অধিকাংশ বাড়িতেই জল রাখা হয় কোন পাত্রে? উত্তর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এক। প্লাস্টিকের বোতল। এমনকি অফিসে, কলেজে বা ঘুরতে যাওয়ার সময়ে জল খাওয়ার জন্যও ব্যাগে ভরে নেওয়া হয় প্লাস্টিকের বোতলে জল। অনেকে আবার কোল্ড ড্রিঙ্কের বোতল ধুয়ে তাতে জল ভরে মাসের পর মাস দিব্যি খেয়ে যান। কখনও ভেবে দেখেছেন, তা আদৌ স্বাস্থ্যসম্মত কি না?
প্লাস্টিকের বোতল নয় কেন?
উত্তরটার অনেকটাই সকলের জানা। প্লাস্টিকের কারণে পরিবেশদূষণ এড়াতেই বোতল পালটে ফেলা দরকার। তা ছাড়া সব রকমের প্লাস্টিকে জল খাওয়াও ঠিক নয়। বিশেষ করে বাজারচলতি ঠান্ডা পানীয়ের বা জলের বোতল কিন্তু একবার ব্যবহারযোগ্য। সেগুলির পুনর্ব্যবহার কখনও নয়। তাই এই ধরনের বোতল একবার ব্যবহারের পরেই হাতের চাপে ভেঙে রিসাইকল বিনে ফেলে দিন।
জলের আধার
প্লাস্টিক যখন নয়, এ বার প্রশ্ন বিকল্প কী হতে পারে? বাড়িতে রাখার জন্য বা অফিস-কলেজে নিয়ে যাওয়ার জন্য কেমন বোতল কেনা যায়?
স্টিল: আমাদের ছোটবেলায় বেশির ভাগ বাড়িতেই কিন্তু স্টিলের জগ ব্যবহার করা হত। সেই ব্যবস্থাই অনায়াসে ফিরিয়ে আনা যায়। জগ থেকে গ্লাসে ঢেলে জল খাওয়ার অভ্যেস নতুন করে শুরু করা যায়। তা ছাড়া, এতে জল খাওয়ার সময়ে বায়ুও প্রবেশ করবে না। ফলে যাঁদের গ্যাসের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের কিছুটা হলেও সুরাহা হবে। স্টিলের জিনিসের যত্নও সহজ। হাত থেকে পড়ে ভেঙে যাওয়ার ভয় থাকে না। স্টিলের আবার অনেক ভাগ আছে। স্টেনলেস স্টিলের বোতল এখন বেশ ইন। এগুলি দেখতে ভাল হয়। ক্যারি করাও সহজ।
কাচ: একান্তই বোতলে জল খাওয়ার অভ্যেস হয়ে গেলে কাচের বোতল কিনে রাখতে পারেন। এখন অনেক রকমের ডিজ়াইন করা সুন্দর কাচের বোতল কিনতে পাওয়া যায়। সস, স্কোয়াশ জাতীয় অনেক কিছুই কাচের বোতলে কেনা হয়। সেগুলি না ফেলে, ধুয়ে তাতেই জল রাখা যেতে পারে। স্টিলের জগ পছন্দ না হলে শৌখিন কাচের জগ রাখুন, তা আপনার অন্দরের শোভাও বাড়াবে। তবে কাচের জিনিস পড়ে ভেঙে যাওয়ার ভয় থাকে। তাই কাচের বোতল নিয়ে যাতায়াত না করে এর ব্যবহার বাড়িতে করাই শ্রেয়।
তামা: তামার পাত্র ও বোতল এখন বেশ ইন। তবে দামটা বেশি। তামা নিজেই জল শুদ্ধ করতে সহায়ক হওয়ায়, তামার পাত্রের ব্যবহার বহু যুগ ধরে চলে আসছে। তবে এর বিরুদ্ধ মতও আছে। অনেকের মতে, অতিরিক্ত তামা শরীরে সঞ্চয় হলে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা হতে পারে। তামার পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার করা জরুির। প্রত্যেক দিন তামার পাত্রে জল বদলানো দরকার।
মাটি: কথায় আছে, মাটিই খাঁটি। আগে জল ঠান্ডা রাখতে মাটির জালা বা কুঁজো ব্যবহার করা হত। সে ভাবেই বাড়িতে ফিরিয়ে আনা যায় মাটির পাত্র। এখন তো মাটির বোতল ও গ্লাসও কিনতে পাওয়া যায়। তার উপরে এঁকে নিলে দেখতেও লাগবে সুন্দর। এই পাত্রে জল ভরে সাজিয়েও রাখা যায়। তবে ছ’মাস বাদে তা পাল্টে ফেলাই ভাল।
সেরামিক: সেরামিকের বোতল বা পাত্রও কিনে নিতে পারেন। এতে যেমন জল রাখার সমস্যাও মিটবে। অন্য দিকে সুন্দর নকশা করা সেরামিকের বোতল ডাইনিং টেবল বা ঘরের তাকে সাজিয়ে রাখলে দেখতেও ভাল লাগবে। সেরামিকের কাপ, গ্লাসও কিনে নিতে পারেন বোতল বা জগের জুড়ি হিসেবে।
পেপার বক্স: এ ছাড়া আছে বক্সড ওয়াটার। অনেক পানীয় বা দুধের টেট্রাপ্যাকে কিন্তু এ রকম পেপার বক্স ব্যবহার করা হয়। একই ভাবে কাগজের প্যাকেটেও জল পাওয়া যায়। যাতায়াতের পথে এই ধরনের জলের প্যাকেট কিনতে পারেন।
খেয়াল রাখবেন
• বোতলে জল খেলেই হল না। তা নিয়মিত পরিষ্কার করাও জরুরি। বিশেষত সরু গলা বোতলের নীচ পর্যন্ত হাত পৌঁছয় না। সে ক্ষেত্রে বটল ক্লিনার ব্রাশ দিয়ে ভাল করে বোতল পরিষ্কার করতে হবে।
• বোতলের ছিপি লাগানোর খাঁজেও কিন্তু ময়লা জমে। তাই সেখানেও ভাল করে ঘষে পরিষ্কার করে নেওয়া জরুরি।
• বোতল পরিষ্কার করেই তাতে জল ভরে ফেলবেন না। বোতলের জল শুকিয়ে তাতে জল ভরবেন।
• বাচ্চাদের দুধের বোতল কেনার সময়েও খেয়াল রাখবেন, তা যেন বিপিএ ফ্রি হয়। প্লাস্টিকের বোতলের জায়গায় স্টিলের বা কাচের দুধের বোতল কেনাই শ্রেয়। বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর জন্য গরম জলে দুধ মেশানো হয়। নিয়মিত প্লাস্টিকে তা না করাই ভাল।
• একান্তই যদি প্লাস্টিকের বোতলে জল খান, তা হলে বেশি মাইক্রনের প্লাস্টিকের বোতল কেনা উচিত। সেই বোতল ৪-৫ মাস অন্তর বদলে নিন। একই বোতলে বছরের পরে বছর জল খাওয়া উচিত নয়।
জলের অপর নাম জীবন। কথাটা ক্লিশে হলেও সত্যি। তাই তাকে ধরে রাখার পাত্রও নির্বাচন করুন সচেতন ভাবে।