করোনা বিষয়ে ভুল তথ্যে বিভ্রান্ত এবং বিচলিত হবেন না। বরং করোনা নিয়ে যে প্রশ্নগুলি উঁকি দিচ্ছে, তার উত্তরগুলো জেনে নিন বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে
COVID-19

সচেতন থাকুন সুস্থ থাকুন

করোনার কোন বিষয়গুলো নিয়ে সচেতন হবেন আর কোন বিষয় এড়িয়ে চলবেন, সেটা বুঝতে হবে।

Advertisement

নবনীতা দত্ত

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২১ ০৫:১৩
Share:

করোনা নিয়ে যে প্রশ্নগুলি উঁকি দিচ্ছে মনে, সেই সব উত্তরও জেনে নেব বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে। 

করোনা সংক্রমণের সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভুল তথ্যের আদানপ্রদান। সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক ভুল তথ্যে বিভ্রান্ত ও উদ্বিগ্ন মানুষ। মনে রাখবেন, ভুল তথ্য অতিমারির মতোই সংক্রামক ও ভয়ঙ্কর। তাই করোনার কোন বিষয়গুলো নিয়ে সচেতন হবেন আর কোন বিষয় এড়িয়ে চলবেন, সেটা বুঝতে হবে। করোনা নিয়ে যে প্রশ্নগুলি উঁকি দিচ্ছে মনে, সেই সব উত্তরও জেনে নেব বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে।

Advertisement

করোনার উপসর্গ কি পাল্টাচ্ছে?

মেডিসিনের চিকিৎসক ডা. অরুণাংশু তালুকদার বললেন, ‘‘এ বার বেশির ভাগ রোগীরই স্বাদ, গন্ধ চলে যাচ্ছে। আগের বারের তুলনায় পেটের গণ্ডগোলও বেশি হচ্ছে। তার সঙ্গে চোখ লাল হচ্ছে, কনজাংটিভাইটিসের মতো। বরং সর্দি-কাশির উপসর্গ আগের বারের তুলনায় কম। আর গায়ে-হাতে ব্যথা আগের বারও ছিল, এ বারও আছে। জ্বর এক দিন মতো থাকছে। তার পরে কমে যাচ্ছে। তার সঙ্গে এ বার যেটা বেশি হচ্ছে, সেটা হল শ্বাসনালিতে ইনফেকশন। সেই কারণেই অক্সিজেনের ঘাটতি বেশি করে চোখে পড়ছে। শ্বাসকষ্ট কমাতে প্রোনিং পজ়িশন সহায়ক। এই পজ়িশনে ডিপ ব্রিদিং নেওয়া গেলে ৭-৮ শতাংশ অক্সিজেন স্যাচুরেশন বেড়ে যায়। তবে অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৪-এর নীচে নেমে গেলে আর দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।’’ অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভল মাপার জন্য হাতের কাছে অক্সিমিটার রাখতে পারেন।

Advertisement

কাপড়ের মাস্কে কি কাজ হয় না?

এন নাইন্টি ফাইভ মাস্কই সবচেয়ে কার্যকর। সার্জিকাল মাস্ক পরলে ডাবল লেয়ার করে পরতে হবে। আর মাস্কের উপরে ফেস শিল্ড পরতে পারলে সুরক্ষা সবচেয়ে বেশি পাবেন। কারণ মুখে মাস্ক থাকলেও অনেক সময়ে চোখে বা মুখের উপরিভাগে হাত চলে যায়। ফেসশিল্ড পরা থাকলে দেখবেন, মুখে হাত দেওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যাবে। কাজেকর্মে বাইরে বেরোলে মাস্কের উপরে ফেসশিল্ড পরার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

করোনা রোগীর আইসোলেশন পিরিয়ড কত দিন?

কোভিড রোগীকে সাধারণত দশ দিন হাসপাতালে রাখা হয়। বাড়িতে ফেরার পরে আরও ১০ দিন তাঁকে আলাদা থাকতে হবে। মোট ২১ দিন যদি তিনি আলাদা থাকেন, তা হলে পরিবারের অন্যান্যরা অনেকটাই সুরক্ষিত থাকবেন। তবে কোভিড রোগীর অবস্থা অনুযায়ী এ বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

বাড়িতেই করোনা সেরে গেলে কি কোনও টেস্ট দরকার?

করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা করে অনেকেই সেরে যাচ্ছেন। তাঁদের কি পরে কোনও ফলোআপ দরকার? এসএসকেএম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান তথা রাজ্যের কোভিড মনিটরিং দলের নোডাল অফিসার সৌমিত্র ঘোষ বললেন, ‘‘এর জন্য ভাইরাসের গতিপ্রকৃতি বুঝতে হবে। শরীরে ভাইরাস প্রবেশের পরে ইমিউন সিস্টেমকে বিপথে চালিত করছে। এতে সাইটোকাইন স্টর্ম তৈরি হচ্ছে, যার ফলে সমস্যা হচ্ছে। মাইল্ড বা মডারেট কোভিড রোগীদের পরে রিপিট টেস্টিংয়ের দরকার নেই। ১৭ থেকে ২১ দিন তাঁকে হোম আইসোলেশনে থাকতে হবে। এতেই সেফ জ়োন তৈরি করা যায়। কিন্তু যাঁরা সিভিয়ারলি অ্যাফেক্টেড বা যাঁদের কোনও রোগ রয়েছে অর্থাৎ ক্যানসার কিংবা এইচআইভির রোগী যদি হন, তাঁদের ফলোআপ দরকার। বিশেষ করে যাঁরা ইমিউনোসাপ্রেস্যান্ট ড্রাগ খান, তাঁদের ফলোআপ বা চেকআপ দরকার।’’ এতে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরে তাঁর শরীরে ইনফ্ল্যামেশন চলছে কি না বা শরীরের কোনও ক্ষতি হয়েছে কি না, তা বোঝা যায়।

গর্ভাবস্থায় প্রতিষেধক কি নেওয়া যাবে?

অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের প্রতিষেধক নেওয়া কি নিরাপদ? প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। এক সাংবাদিক বৈঠকে আমেরিকার ‘সেন্টারস ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’(সিডিসি)-এর ডিরেক্টর রোচেল ওয়ালেন্সকি বলেন, ‘‘প্রতিষেধক নিয়ে পরীক্ষা চলছে। কোথাও চিন্তার কিছু দেখা যায়নি। সাত থেকে ন’মাসের অন্তঃসত্ত্বা, এমন প্রায় ৩৫,০০০ মহিলার উপরে পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। প্রতিষেধক নিয়ে মা কিংবা সন্তানের কোনও ক্ষতি হয়নি।’’ তবে গর্ভাবস্থায় এই ভ্যাকসিন নেওয়ার আগে প্রত্যেক অন্তঃসত্ত্বাকে তাঁর শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী নিজের চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যে সব হবু মায়ের টিকাকরণ হয়নি, তাঁদের খুব সাবধানে চলতে হবে। পরিবারের অন্যদের থেকে দূরে থাকুন আর অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে ও হাত স্যানিটাইজ় করতে হবে।

ওজন বেশি হলে করোনায় আক্রান্তদের ঝুঁকি কি বেশি?

উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস থাকলে যেমন হাই রিস্ক ক্যাটিগরির মধ্যে ধরা হয়, এ ক্ষেত্রেও তাই। ‘‘ওজন বেশি হলে ঝুঁকিও বেশি। এই ভাইরাসের আক্রমণে তাঁদের ফুসফুস যদি ২০ শতাংশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়, তাঁদের শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়ায় সমস্যা দেখা দেয়। ওবিস রোগীদের প্রোনিং পজ়িশনিংও ঠিক মতো করা যায় না। ফলে এঁদের মৃত্যুহার অনেক বেশি হয়,’’ বললেন সৌমিত্র ঘোষ।

কর্পূরে কি শ্বাসকষ্ট কমে?

অতিমারির সময়ে এই সব ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে চিকিৎসার প্রাথমিক যে গোল্ডেন পিরিয়ড, সেটা অনেক সময়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে শ্বাসকষ্ট হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি বলে জানালেন ডা. সৌমিত্র ঘোষ।

যা যা করবেন না

অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে করোনা না হলেও প্যারাসিটামল এবং ভিটামিন সি ওষুধ কিনে বাড়িতে মজুত করছেন। অক্সিজেন মজুত করার ঘটনাও বিরল নয়। এতে যে রোগীর সত্যিই ওষুধের দরকার, তিনি কিন্তু ওষুধ, অক্সিজেন পাচ্ছেন না বা পেলেও অনেকটা সময় নষ্ট হচ্ছে। এখন সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে প্রত্যেক নাগরিক যেন নিজ দায়িত্ব পালন করেন, আর্জি চিকিৎসকদের। মাস্ক পরুন, দূরত্ববিধি মেনে চলুন। আর অহেতুক ওষুধ বা করোনা রোগীর চিকিৎসার প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে মজুত করে বাজারে কৃত্রিম অভাব তৈরি করবেন না।
সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও তথ্য পেলে তার সত্যতা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না। এই আপৎকালীন অবস্থায় ভুল তথ্য কিন্তু মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে।

আশার কথা

ডা. অরুণাংশু তালুকদার বলছেন, ‘‘মনে রাখবেন, করোনায় আক্রান্ত ৯০ থেকে ৯২ শতাংশ রোগীই কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে বাড়িতে থেকেই সেরে যাচ্ছেন। সংখ্যাটা কিন্তু নেহাত কম নয়।’’ তাই অহেতুক প্যানিক করবেন না। যাঁদের সত্যিই চিকিৎসার দরকার, তাঁদের সুযোগ করে দিন। আর সময়মতো প্রত্যেকে টিকা নিয়ে নিন।
১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সিদের টিকাকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তার জন্য নিজের নাম নথিভুক্ত করুন। চিকিৎসকদের মতে, প্রতিষেধকই কিন্তু মৃত্যুহার কমাতে পারে।

মডেল: পিয়ালি দাস, ঊষসী রায়; ছবি: শুভদীপ সামন্ত, মেকআপ: সুবীর মণ্ডল: লোকেশন: ক্লাব ভর্দে ভিস্তা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement