সুস্থ থাকতে, ওজন কমাতে মেটাবলিজ়ম রেট বাড়াতেই হবে। কথাটা আমরা হামেশাই শুনে থাকি। কিন্তু মেটাবলিজ়ম রেট বাড়বে কী ভাবে? প্রধানত তিনটি দিক মাথায় রাখতে হবে। এক্সারসাইজ়, খাওয়াদাওয়া এবং লাইফস্টাইল। তবে তার আগে জেনে নেওয়া যাক, মেটাবলিজ়ম কী?
শরীরের চালিকাশক্তিই হল খাবার। আমরা যে খাবার খাই, তা থেকেই পেশি, রক্ত, কোষ ইত্যাদি তৈরি হয়। অর্থাৎ শরীর গঠনের কাজে (বিল্ডআপ) লাগে। এটাকে বলে অ্যানাবলিজ়ম। খাবার থেকে শরীর প্রয়োজনীয় এনার্জিও পায়। যা আমাদের সারা দিনের কাজে খরচ (ব্রেক ডাউন) হয়। এটাকে বলে ক্যাটাবলিজ়ম। অ্যানাবলিজ়ম এবং ক্যাটাবলিজ়ম মিলেই হয় মেটাবলিজ়ম, যা বাড়ানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। মেটাবলিজ়ম কম থাকা মানে শরীরে খাবার জমছে। অর্থাৎ সেটা খরচ হচ্ছে না। মেদবৃদ্ধি এ ভাবেই হয়ে থাকে। আর তা ডেকে আনে নানা রোগব্যাধি।
এক্সারসাইজ়ই প্রধান
মেটাবলিজ়ম বাড়ানোর জন্য হাই ইনটেনসিটি এক্সারসাইজ় প্রয়োজন। মানে শরীর যে খাটনিটা নিতে সক্ষম, তার চেয়ে বেশি খাটাতে হবে শরীরকে। জোরদার কার্ডিয়োভ্যাসকুলার এক্সারসাইজ় প্রয়োজন। আপনি ভাবছেন রোজ আধঘণ্টা হাঁটেন, তা হলে নিশ্চয়ই মেটাবলিজ়ম রেট ভাল হবে। তা কিন্তু না-ও হতে পারে। কতটা ক্যালারি বার্ন হচ্ছে, হার্ট রেট কতটা বাড়ছে সে-সবও এ ক্ষেত্রে বিচার্য। ধীরে নয়, জোরে হাঁটুন। যাঁরা জোরে হাঁটতে পারেন, তাঁরা জগিং করুন। যাঁরা জগিংয়ে সক্ষম, তাঁরা দৌড়োন। অর্থাৎ একটু করে এক্সারসাইজ়ের গতি বাড়িয়ে নিতে পারেন। বক্সিং, জোরে সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা— এগুলিও করতে পারেন।
যে সব ব্যায়াম শরীরের জোর বাড়ায় সেগুলি করলেও মেটাবলিজ়ম রেট বাড়বে। ফিটনেস বিশেষজ্ঞ চিন্ময় রায়ের পরামর্শ, ‘‘স্কোয়াট, লাঞ্জেস, পুশআপ, পুলআপ, প্লাঙ্ক, সাইড প্লাঙ্ক— এই ছ’টি এক্সারসাইজ় যদি কেউ পরপর করতে পারেন, তা হলে হার্ট রেট বাড়বে।’’ তবে হাড় বা পেশি সংক্রান্ত কোনও শারীরিক সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
খাদ্যাভ্যাসে নজর দিন
সুষম আহার সব কিছুর গোড়ার কথা। তার সঙ্গে দিনে আপনি কত বার খাবার খাচ্ছেন, সেটাও জরুরি। সারা দিনে তিন-চারবার খাবার খেলে মেটাবলিজ়ম রেট কম হবে। শরীরের নিজস্ব কিছু কার্যবিধি রয়েছে। শরীর যদি বোঝে কম খাবার ঢুকছে, তা হলে সে তা জমিয়ে রাখে। যে কারণে উপোস করলে ওজন কমবে, এই ধারণা নস্যাৎ করে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা। দু’টি মিলের মাঝের বিরতিও যেন বেশি না হয়।
মেটাবলিজ়ম রেট বাড়াতে হাই ফাইবার ডায়েট প্রয়োজন। হোলগ্রেন, ফল, আনাজ জাতীয় খাবার ডায়েটে রাখার চেষ্টা করুন। প্রোটিনও সমান জরুরি। সিদ্ধ ডিম, চিকেন রাখুন রোজকার তালিকায়। খেতে হবে পরিমাণ মতো জলও।
লাইফ থাকুক স্টাইলে
মেটাবলিজ়ম রেট বাড়া বা কমার জন্য লাইফস্টাইল ভীষণ ভাবে দায়ী। ডিপ্রেশন, অ্যাংজ়াইটি, টেনশন বাড়লে মেটাবলিজ়ম রেট কমবে। ডিপ্রেশনে থাকলে অনেকে বেশি ঘুমোন। অ্যাংজ়াইটি বেশি হলে খাওয়াদাওয়া ভুলে যান। মানসিক সমস্যার চাপ বইতে হয় শরীরকেও। এর সঙ্গে হরমোনেরও যোগ রয়েছে। ভূমিকা রয়েছে খাওয়াদাওয়ারও। যেমন অবসাদ হলে শরীরে সেরোটোনিন হরমোনের মাত্রা কমে যায়। কড লিভার অয়েল, আমন্ড, ওয়ালনাট সেরোটোনিনের মাত্রা বাড়াতে সহায়ক। তাই ডায়াটিশিয়ানের পরামর্শ মেনে খাদ্যাভ্যাস ঠিক করুন।
শারীরচর্চা, খাদ্যাভ্যাস এবং দৈনন্দিন জীবনযাপন— তিনটি জিনিসের ব্যালান্সেই মেটাবলিজ়ম রেট থাকবে ঊর্ধ্বগামী।
তথ্য সহায়তা: ফিটনেস বিশেষজ্ঞ চিন্ময় রায়
মডেল: ঐশ্বর্য সেন; ছবি: জয়দীপ মণ্ডল; মেকআপ: চয়ন রায়