ফাইল চিত্র।
কবুতর যা যা যা…..। আশির দশকে অন্যতম জনপ্রিয় এই গানটার কথা নিশ্চয় মনে আছে? ‘ম্যায়নে প্যার কিয়া’ ছবিতে সলমন খানকে প্রেমপত্র পাঠানোর জন্য পায়রার পায়ে সেই চিঠি বেঁধে দিয়েছিলেন ভাগ্যশ্রী। সেটা ছিল রিল লাইফের একটি দৃশ্য। কিন্তু বাস্তবেও চিঠিপ্রেরক বা বার্তাবাহক হিসেবে পায়রাকে কাজে লাগানো হত। চরবৃত্তির জন্য এখনও অনেক দেশ এই প্রথাকে ব্যবহার করে থাকে।
এখন এক ক্লিকেই বার্তা পৌঁছে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট দফতর বা ব্যক্তির কাছে। নেটমাধ্যমের দৌলতে এখন ইমেল, হোয়াটসঅ্যাপ-এর মতো অনেক আধুনিক প্রযুক্তি আমরা ব্যবহার করে থাকি। ফলে পায়রা দিয়ে বার্তা পাঠানোর বিষয়টি যেন এখন একটা গল্পকথার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু একটা সময় ছিল যখন কোনও দুর্গম প্রান্ত যেখানে পত্রবাহকরা পৌঁছতে পারতেন না, সেখানে বার্তা পাঠাতে পায়রাই ছিল একমাত্র সম্বল। এর জন্য তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। বার্তা পাঠানোর জন্য সেনাবাহিনীতেও পায়রাকে একটা যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হত। এই প্রথা তিন হাজার বছর আগে থেকে মিশরীয়রা প্রথম ব্যবহার করেন। পরে ধীরে ধীরে অন্য জনজাতিও এই প্রথাকে রপ্ত করে।
কাক, টিয়া, কাকতুয়ার মতো অনেক পাখিই তো আছে যারা সহজে মানুষের আদবকায়দা রপ্ত করতে পারে। কিন্তু তাদের এই কাজে ব্যবহার না করে কেন শুধু পায়রাকেই পত্রবাহক বা বার্তাবাহক হিসেবে ব্যবহার করা হত?
কারণ অবশ্যই আছে। সেই কারণ কী, এ বার জেনে নেওয়া যাক। আমরা অনেকেই পায়রা পুষি। আশপাশেও অনেক পায়রা দেখতে পাই। তবে পত্রবাহক হিসেবে গৃহপালিত পায়রাকেই (হোমিং পিজন) কাজে লাগানো হত। সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, এই পায়রার মধ্যে রাস্তা চেনার একটা অদ্ভুত ক্ষমতা আছে। এই পায়রাকে যে কোনও জায়গায় ছেড়ে দিয়ে এলে ঠিক রাস্তা চিনে ঘরে ফিরে আসবে। তা ছাড়া পাখিরা ম্যাগনেটোরিসেপশনের মাধ্যমে বুঝতে পারে তারা পৃথিবীর কোন জায়গায় আছে। দাবি করা হয়, সূর্যের অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে পায়রা নাকি ঘরে ফেরার রাস্তা ঠিক খুঁজে নিতে পারে।
শুধু রাস্তা চেনার ক্ষমতাই নয়, গতির জন্যও পায়রাকে পত্রবাহক হিসেবে কাজে লাগোনোর জন্য বেছে নেওয়া হত। ঘণ্টায় ৮০-৯০ কিমি বেগে উড়তে পারে পায়রা। এক দিনে হাজার কিলোমিটার পথ উড়ে যেতে পারে। শুধু তাই নয়, ছ’হাজার ফুট উচ্চতাতেও উড়তে পারে পায়রা। এই সব কারণের জন্যই পায়রাকে পত্রবাহক বা বার্তাবাহক হিসেবে বেছে নেওয়া হত।