psoriasis

নিয়ন্ত্রিত ভাবে ব্যবহারে ছাড়, করোনা রুখতে পারবে ত্বকের অসুখের এই ওষুধ?

আদৌ কী ভাবে কাজ করছে ইটোলিজুমাব?

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২০ ১৪:২৬
Share:

করোনা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে ছাড় মিলেছে ওষুধের। ছবি: শাটারস্টক।

ত্বকের সমস্যা ‘সোরিয়াসিস’ সারাতে যে ওষুধের চল রয়েছে, সেই ‘ইটোলিজুমাব’ ইঞ্জেকশন কোভিড রোগীদেরও দেওয়া যেতে পারে। দেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা, নিয়ন্ত্রিত ভাবে আপৎকালীন ক্ষেত্রে এ ওষুধ ব্যবহারে অনুমতি দিয়েছে। ইটোলিজুমাব ছাড়াও টোসিলিজুমাব ইমিউনোসাপ্রেসেন্টও মহারাষ্ট্রের বেশ কিছু ব্যবহার হয়েছে কোভিড রোগীদের চিকিৎসায়। কোভিড-১৯ রোগীর উপর এটির পরীক্ষামূলক ব্যবহারে সাফল্য মেলার পর এই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যদিও রোগীর লিখিত সম্মতি লাগছে সে ক্ষেত্রে। কিন্তু আদৌ কী ভাবে কাজ করছে ইটোলিজুমাব বা টোসিলিজুমাব?

Advertisement

অতি সঙ্কটজনক কোভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে এটি প্রয়োগ করা হয়েছে রোগীর থেকে লিখিত সম্মতি নিয়েই। বায়োকোন সংস্থার অনুমোদিত ইটোলিজুমাব প্রবল শ্বাসকষ্টে ভুগছেন এমন করোনা রোগীর ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়েছে। কিন্তু আদৌ এই ওষুধ কি করোনা ভাইরাসকে মেরে ফেলতে পারে? এই প্রসঙ্গে মেডিসিনের চিকিৎসক কল্লোল সেনগুপ্ত বলেন, “করোনাকে রুখতে পারে কি না এ নিয়ে সঠিক কিছুর প্রমাণ এখনও মেলেনি। পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আছে এটি, এমনই বলা এতে পারে। তবে লিভার বা কিডনির সমস্যা থাকলে এই ওষুধ প্রয়োগের আগে ডোজ ঠিক করে নিতে হবে। না হলে সমস্যা তৈরি হতে পারে।”

মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস এই প্রসঙ্গে বলেন, “শরীরের মধ্যে যখন ভাইরাস প্রবেশ করে, তখন শরীরে প্রদাহ তৈরি হয় জীবাণুকে ধ্বংস করার। এই প্রদাহ অনেক সময় ভয়াবহ রূপ নেয়। এই প্রদাহ শরীরের বাকি অংশেও আঘাত করতে পারে। অতিরিক্ত মাত্রায় প্রদাহ শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক। কিন্তু প্রদাহ যাতে ক্ষতিকারক রূপ না নেয়, সে জন্য এ জাতীয় কিছু ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে করোনার ক্ষেত্রে। সোরিয়াসিসের ক্ষেত্রেও একই কারণে ইটোলিজুমাব, টোসিলিজুমাব এ জাতীয় ‘বায়োলজিক’ ব্যবহার করা হয়।”

Advertisement

আরও পড়ুন: জ্বর হলেই করোনার ভয়? বাড়িতে রাখতেই হবে এই সব মেডিক্যাল কিট​

অরিন্দমবাবু যদিও এই প্রসঙ্গে একটি জরুরি কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, টোসিলিজুমাবের দাম ৪০ হাজার টাকা। এটি সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাইরে। ওষুধে অনুমতি মিললেও দাম নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি সরকারকে দেখতে অনুরোধ করেন তিনি।

এই প্রসঙ্গে ডার্মাটোলজিস্ট অরিত্র সরকার বলেন, “ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে প্রদাহ বা ক্যারোলিন স্টর্ম তৈরির সময় ‘ইন্টারলিউকিন ৬’ নামে এক ধরনের কোষের রস বা সাইটোকাইন নিঃসৃত হয়। টোসিলিজুমাব হল অ্যান্টি ইন্টারলিউকিন ৬ রিসেপ্টর অ্যান্টিবডি যেগুলি রিউমাটয়েড আর্থারাইটিসের ক্ষেত্রে আগে ব্যবহার করা হয়েছে। কোভিড সংক্রমণে সাইটোকাইন স্টর্ম রুখে দেওয়ার ক্ষেত্রে এর ভূমিকা অবশ্যই আছে।”

মেডিসিনের চিকিৎসক রাজর্ষি সেনগুপ্ত এই প্রসঙ্গে বলেন, “বড় আকারে পরীক্ষামূলক প্রয়োগে এগুলির ফল ইতিবাচক না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা যায় না। এগুলি কাজে দিয়েছে কয়েক জন রোগীর ক্ষেত্রে। তাই ডবল ব্লাউন্ড ট্রায়াল হওয়া প্রয়োজন। কারণ অসুখটার বয়স এক বছরও হয়নি। এই ওষুধগুলি আসলে ইমিউনোমডিউলেটর। অক্সিজেন বাড়িয়েও অনেক সময় নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে রোগীদের ক্ষেত্রে এগুলি তাই অনুমোদন সাপেক্ষে ব্যবহার করা হচ্ছে।” রাজর্ষিবাবুর কথায়, সাইটোকাইন স্টর্মের সময় ইটোলিজুমাব বা টোসিলিজুমাব শরীরের অতি সক্রিয় ‘সৈনিক’দের আটকায়, যাতে মডিউলেশন তৈরি হয়। কারণ সাইটোকাইন স্টর্মের ফলে ফুসফুস-সহ অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতি হয়ে মাল্টি-অর্গ্যান ফেলিওর হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। তবে এই ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে ১০০ ভাগ নিশ্চিত হতে গেলে আরও অনেক বেশি পরীক্ষামূলক ব্যবহার প্রয়োজন বলেই মনে করেন তিনি।

ভাইরাসের লোড খুব বেশি হলে বা সাইটোকাইন স্টর্মের ক্ষেত্রে এই ওষুধ প্রয়োগ হয়েছে, তবে তা ট্রায়ালের পর্যায়ে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন ডার্মাটোলজিস্ট অরিত্র সরকার। তিনি জানান, ২০১৩ সালে অনুমোদনের পর অ্যান্টি সোরিয়াটিক ড্রাগ হিসেবে ইটোলিজুমাব অ্যাকিউট সোরিয়াসিসে ব্যবহার করা হচ্ছে। শরীরের মধ্যে ইমিউন সিস্টেমের টি সেল কয়েকটি সাইটোকাইন তৈরি করে। সোরিয়াসিসের ক্ষেত্রে তা চামড়ার প্রতিলিপি তৈরি বাড়িয়ে দেয়। টি সেল-কে দমিয়ে রাখে ইটোলিজুমাব। তবে যক্ষ্মা বা ক্যানসার রোগীদের ক্ষেত্রে তা নিয়ন্ত্রিত ভাবে ব্যবহার করতে হবে।

সংক্রমণ রুখতে প্রতিনিয়ত নানা পদ্ধতি অবলম্বনের চেষ্টা করছেন চিকিৎসকরা। ছবি: শাটারস্টক

স্পেনে এই সংক্রান্ত একটি রিভিউ স্টাডি হয়েছিল মার্চের ৪ তারিখ থেকে এপ্রিলের ২৬ তারিখ পর্যন্ত। মেডরিক্স জার্নালে তা প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়েছে, তখন স্পেনে রোগীর সংখ্যা মারাত্মক হারে বাড়ছিল। কোভিড রোগীদের ক্ষেত্রে তথ্য বিশ্লেষণ করা হয় সে সময়। ত্বক, রিউমাটয়েড আর্থারাইটিস ও গ্যাস্ট্রোএনটেরোলজি সংক্রান্ত সমস্যায় যাঁরা এই ওষুধগুলি ব্যবহার করেছেন, তাঁদের কোভিড সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা গিয়েছে ০.৫ শতাংশ। যাঁদের ক্ষেত্রে এই ওষুধ কখনও ব্যবহার করা হয়নি, তাঁদের মধ্যে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ১.২৮ শতাংশ। তাই এই পদ্ধতি কোভিড সংক্রমণে কার্যকর হলেও হতে পারে বলে মনে করেছিলেন চিকিৎসকদের একাংশ। তবুও বিপুল আকারে প্রয়োগ না হলে নির্দিষ্ট ভাবে বলা যাবে না বলেই মনে করেন অরিত্রবাবু।

কিন্তু ওষুধগুলো কী ভাবে কাজ করছে?

ভাইরাসকে মারতে প্রচুর সাইটোকাইন তৈরি হয় শরীরে। তখন সেই স্টর্ম ফুসফুস ও অন্যান্য অঙ্গের রক্তবাহক বা ব্লাড ভেসেলকে ধ্বংস করে দেয়। তাই ওষুধ প্রয়োগের আগে রোগীর অন্য রোগের হিস্ট্রি নেওয়া হচ্ছে। সাইটোকিন রিলিজ সিন্ড্রোমের চিকিৎসার জন্য এটি ব্যবহার হচ্ছে এটি।

আরও পড়ুন: রেমডেসি‌ভির থেকে ফ্যাভিপিরাভির…করোনা চিকিৎসায় দিশা দেখাচ্ছে এ সব ওষুধ

কেন আপৎকালীন ক্ষেত্রে ব্যবহারে অনুমতি মিলেছে ইটোলিজুমাব জাতীয় ওষুধের?

অরিত্রবাবু বলেন, “কোভিডে মৃত্যুর মূল কারণ হিসেবে ধরে নেওয়া হচ্ছে সাইটোকাইন স্টর্মকে। ভাইরাস হানার থেকেও বেশি ক্ষতি করছে এটি। ধ্বংস করছে ফুসফুসের কোষকে। চেষ্টা করা হচ্ছে, ভাইরাস যাতে ফুসফুসে গিয়ে না আটকায়, যদি আটকে যায়, তা হলে শরীরের মধ্যে যে স্টর্ম শুরু হয়েছে, তা আটকানোর। প্লাজমা থেরাপির প্রয়োগ শুরু তখনই। সে ক্ষেত্রে প্লাজমা সংগ্রহ করে অ্যান্টিবডি প্রয়োগ করা হচ্ছে, ভাইরাসের কোষকে ফুসফুসে যেতে বাধা দিচ্ছে। সাইটোকাইন স্টর্ম তৈরি হচ্ছে না। মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি বা ইটোলিজুমাব ভাইরাসের ক্ষেত্রেও তাই। ভাইরাসের প্রোটিন স্পাইকগুলিকে ব্লক করে থামিয়ে দিচ্ছে ক্রিয়া। কমিয়ে দিচ্ছে সাইটোকাইন স্টর্ম। তবে এর ব্যবহার এখনও অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত। প্রচুর দাম হওয়ার কারণে এটা বাইরের দেশেই অনেক বেশি প্রয়োগ হয়েছে এত দিন। তবে সম্প্রতি বায়োকনের এই ওষুধ প্রয়োগর অনুমতি মিলেছে। কিন্তু বহু বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রয়োগ করা হচ্ছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement