-অধ্যাপকরা।

হাসপাতাল চিকিৎসকদের একাংশ বিশেষ করে কলকাতার বাসিন্দা এমন চিকিৎসকরা সপ্তাহান্তে শিলিগুড়িতে থাকেন না। বারবার বলার পরেও চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ অনুপস্থিতি যে চলছেই তা এ দিনের ঘটনাতেই স্পষ্ট। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ সমীর ঘোষ রায় বলেন, “কিছু চিকিৎসক অধ্যাপক কলকাতা থেকে ফিরছেন। তাঁরা অবরোধের জেরে আটকে পড়েছেন। তা এমসিআই প্রতিনিধি দলকে জানানো হয়েছে। সুপার প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য সুরক্ষা যোজনার বৈঠকে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। তবে বৈঠকের দিন পিছিয়ে যাওয়ায় তিনি এ দিন ফিরছিলেন।”

যে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল এ দিন পরিদর্শনে আসেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কানপুর মেডিক্যাল কলেজের বিজয় শঙ্কর তেওয়ারি, পটনা মেডিক্যাল কলেজের রশ্মি সিংহ এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মেডিক্যাল কলেজের এস শ্রিবানী।

এ দিন প্যাথলজির বহির্বিভাগ, প্রসূতি বিভাগ, শিশু বিভাগ, মেডিক্যাল কলেজের আঞ্চলিক ব্লাড ব্যাঙ্ক-সহ বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখেন প্রতিনিধিরা। বিজয়বাবু বলেন, “এই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ৫০ আসন থেকে প্রথমে ১০০ আসনে এবং পরবর্তীতে ১৫০ আসনের ভর্তির অনুমোদন দেওয়া হয়। সেই মতো পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে কি না, চিকিৎসক, অধ্যাপক পর্যাপ্ত রয়েছে কি না সবই দেখা হচ্ছে।”

এর আগেই এমসিআই পরিদর্শন করে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ১৫০ আসনের অনুমোদনের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত চিকিৎসক-অধ্যাপক না থাকা, ছাত্রছাত্রী অনুপাতে লেকচার থিয়েটার, ল্যাবরেটরি, হস্টেলের পরিকাঠামো যথাযথ না থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। আগের পরিদর্শনের সময় দেখা যায় অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর রয়েছে ১৬২ জন। সিনিয়র রেসিডেন্ট, প্রোস্ট গ্র্যাজুয়েট বা একই বিষয়ে ৫ বছরের বেশি গবেষণা করছেন এবং জুনিয়র চিকিৎসগ রয়েছেন ১০১ জন। প্রফেসর রয়েছেন ২৭ জন। তা ১০০ আসনের ক্ষেত্রে যথাযথ হলেও ১৫০ আসনের অনুমোদনের ক্ষেত্রে অন্তত ২৫ শতাংশ কম। তবে সে বছর মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকা, সেমিনার বা পরীক্ষার কাজে বাইরে থাকা, আত্মীয়ের মৃত্যুর কারণে অনুপস্থিত থাকা চিকিৎসক-অধ্যাপকদের ধরা হয়নি। এ বার সেগুলি ধরা হবে বলে জানা গিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement