হোয়াটসঅ্যাপের জনপ্রিয়তায় টান দিয়েছে অন্য মেসেজিং অ্যাপ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
হোয়াটসঅ্যাপের বদলে কোন মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করবেন আপনি? ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্যের বিষয়ে হোয়াটসঅ্যাপের নতুন নীতি দুনিয়া জুড়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। ইন্টারনেটে যাঁরা নিয়মিত মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করেন, তাঁরাও অন্য দ্রুত অ্যাপের দ্বারস্থ হচ্ছেন। কিন্তু তুল্যমূল্য বিচারে হোয়াটসঅ্যাপের পাশে কোথায় দাঁড়িয়ে তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা?
হোয়াটসঅ্যাপ: নতুন নীতি বলছে, ভারতীয় ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে হোয়াটসঅ্যাপ সংরক্ষিত তথ্য ভাগ করে নেবে তার মালিক কোম্পানি ফেসবুকের সঙ্গে। শুধু তা-ই নয়, লোকেশন সার্ভিস চালু না থাকলেও যেন-তেন-প্রকারেণ হোয়াটসঅ্যাপ তার ব্যবহারকারীর ফোন থেকে লোকেশন খুঁজে নেওয়ার অধিকারও চেয়ে নিয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপ এ বার থেকে জানতে পারবে ব্যবহারকারীর টাকাপয়সার লেনদেনের কিছুটাএবং তাঁদের অনলাইন কেনাকাটার বিষয়েও। সব মিলিয়ে গ্রাহকের বহু তথ্যই হোয়াটসঅ্যাপ আদায় করে নেবে তাঁর স্মার্টফোন থেকে। হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাপ ফোন থেকে ডিলিট করে দিলেও সার্ভারে থেকে যাবে এর বহু তথ্যই।
সিগন্যাল: হোয়াটসঅ্যাপের যুগ্ম নির্মাতা ব্রায়ান অ্যাকশন এবং মোক্সি মার্লিনস্পাইক ২০১৮ সালে অ্যাপটি বানিয়েছিলেন। ব্যবহারকারীদের মতে, সবচেয়ে নিরাপদ অ্যাপ এটি। এই অ্যাপে অ্যাকাউন্ট রেজিস্টার করার সময় ফোন নম্বর ছাড়া কিছুই চাওয়া হয় না। নির্দিষ্ট সময় পর পর অ্যাপটি পিন (পার্সোনাল আইডিন্টেফিকেশন নম্বর) চায়। যা না দিতে পারলে অ্যাপের ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অনেকের মতেই এটি অত্যন্ত নিরাপদ। ঝকঝকে তকতকে চেহারার অ্যাপটিকে নিরাপদ ভাবার পিছনে আরও অনেকগুলো কারণ রয়েছে। প্রথমত, ‘সিল্ড সেন্ডার’ অপশন। এতে মেসেজ প্রেরক এবং গ্রাহক— দু’তরফই নিজের পরিচয়ের অনেকটা গোপন রাখতে পারেন পরস্পরের থেকে। এ ছাড়াও, এক জন ব্যবহারকারী কোনও ছবি সিগন্যালের মাধ্যমে অন্যকে পাঠানোর সময় সেখানে থাকা মানুষের মুখাবয়ব ঝাপসা করে দিতে পারেন। এতে ছবিতে থাকা মানুষের পরিচয়ও সহজেই গোপন রাখা যায়।
টেলিগ্রাম: রাশিয়ান দুই ভাই পাভেল এবং নিকোলাই দুরভ ২০১৩ সালে এই অ্যাপটি তৈরি করেন। এতে ‘সিক্রেট চ্যাট’ মোড ব্যবহারকারীদের সবচেয়ে বেশি পছন্দের। এই চ্যাট মোডে নির্দিষ্ট ফোনটি ছাড়া আর কোনও জায়গা থেকে চ্যাট দেখতে পাওয়া যায় না। নির্দিষ্ট সময় পরে সেই চ্যাট আপনাআপনি ডিলিট করে দেওয়ার ব্যবস্থাও করতে পারেন ব্যবহারকারী। ২ জিবি পর্যন্ত সাইজের ফাইলও পাঠানো যেতে পারে টেলিগ্রামে। ফলে সিনেমা বা গান পরস্পরকে পাঠাতে কোনও অসুবিধা হয় না। মেসেজ শিডিউলিংও করা যায়। অর্থাৎ, আগে থেকে ঠিক করে রাখা যায়, কোন সময় মেসেজটি পাঠানো হবে। নির্দিষ্ট সময়ে টেলিগ্রাম অ্যাপটি প্রেরকের হয়ে নিজেই মেসেজ পাঠিয়ে দেয়। এই ক’টি ফিচারই ব্যবহারকারীদের বিপুল আকৃষ্ট করেছে। ফলে গত বছরের শেষে অ্যাপটির গড়ে মাসে ব্যবহারকারীর সংখ্যা পৌঁছে যায় ৪০ কোটিতে।
ভাইবার: হালে জনপ্রিয়তা বেড়েছে এই মেসেজিং অ্যাপটিরও। একইসঙ্গে কম্পিউটার ও স্মার্টফোন থেকেও ব্যবহার করা যায় ভাইবার। সুবিধা আছে স্ক্রিন শেয়ার করে অন্যকে নিজের কম্পিউটারে থাকা ছবি দেখানোর। এই অ্যাপ-ও একই ভাবে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনের সুবিধাযুক্ত।
আরও পড়ুন: হোয়াটসঅ্যাপের নতুন নীতির উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন দিল্লি হাইকোর্টে
আরও পড়ুন: শুধু ভারতীয়দের ফোনেই আড়ি হোয়াটসঅ্যাপের, দু’মুখো নীতিতে বিতর্ক