অপুষ্টিতে ভুগছে, এমন শিশুদের পুষ্টিকর খাবার দিতে পূর্ব মেদিনীপুরের ১৭০টি শিশুর পরিবারকে ‘ফুড কুপন’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল জেলা প্রশাসন। জেলা খাদ্য দফতর থেকে পাওয়া কুপন দেখিয়ে ওই সব শিশুর পরিবার প্রতি মাসে রেশন দোকান থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্য সামগ্রী তুলতে পারবে।
জেলাশাসক অন্তরা আচার্য জানান, সঠিক পরিচর্যার অভাব-সহ নানা কারণে জেলার যে সব শিশু অপুষ্টির শিকার হয়েছে, তাঁদের চিহ্নিত করে স্বাস্থ্য পরীক্ষা-সহ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এদের মধ্যে কিছু কম ওজনের শিশুকে মুগবেড়িয়ায় নিউট্রিশন রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে বিশেষ নজরে রাখা হয়েছিল। এমনই ১৭০ শিশুকে পুষ্টিকর খাবার দিতে ‘ফুড কুপন’ এর মাধ্যমে বিনামূল্যে খাদ্য সামগ্রী দেওয়া হবে। আগামী ১৬ অক্টোবর কাঁথির মুগবেড়িয়ায় ‘নিউট্রিশন রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার’-এ ওই কুপন বিলি করা হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর।
কী মিলবে ওই কুপন থেকে?
খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ফুড কুপন দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার রেশন দোকান থেকে প্রতি মাসে পাঁচ কিলোগ্রাম চাল, আড়াই কিলোগ্রাম গম, এক কিলোগ্রাম মুসুর ডাল, এক কিলোগ্রাম ছোলা ও একটি ৫০০ গ্রাম পুষ্টিকর খাবারের প্যাকেট মিলবে। জেলা খাদ্য নিয়ামক রণজিৎ গোস্বামী জানান, জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের মাধ্যমে নির্ধারিত জেলার ১৭০টি শিশুর প্রত্যেকের নামে ওই কুপন দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ৬ মাস ওই ফুড কুপন দেওয়া হবে।
প্রশাসন ও খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর খানেক আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী জেলার বিভিন্ন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে বয়সের তুলনায় কম ওজনের শিশুদের চিহ্নিত করা শুরু হয়। এ ভাবে ছ’বছর বয়স পর্যন্ত প্রায় ৩,৮২১ জন কম ওজনের শিশুকে চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে তমলুক ব্লকেই ২৪২ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। কেন অপুষ্টি, কারণ বিশ্লেষণে দেখা যায় এই সব শিশুদের পরিবার অধিকাংশই ক্ষেত্রেই আর্থিক ভাবে পিছিয়ে। তাই তাঁরা তেমন ভাবে পুষ্টিকর খাবার দিতে পারছেন না। অথবা, শিশুরা বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত হলেও তাঁদের ঠিক মতো চিকিৎসা করা হচ্ছে না।
এই সব কম ওজনের শিশুদের শারীরিক কী কী অসুবিধা রয়েছে, তা জানতে ও ওজন বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে চিকিৎসা ও পুষ্টিকর খাবার দিতে উদ্যোগী হয় জেলা প্রশাসন। এমন শিশুদের চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে শিবির করে ফের কিছু পরীক্ষা ও পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়েছিল। প্রশাসনের দাবি, এই উদ্যোগে সচেতনতার ফেরার পাশাপাশি কিছু শিশুর ওজনও বেড়েছিল।
তীব্র অপুষ্টির শিকার, এমন ১৭০ শিশু-সহ তাদের মাকে কাঁথির মুগবেড়িয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্র সংলগ্ন স্বাস্থ্য দফতরের ‘নিউট্রিশন রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার’-এ গত কয়েক মাস বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল। সেখানে সকলকে বিশেষ ভাবে প্রস্তুত পুষ্টিকর খাবার (থেরাপিক ডায়েট) দেওয়া হয়। পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবারও দেওয়া হয়। সেই যোগান অব্যাহত রাখতে ফুড কুপন দেওয়ার ভাবনা বলে প্রশাসন জানিয়েছে।