মনখারাপের দোসর যেন বাড়তি ওজন! অবসাদ থেকে মানুষটা গুটিয়ে যায় নিজের ভিতরে। তার সঙ্গে জুড়তে থাকে ‘মাঞ্চিং’। মন ভাল লাগছে না বলে টুকটাক খাবার খেয়ে মন ভাল রাখার চেষ্টা করেন অনেকে। ফুচকা, রোল, চকলেট, আইসক্রিমের মতো খাবার আছে সেই তালিকায়। অনেকে আবার নেশাসক্ত হয়ে পড়েন। আর এই সবের পরিণতিই হল ওজন ও মেদবৃদ্ধি। অবসাদগ্রস্ত অবস্থায় ওজন বাড়তে থাকার সমস্যা প্রভাব ফেলে দু’ভাবে। যেমন ধরুন, ওজন বেড়ে যাওয়ায় পুরনো জামাকাপড় ফিট করে না। আয়নায় নিজেকে দেখতেও ভাল লাগে না। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে মনে। আর ওজন বৃদ্ধিতে শরীরে ক্লান্তি আসে, ফলে অবসাদ ঘিরে ধরে। ওজন আর অবসাদ বেড়ে চলে চক্রাকারে। এই চক্রটা ভেঙে দেওয়া গেলে রোগীকে মানসিক ও শারীরিক, দু’দিক দিয়েই সুস্থ করে তোলা সহজ হয়।
শুরু করবেন কী ভাবে?
দীর্ঘ দিন অবসাদ থেকে শরীর-মনে ক্লান্তি আসতে দেখা যায়। ফলে রোগীকে ব্যায়াম শুরু করানোটাই একটা চ্যালেঞ্জ। তাই শুরু করতে হবে হালকা ব্যায়াম দিয়ে। “মাসল টোনিং এক্সারসাইজ় দিয়ে শুরু করানো হয়। কারণ অবসাদে বসে-বসে পেশি শিথিল হয়ে যায়। তাই প্রথমেই যদি সেই পেশি সুঠাম করার কাজ শুরু করা যায়। বডি একটু শেপে আসে, তা হলে কিন্তু তাঁরা উৎসাহিত হবেন। প্রথমে চেয়ারে বসেই কিছু এক্সারসাইজ় শুরু করা যেতে পারে,” বললেন ফিটনেস বিশেষজ্ঞ সৌমেন দাস। কিছু ব্যায়াম করার পরামর্শ দিলেন তিনি—
* ফুল বডি টোনিং: চেয়ারে বসে দুই হাত ধরে মাথার উপরে সোজা তুলে দিতে হবে। তালু থাকবে ছাদের দিকে। আর আঙুলগুলো ইন্টারলকিং প্যাটার্নে জুড়ে থাকবে। পা থাকবে দু’দিকে টোয়ের উপরে। যথাসম্ভব বডি উপর দিকে স্ট্রেচ করতে হবে। এ ভাবে ১ থেকে ২০ গুনতে হবে। ১৫ বার রিপিট করুন এই ব্যায়াম।
* বাইসেপ টোনিং: এ বার ডান হাত মুঠো করে ডান বাইসেপের উপরে বাঁ হাত রেখে ডান হাতের মুঠিটা নিয়ে যেতে হবে বাঁ কাঁধের কাছে। একই ভাবে উল্টো হাতেও এই ব্যায়াম করতে হবে। ১৫ বার রিপিট করুন।
* কোয়াড্রাসেপ হ্যামস্ট্রিং: এ বার চেয়ারে বসে দু’পা জুড়ে সামনে সোজা করে তুলে দিন। যতটা পারবেন উপরের দিকে তুলুন। সেই উচ্চতায় পা রেখে ১ থেকে ২০ গুনুন। এই ব্যায়ামও ১৫ বার রিপিট করতে হবে।
এই তিনটি ব্যায়ামে হাত ও পায়ের পেশি টোনড হবে। এ দিকে খুব কসরতও করার নেই। ফলে রোগী দু’-তিনদিন পর থেকে আগ্রহী হতে শুরু করেন। এক সপ্তাহ এই টোনিং এক্সারসাইজ় চলবে। এ সময়ে মুখের ব্যায়ামও করানো হয়, ফেসিয়াল মাসল টোনিংয়ের জন্য। এতে মুখের মেদ খানিকটা ঝরে গেলে নিজেকে আয়নায় দেখে রোগীর আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে।
জগিং বা মর্নিং ওয়াক
প্রথম সাতদিন রোগীকে ব্যায়ামের জন্য মানসিক ভাবে তৈরি করতে এই টোনিং এক্সারসাইজ় খুব কাজে দেয়। এ বার সাত-দশ দিন বাদে রোগীকে জগিং বা ব্রিস্ক ওয়াকিংয়ের পরামর্শ দিতে হবে। সৌমেন দাস বললেন, “এ ক্ষেত্রে একটা বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। গ্রুপ এক্সারসাইজ়ে কিন্তু অবসাদ অনেক কেটে যায়। একা না গিয়ে যদি তিন-চারজন মিলে জগিং বা মর্নিং ওয়াক করা যায়, তার সুফল পাবে রোগী। তাই আমরা গ্রুপ এক্সারসাইজ়ে জোর দিই।” চার-পাঁচ দিন পরপর মর্নিং ওয়াকে গেলে রোগী নিজেই বদলটা বুঝতে শুরু করবেন। কারণ শরীর যত ঘামবে, তত বন্ধু হরমোনের নিঃসরণ বাড়বে। ফলে মন ভাল থাকবে। ওজনও কমবে, বডি টোনড হবে। আয়নার সামনে দাঁড়ালে আত্মবিশ্বাস বাড়বে। তবে প্রথম চার-পাঁচ দিন টানা মর্নিং ওয়াকে যেতে হবে। একবার অভ্যেস হয়ে গেলে সে নিজেই রোজ বেরোবে। মর্নিং ওয়াক বা জগিংয়ের পরে আগ্রহ অনুযায়ী এরোবিক্স, পিলাটিস বা জ়ুম্বা শুরু করার পরামর্শ দিলেন সৌমেন দাস।
যোগব্যায়ামও যোগ করুন
* বালাসন: প্রথমে পা ভাঁজ করে বজ্রাসনে বসতে হবে। এ বার মাথা নিচু করে সামনে মাটিতে কপাল ঠেকিয়ে হাত দুটো ছড়িয়ে দিতে হবে
* হলাসন: সোজা হয়ে মাটিতে পিঠ ঠেকিয়ে শুয়ে পড়ুন। হাত থাকবে শরীরের দু’পাশে। কোমর থেকে পা উপরে তুলে ক্রমশ মাথার পিছন দিকে নিয়ে যান। মাথার পিছনে মাটিকে ঠেকাতে হবে পা জুড়ে।
* শবাসন: সোজা হয়ে শুয়ে থাকুন। হাত শরীরের সমান্তরালে থাকবে, পা দু’দিকে ছড়িয়ে দিন।
ব্যায়াম শুরুর পরে রোগী নিজেই পরিবর্তন অনুভব করতে পারবেন। তবে মন ভাল হলেই ব্যায়াম ছাড়লে চলবে না। ধীরে ধীরে শারীরচর্চার সময় ও পরিধি আরও বাড়ালে ভাল।