হৃদ্রোগ এবং হার্টের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সঙ্গেই সরাসরি যুক্ত মানসিক স্বাস্থ্য। ছবি: শাটারস্টক
হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু। দিন দিন যেন বেড়েই চলেছে সমস্যা। অতিমারিতে এই সময়ে প্রায় সকলেরই কানে এসেছে এমন ঘটনা। কখনও কোনও তারকা, তো কখনও অতি পরিচিত কেউ। তার মধ্যেই উঠছে বাড়তে থাকা মানসিক চাপের প্রসঙ্গ। করোনার কবলে থাকা সময়ে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে ঘরে ঘরে। তার থেকে হৃদ্যন্ত্রের সঙ্কটও বেড়েছে বলে মত দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
হৃদ্রোগ এবং হার্টের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সঙ্গেই সরাসরি যুক্ত মানসিক স্বাস্থ্য। এমনই বলা হয়েছে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের একটি গবেষণাপত্রে। কিন্তু কী ভাবে মনের অবস্থা হৃদ্যন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে?
প্রতীকী ছবি।
মানসিক চাপ বাড়লে শরীরে অ্যাড্রিনালিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে। তার প্রভাবে বাড়তে থাকে রক্তচাপ। রক্তচাপ অতিরিক্ত বেড়ে গেলে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। যাদের মনের উপর চাপ অতিরিক্ত হয়ে যায়, তাঁরা কখনওই স্বস্তি পান না। ফলে শরীরে অ্যাড্রিনালিনের মাত্রা সর্ব ক্ষণই বেশি থাকে। তাতেই ক্ষতি হয় হৃদ্যন্ত্রের। এরই পাশাপাশি বাড়ে কর্টিসল হরমোনের ক্ষরণও।
মনোরোগ চিকিৎসক সঞ্জয় গর্গ জানাচ্ছেন, অতিরিক্ত মাত্রায় কর্টিসলের ক্ষরণ বাড়ায় রক্ত কোলেস্টেরল এবং শর্করার মাত্রা। তা-ও আবার ক্ষতি করে হৃদ্যন্ত্রের। মানসিক চাপের কারণে প্রদাহও হয়। তাও প্রভাব ফেলে হৃদ্যন্ত্রের স্বাস্থ্যের উপর।
তবে কি মানসিক চাপ কমলে কমতে পারে হৃদ্রোগের আশঙ্কাও?
মানসিক চাপের প্রভাব এক-এক জনের শরীরে এক-এক রকম। অনেকেই অতিরিক্ত চাপের মধ্যেও শান্ত থাকতে পারেন। তাঁদের শরীরে কম প্রভাব ফেলে মানসিক পরিস্থিতি। কিন্তু অধিকাংশেই তা পারেন না। মনে চাপ বাড়লে হৃদ্যন্ত্রে যথেষ্ট অক্সিজেন পৌঁছয় না। রক্ত চলাচলও স্বাভাবিক থাকে না। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে থাকলে এই সমস্যা কিছুটা কমতে পারে।
কী ভাবে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে?
সমীক্ষা বলছে, মানসিক রোগ প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে অতিমারির সময়ে। আমেরিকায় দুর্ঘটনা ছাড়া যে সব মৃত্যু ঘটছে, তার ৮০ শতাংশের কারণ মানসিক চাপ। এই অবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া জরুরি। কিন্তু চাইলেই যে মনের উপর থেকে সব চাপ সরিয়ে ফেলা যাবে, তেমন তো নয়। আগে বুঝতে হবে কোন কোন কাজ মানসিক চাপ বাড়াচ্ছে। চিকিৎসকরা দেখেছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জীবনযাপনের ধরন অনেকটা প্রভাব ফেলে মনের স্বাস্থ্যের উপরও। ফলে সঞ্জয় পরামর্শ দিচ্ছেন, দৈনন্দিন জীবন সবের আগে একটি নিয়মে বেঁধে ফেলা জরুরি। তিনি বলেন, ‘‘অতিমারির এই সময়ে কারও কাজ, খাওয়া, ঘুমের সময়ের ঠিক নেই। বছরের পর বছর এমন ভাবে চলবে না।’’ এর পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ, রোজ কিছুটা সময় একেবারে নিজের জন্য বার করতে হবে। সংসারের কাজ, অফিসের দায়িত্ব, স্বজনের প্রতি কর্তব্য পালন করেও হাতে কিছুটা সময় একেবারে নিজের জন্য রাখা দরকার। তখন কিছু পছন্দের কাজ করতে হবে। তা বই পড়া, গান গাওয়াই হোক, বা অন্য কিছু। নতুন কিছু শেখার ইচ্ছা থাকলে তা-ও করা যেতে পারে এই সময়ে। এ ছাড়া, খাওয়াদাওয়ায় নজর দেওয়া জরুরি। পুষ্টিকর খাবার মনের সমস্যাও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম। সঙ্গে হৃদ্যন্ত্রেরও যত্ন নেবে। নিয়ম করে ৮ ঘণ্টা ঘুম হল অতি প্রয়োজনীয়।