প্রেশার হল সাইলেন্ট কিলার। সমস্যা যখন গুরুতর হয়, তখনই সে জানান দেয়
Blood Pressure

Blood Pressure: ব্লাড প্রেশার হঠাৎ কমে গেলে কী করবেন?

প্রেশার হল সাইলেন্ট কিলার। সমস্যা যখন গুরুতর হয়, তখনই সে জানান দেয়

Advertisement

পারমিতা সাহা

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২১ ০৮:০৩
Share:

ছবি: শুভদীপ ধর

করোনা আবহে অধিকাংশ মানুষই বাড়িতে একটি করে পালস অক্সিমিটার কিনে রেখেছেন। কখন অক্সিজেনের মাত্রা নীচে নেমে যায়! তেমনই যাঁরা রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের কিন্তু অক্সিমিটারের সঙ্গে একটি বিপি ইন্সট্রুমেন্টও বাড়িতে রাখা উচিত।

Advertisement

তার কারণ হল, ব্লাড প্রেশার, ডায়াবেটিস এ সব রোগ সাইলেন্ট কিলার। যখন সমস্যা গুরুতর হয়, তখনই মানুষ বুঝতে পারে। কারও শ্বাসকষ্ট হলে, তাঁকে সেটা বলে দেওয়ার দরকার হয় না। কিন্তু ধীরে ধীরে যখন প্রেশার কমছে বা বাড়ছে, তখন বোঝা যায় না। তাই নিয়মিত বিপি পরীক্ষা করা আবশ্যিক। এবং প্রেশার থাকলে, তা হাই হোক কিংবা লো, বাড়িতে ইলেকট্রনিক বিপি মেশিন অবশ্যই রাখা উচিত বলে মত ডাক্তারদের। এ প্রসঙ্গে জেনারেল মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ সুবীর কুমার মণ্ডল বললেন, ‘‘ডাক্তারখানায় যে প্রেশার দেখা হয়, সেটা একটা ধারণামাত্র। যখন রোগী চিকিৎসকের কাছে আসেন, তখন তাঁর একটা চিন্তা থাকে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই বিপি একটু বেশি থাকে। তার উপর নির্ভর করে ওষুধ দিই বটে, কিন্তু রোগীকে বলি বাড়িতে বিপি চেক করতে। তিন বার করে ব্লাড প্রেশার মাপা উচিত এবং সেটা মাপতে হবে দু’হাতে। তবে বিপি দেখার কিছু নিয়ম আছে। কাফ এমন ভাবে জড়াতে হবে, যাতে তা প্রচণ্ড টাইট না হয় আবার ফাঁকও না থাকে। হাতের ভাঁজ থেকে এক আঙুল উপরে বাঁধতে হবে। আর টিউবটি থাকবে ভাঁজের সামনের দিকে। আমি পরামর্শ দেব ইলেকট্রনিক মেশিন কেনার। অনেকে মনে করেন মার্কারি বিপি মেশিন বেশি ভাল। ম্যানুয়ালি যখন রক্তচাপ পরীক্ষা করা হয়, তখন দু’রকম ভুল হতে পারে। ম্যানুয়াল এরর ও ইন্সট্রুমেন্টাল এরর। কিন্তু ইলেকট্রনিক মেশিনে ম্যানুয়াল এরর থাকে না। সারা দিনে বিপি কতটা ওঠা-নামা করছে, সেটা একবার দেখে ডাক্তারের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। তাই যাঁরা ব্লাড প্রেশারের ওষুধ খান, তাঁরা অবশ্যই দিনে তিন বার বিপি চেক করুন বাড়িতে।’’ দিনের বিভিন্ন সময় বিপির যেহেতু তফাত হয়, তাই তার গড় ধরে নিয়েই ওষুধ দেওয়া হয়। বিশেষ করে এখনকার টেলি মেডিসিনের ক্ষেত্রে বিপি বাড়িতে দেখা খুব জরুরি।

Advertisement

বিপি কমে গেলে

মাথা ঘুরতে পারে, দুর্বল লাগে, চোখ ঝাপসা লাগতে পারে। আবার রক্তচাপ অতিরিক্ত কমে গেলে রোগী অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে। বেশি বয়সে বিপি স্বাভাবিক ভাবে বাড়ে, তাকে বলা হয় এসেনশিয়াল হাইপারটেনশন। বিপি যদি বড় বয়েসেও ছোটবেলার মতো নাইন্টি বাই সিক্সটি থেকে যায়, তা হলে মুশকিল। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত চাপ না থাকলে ব্রেনে, কিডনিতে বা হার্টের ক্যাপিলারির মধ্য দিয়ে রক্ত পৌঁছবে না। ফলে স্ট্রোকও হতে পারে। ‘কিলার’ কথাটা প্রেশার বাড়া বা কমা উভয় ক্ষেত্রেই খাটে। প্রেশার বেশি থাকলে যেমন মাথায় রক্তক্ষরণ হয়ে স্ট্রোক হতে পারে, তেমনই প্রেশার কমে গেলেও কিডনি, ব্রেন ড্যামেজ হবে। তাই বিপি বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া দুটোই খারাপ।

রক্তচাপ কমে গেলে সঙ্গে সঙ্গে নুন চিনি ও লেবুর জল খেতে হবে। ওআরএস নয়। এ ক্ষেত্রে ওআরএস-এ কাজ হবে না। জলে একটু বেশি নুন দিলে তার প্রভাব হবে। তবে বেশি কাজ হবে নুন, লেবু ও গ্লুকোজ় খেলে। সল্ট ও গ্লুকোজ় একসঙ্গে শরীরে ঢোকে এবং বেরোয়, তাই গ্লুকোজ় মেশালে তার কার্যকারিতাও বেশি। লেবু না থাকলে শুধু নুন-চিনি মেশানো জল খেলেও হবে। তবে কিডনির সমস্যা থাকলে লেবু নয় এবং ডায়াবেটিস থাকলে চিনি খাওয়া চলবে না। প্রচণ্ড মাথা ঘুরলে আগে শুয়ে পড়তে হবে। দাঁড়িয়ে থাকলে ব্রেন যেহেতু উঁচুতে থাকে, তাই সেখানে রক্তের সরবরাহ সবচেয়ে আগে ব্যাহত হয়। আবার যখন ব্লাড প্রেশার একটু উঠবে, রোগী যেন স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরে যান। এর ফলে পালস রেট বাড়বে। এবং বিপিও স্বাভাবিক জায়গায় আসবে।

শরীরে যদি কোনও কারণে অ্যালবুমিন কমে যায়, তা হলে বিপিও কমে যায়। সেগুলো অবশ্য ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে ধরা পড়ে। এ ছাড়া রয়েছে পশ্চুরাল হাইপোটেনশন। ‘‘মানুষ যখন শুয়ে আছে, তখন এক রকম বিপি কিন্তু উঠে দাঁড়াতে গেলে হঠাৎ প্রেশার ফল করে মাথা ঘুরে পড়ে গেল। বসে থাকলে রক্তচাপ আলাদা। বিভিন্ন পশ্চারে অর্থাৎ দাঁড়িয়ে, শুয়ে বা বসে থাকার সময়ে আলাদা আলাদা বিপি পাওয়া যায়। এটি খুবই সাংঘাতিক। শরীরের কিছু আভ্যন্তরীণ ও কিছু ওষুধের কারণে এমনটা হতে পারে। যাঁদের পশ্চুরাল হাইপোটেনশন আছে, তাঁদের শুয়ে, চট করে বসে এবং চট করে দাঁড়িয়ে বিপি চেক করা উচিত,’’ বললেন ডা. মণ্ডল।

তাই যাঁরা নিয়মিত ব্লাড প্রেশারের ওষুধ খান, নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে রক্তচাপের ওঠানামা বুঝতে নিয়ম করে ব্লাড প্রেশার চেক করাবেন। সম্ভব হলে বাড়িতে রাখুন একটি বিপি পরিমাপের যন্ত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement