কেন কিছুতেই কোভিড ঠেকাতে সমর্থ হচ্ছে না ভারত? কোথায় খামতি? ফাইল চিত্র।
অঙ্কটা ভয় ধরানোর। হিসেব দেখলে উদ্বেগ বাড়তে বাধ্য। প্রায় প্রতি দিনই কোনও এক দেশকে টপকে কোভিড আক্রান্তের তালিকায় উপরে উঠে আসছে ভারত। শনিবার দেশের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেল ৩ লক্ষ। নতুন করে ১ লক্ষ সংক্রমণ পেরতে ভারতের সময় লেগেছে মাত্র ১০ দিন!
কেন কিছুতেই কোভিড ঠেকাতে সমর্থ হচ্ছে না ভারত? কোথায় খামতি? এর ভবিষ্যৎ-ই বা কী? এর শেষ-ই বা কোথায়?
এ সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে সামগ্রিক চিত্রে চোখ রাখা জরুরি। সেটি পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, যে হারে রোজ সংক্রমণ বাড়ছে তাতে এই সংখ্যা জুলাই-অগস্টে আরও বাড়বে। নিয়ম মানলে, ঠিকঠাক ভাবে মাস্ক পরলে, হাত ধোয়ার অভ্যাস বজায় রাখলে অবস্থার উন্নতি হবে তার পর থেকে। তবে, এই রোগ সহজে পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে না।
কোভিডের বয়স মাত্র ৬ মাস। এই ৬ মাসে কোনও ভাইরাসের গতিপ্রকৃতি ও চরিত্র বোঝা যায় না। চিনতে অসুবিধা হচ্ছে বলেই এটি এত চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তবে আমাদের দেশের চেয়েও বেশি সংক্রমণ যে সব দেশে হয়েছিল, তারা কেউ কেউ তা দিব্যি সামলে উঠেছে। পারিনি আমরা। এই না পারার নেপথ্যে বেশ কিছু কারণ আছে।
আরও পড়ুন: নানা ধরনের ওষুধ খেয়ে নিজেদের নিরাপদ ভাববেন না, সতর্কবার্তা বিশেষজ্ঞের
আরও পড়ুন: রুটিনে রাখুন এই অভ্যাস, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে, দূরে থাকবে অসুখ
১) সরকারের অপরিকল্পিত ভাবে লকডাউনের সিদ্ধান্ত আমাদের দেশে বুমেরাং হয়েছে। লোকডাউন শুরুর সময় সংক্রমণ এত বেশি ছিল না। দেশের সব পরিযায়ী শ্রমিককে দিন তিনেক সময় দিয়ে ফিরিয়ে এনে যদি এই লকডাউন শুরু হত, তা হলে অসুখকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনা যেত। ভিন্ রাজ্য থেকে শ্রমিকদের সংক্রমণের শিকার হতে বাধ্য করা হল। তার পর রাজ্যে ফিরিয়ে আনা হল। এখন এই শ্রমিকদের থেকেও অসুখ ছড়াচ্ছে। প্রথম অবস্থায় তাঁদের ফেরালে এতটা বাড়াবাড়ি হত না। গোটা দেশে লকডাউন দরকারও ছিল না। শুধু আক্রান্ত জায়গাগুলোকে বেঁধে ফেললেই কার্যদ্ধার হত।
২) আন্তর্জাতিক বিমান আরও আগে বন্ধ করা উচিত ছিল।
৩) লকডাউন চলাকালীন, অসুস্থ ব্যক্তিদের পরীক্ষা করে তাদের আলাদা করে দিলেই ভাইরাসের সংক্রমণ-শৃঙ্খল ভেঙে দেওয়া যেত। ভাইরাস কিন্তু নিজে নিজে হেঁটে কারও শরীরে যায় না। তাই কঠোর ভাবে রোগীদের আলাদা করে রাখতে পারলেই অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসত। যেমন একটা সময়ের পর ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড এমনকি, চিনও এই পথে সাফল্য এনেছে।
৪) বিপুল টেস্টেরও প্রয়োজন ছিল। যদিও সম্প্রতি টেস্ট কিছুটা বেড়েছে। তাই রোগ ধরা পড়ছেও বেশি। কিন্তু এখনও টেস্টের সংখ্যা অনেক কম। আরও টেস্ট বাড়লে, সংখ্যা আরও বাড়বে।
৫) শুধু সরকার নয়, নাগরিদের একাংশও সচেতন নন। মাস্ক নামিয়ে কথা বলা, যেখানে সেখানে মাস্ক নামিয়ে রাখা, গলায় মাস্ক ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়ানো, সাবান-স্যানিটাইজার নিয়েও সিরিয়াস না হওয়া, এগুলোও অসুখ বাড়াচ্ছে।
সরকার ও নাগরিক। দেশের এই দুই মূল অংশ মিলেই হয়তো ভারতকে আরও গভীরতর ভয়াল দিকে ঠেলে দিচ্ছে।