উচ্চ রক্তচাপের কারণ দেখিয়ে এক প্রসূতিকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ‘রেফার’ করে দিয়েছিলেন কোচবিহার জেলা হাসপাতালের এক চিকিত্সক। কিন্তু, নিয়ে যাওয়ার সময়ে এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনেই সন্তান প্রসব করেন তিনি।
শনিবার দুপুর ১’টা নাগাদ এই ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় কোচবিহার এমজেএন হাসপাতালে। অভিযোগ, সেই সময় জরুরি বিভাগে চিকিত্সক এবং নার্স থাকা সত্ত্বেও তাঁদের কেউই ওই প্রসূতির চিত্কার শুনে এগিয়ে যাননি। এরই প্রতিবাদে হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ দেখান তাঁর পরিজনরা।
হাসপাতালের সুপার জয়দেব বর্মন জানান, ওই প্রসূতির উচ্চ রক্তচাপ ছিল বলে জানিয়েছেন চিকিত্সক দীপঙ্কর দত্ত। এই অবস্থায় প্রসব করানোর ক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকে। দুদিন আগে এমন এক রোগিণীর মৃত্যু হয়েছে। সে জন্যই সব ভেবে তাঁকে রেফার করে দেওয়া হয় বলে সুপারের দাবি। তিনি বলেন, “আরও ভাল চিকিত্সার জন্য রেফার করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁকে নিয়ে যেতে পাঁচ ঘন্টা দেরি করেছে তাঁর বাড়ির লোকজন। হাসপাতাল থেকে বের করার সময় জরুরি বিভাগের সামনে ওই ঘটনা ঘটে। সেই সময় জরুরি বিভাগ থেকে কেউ এগিয়ে যাননি বলে অভিযোগ পেয়েছি। এটা যদি হয়ে থাকে ঠিক হয়নি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” বর্তমানে ওই প্রসূতি হাসপাতালেই ভর্তি রয়েছেন। চিকিত্সক দীপঙ্করবাবু অবশ্য বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চাননি। তিনি বলেন, “সুপারকে সব জানিয়েছি।”
হাসপাতাল সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাতে কোচবিহারের পানিশালা এলাকার বাসিন্দা নার্গিস বিবিকে (২০) হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সে সময় তাঁর প্রসব বেদনা ছিল। শুক্রবার সকালে চিকিত্সক দীপঙ্করবাবু তাঁকে দেখেন। তাঁর উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে বলে জানিয়ে সকাল আট’টা নাগাদ তাঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে রেফার করে দেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, রেফার করার পাঁচ ঘণ্টা পড়ে রোগিণীকে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করে তাঁর পরিজনরা। এই অবস্থায় জরুরি বিভাগ থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলার সময় সেখানেই সন্তান প্রসব করেন ওই তরুণী। নার্গিসের মা রেজিয়া বিবির অভিযোগ, “জরুরি বিভাগে গিয়ে চিকিত্সক-নার্সকে বার বার আর্জি জানালেও কেউ একবারের জন্যও দেখতে আসেননি। প্রসব হওয়ার পড়ে তাঁকে ফের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।”বর্তমানে মা ও শিশু দু’জনেই সুস্থ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে,এই ঘটনার তদন্ত করে অভিযুক্ত চিকিত্সক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে বিজেপি। বিজেপির কোচবিহার জেলার সাধারণ সম্পাদক নিখিল রঞ্জন দে বলেন, “নার্সিংহোমের সঙ্গে কিছু চিকিত্সকের যোগসাজশ রয়েছে বলেই রেফার করার রেওয়াজ। হাসপাতালের চিকিত্সক ও নাসর্রা দায়িত্ব পালনে পুরোপুরি ব্যর্থ।”