বাজ পড়ে মারা গিয়েছিলেন দু’জন। গুরুতর আহত আর এক জন। ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসার পরে আহতকে ‘রেফার’ করা হয়েছিল পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে। অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও অনুপস্থিত ছিলেন চালক। কেন চালককে পাওয়া যাবে না, এই অভিযোগ তুলে হাসপাতালে ভাঙচুর চালাল উত্তেজিত জনতা। ভাঙচুর হল অ্যাম্বুলেন্সও। পরিস্থিতি সামলাতে এসে জনতার ছোড়া পাথরের আঘাতে আহত হলেন যুগ্ম-বিডিও। অল্পবিস্তর জখম হয়েছেন কিছু পুলিশকর্মী।
মঙ্গলবার বিকালে ঘটনাটি ঘটেছে পুরুলিয়ার পাড়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে। শেষ পর্যন্ত লাঠি চালিয়ে পুলিশ পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। সন্ধ্যার দিকে বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান রঘুনাথপুরের এসডিপিও পিনাকী দত্ত। লাঠি চালানোর কথা অবশ্য পুলিশ অস্বীকার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতেরা হলেন পাড়া থানারই হরিহরপুর গ্রামের বাসিন্দা শেখ লালা (২৫) ও আমির কাজি (৩০)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দুপুরের দিকে পাড়া থানার বরনডাঙ্গা গ্রামে বাজ পড়েছিল। সেই সময় ওই গ্রামে বাড়ি নির্মাণের কাজ করছিলেন লালা, আমির এবং হরিহরপুরেরই বাসিন্দা শেখ নাজিম। বাজ পড়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় প্রথম দু’জনের। গুরুতর জখম হন নাজিম। ঘটনার পরে তিন জনকেই নিয়ে আসা হয় পাড়া ব্লক স্বাস্থ্যেকেন্দ্রে। দু’জনকে মৃত বলে জানান চিকিৎসকরা। তাঁদের দাবি, ওই তিন জনকে যাঁরা হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন, তাঁদের দাবি ছিল, আহত ব্যক্তি-সহ তিন জনকেই পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে পাঠাতে হবে। কিন্তু, তাতে অসম্মতি জানিয়ে চিকিৎসকেরা আহত শেখ নাজিমকেই ‘রেফার’ করেন সদর হাসপাতালে। হাসপাতালের সামনে অ্যাম্বুলেন্সের চালককে না পাওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে উপস্থিত লোকজন। পাশপাশি মৃতদেহগুলির ময়নাতদন্ত করানো চলবে না বলে দাবি করে দেহগুলি নিয়ে গ্রামে চলে যান মৃতের পরিবারের সদস্যেরা।
পুলিশের দাবি, কেন চালক থাকবেন না, এই প্রশ্ন তুলে হঠাৎই একদল লোক অ্যাম্বুলেন্সটিতে ভাঙচুর চালায়। ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও ভাঙচুর চলে। এলাকাবাসীদের একাংশের আবার পাল্টা অভিযোগ, “হাসপাতালে নিয়ে আসার সময়েও দু’জন বেঁচেছিলেন। সময়মতো পুরুলিয়া নিয়ে যাওয়া গেলে তাদের বাঁচানো যেত।” যদিও এই অভিযোগ ঠিক নয় বলে পাল্টা দাবি করেছেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকেরা। ভাঙচুরের খবর পেয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান পাড়া থানার ওসি। অন্য দিকে, হরিহরপুর গ্রাম থেকে আরও লোকজন জড়ো হয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে উদ্যোগী হয় পুলিশ। খবর দেওয়া হয়েছিল ব্লক প্রশাসনকে।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে চলে আসেন পাড়ার যুগ্ম-বিডিও দেবাশিস বর্মন। পুলিশের দাবি, সেই সময়ে হঠাৎই তাদের উপরে পাথর ছুড়তে শুরু করে জনতা। তাতেই জখম হন যুগ্মবিডিও এবং কিছু পুলিশকর্মী। আহত দেবাশিসবাবুর প্রাথমিক চিকিৎসা হয়েছে পাড়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই। সন্ধ্যায় আহত শেখ নাজিমকে পুরুলিয়ায় পাঠানো হয়। ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এসডিপিও।
পাড়ার বিডিও সমীরণ বারিক জানান, পুলিশের তরফে ঘটনার খবর তাঁকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, তিনি একটি বৈঠকে ব্যস্ত থাকায় যুগ্মবিডিওকে পাঠান। বিডিও বলেন, “বাজ পড়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছিল। ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আহতের প্রাথমিক চিকিৎসা করার পরেই তাঁকে পুরুলিয়ায় রেফার করেছিলেন চিকিৎসকেরা। নির্দিষ্ট কোনও কারণ ছাড়াই কিছু লোকজন ভাঙচুর চালিয়েছে।”