একাধিক পোশাকের লেয়ার্ড লুক কিংবা মিক্স অ্যান্ড ম্যাচের রংমিলান্তি আপনার সাজকে দেয় ভিন্ন মাত্রা। ফ্যাশনে জ্যাকেটের ভূমিকা অবধি মূলত পুরুষদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। পরের দিকে পশ্চিমি পোশাকের সঙ্গে মহিলাদের জ্যাকেট পরার চল শুরু হয়। কিন্তু স্কার্ট-টপ, চুড়িদার, ধোতি প্যান্টস থেকে শুরু করে শাড়ির সঙ্গেও নানা ধরনের জ্যাকেট দিব্যি স্টাইলিশ দেখায়। সামার জ্যাকেটের আদলে তৈরি এই জ্যাকেটে কলেজ থেকে অফিসপাড়া, বিয়েবাড়ি থেকে সিনেমা হল... চলতে পারে সর্বত্র।
জ্যাকেট প্রসঙ্গ এলে ফ্যাশন ডিজ়াইনার অভিষেক দত্তের নাম প্রথমেই আসে। তাঁর কথায়, “আরামের সঙ্গে কোনও রকম সমঝোতা না করে সহজেই স্টেটমেন্ট তৈরি করতে পারে একটা জ্যাকেটা।”
হরেক ফ্যাব্রিক ও ডিজ়াইন
সাধারণ সামার জ্যাকেটের মধ্যে থাকে ফর্মাল লুক যা অফিসের পোশাকের সঙ্গে মানানসই। ব্লেজ়ারের মতোই তার কাট। অভিষেক বলছেন, “সামার জ্যাকেট সাধারণত সাদা হয়। তবে আজকাল সাদার উপর ফ্লোরাল প্রিন্টও হয়।” বিভিন্ন পার্টি বা অনুষ্ঠান উপলক্ষে সুতি ছাড়াও শিফন বা জর্জেটের জ্যাকেট বেছে নিতে পারেন, যাকে কেপ বলে। জ্যাকেটে নানা ধরনের ফ্যাব্রিক নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে এখন। দু’টি বা তিনটি ফ্যাব্রিক মিশিয়ে লেয়ার্ড ডিজ়াইন করা হয়ে থাকে। এর পাশাপাশি এথনিক পোশাকের উপর ব্রোকেড, জামদানি, সিল্ক, খাদি ইত্যাদির তৈরি জ্যাকেটের চাহিদাও বাড়ছে। পোশাকশিল্পী পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “যাঁরা ওড়না বা স্টোল ব্যবহার করতে পছন্দ করেন না, জামদানির ওভারলেয়ার্ড জনপ্রিয়তা পাচ্ছে তাঁদের মধ্যেই।” অ্যাপ্লিক কিংবা চিকনের কাজ করা জ্যাকেটও বহুল প্রচলিত।
জ্যাকেটের স্টাইলে সাবেক ছোঁয়া রাখতে টাই অ্যান্ড ডাই, কলমকারি, আজরখ, পিপলি মোটিফের প্রিন্ট করা জ্যাকেট বেছে নিতে পারেন। কথা প্রসঙ্গে অভিষেক দত্ত জানান, “এথনিক পোশাককে আরও আকর্ষক করে তুলতে পারে চান্দেরি কাপড়ের তৈরি জ্যাকেট।” সুতি ও লিনেনের জ্যাকেটের পিছনের দিকে লেস বা নেট যোগ করা হয়ে থাকে অনেক সময়ে। ক্লাসিক স্টাইল স্টেটমেন্ট তৈরি করতে এর জুরি মেলা ভার। এ ধরনের জ্যাকেট এক রঙের পাশাপাশি ফ্লোরাল, জিয়োমেট্রিক হয়ে থাকে। কখনও জ্যাকেটে নতুনত্ব আনতে নীচের অংশে থাকে অ্যাসিমেট্রিক কাট। কিছু জ্যাকেটে আবার কোমরের কাছে গ্যাদারিং করা থাকে বা কখনও বেল্ট ব্যবহার করা হয়। এথনিক লুক দিতে অনেক সময়েই প্রিন্ট বা গামছা কাপড়ের প্যাচওয়ার্কের কাজ করা হয় জ্যাকেটের উপর। পারমিতা বললেন, “এ ধরনের জ্যাকেট বেশির ভাগ সময়েই রিভার্সেবল তৈরি করি। এ ক্ষেত্রে এক দিকে প্যাচওয়ার্ক করলে, অন্য দিকটা হয় প্রিন্টেড।” প্যাচওয়ার্কের জ্যাকেটকে বলা হয় বোরো জ্যাকেট। গ্যাবার্ডিনের একরঙা জ্যাকেটে সিকুইনের নকশা করা চমৎকার জ্যাকেটও আজকাল বিভিন্ন ব্র্যান্ড রাখছে। যে কোনও পার্টিতে ইন্দো ওয়েস্টার্ন পোশাকের সঙ্গে এ ধরনের জ্যাকেট আলাদা লুক এনে দেয়।
জ্যাকেট মানেই কেবল সামনে চেন নয়। তাতে থাকতে পারে একটা বা দুটো বোতামও, আবার নাও থাকতে পারে। বদল এসেছে হাতার ধরনেও। হাফ স্লিভ, ফুল স্লিভ, স্লিভলেসের পাশাপাশি চাহিদা রয়েছে থ্রি কোয়ার্টার হাতার। হাতার কাটে বেল স্লিভ খুবই ফ্যাশনেবল। জ্যাকেটের নেকলাইন এবং কলারেও থাকছে বৈচিত্র। টার্টল, সোয়ান বা বোটনেকের পাশাপাশি লিপল কলার, চাইনিজ় কলার কিংবা শাল কলারও স্টাইলিশ লাগে।
ঝুলের রকমফের
মেয়েদের জ্যাকেট সাধারণত তিন ধরনের ঝুল হয়— শর্ট, মিডিয়াম ও লং। বিশেষ করে পশ্চিমি পোশাকের সঙ্গে শর্ট জ্যাকেটই বেশি মানায়। অন্য দিকে দেশজ পোশাকের সঙ্গে মিডিয়াম ও লং জ্যাকেট মানানসই। হালফ্যাশনে বেশির ভাগ জ্যাকেটেই কোমর পেরিয়ে হাঁটু পর্যন্ত ঝুল রাখা হচ্ছে। এ ধরনের জ্যাকেট বানানো সোজা। নিজের পছন্দের কাপড় কিনে বানিয়েও নিতে পারেন। লম্বা গাউন বা ম্যাক্সি ড্রেসের সঙ্গে কোমর অবধি উচ্চতার সামনে খোলা জ্যাকেট পরতে পারেন। কোমরে থাকুক সুন্দর বেল্ট। কামিজ বা ম্যাক্সি ড্রেসের সঙ্গে অবশ্য শ্রাগের আদলের জ্যাকেটও পরতে পারেন। পনেরো থেকে ষোলো ইঞ্চি অর্থাৎ বাস্ট লাইন পর্যন্ত ঝুলের হয় এই জ্যাকেটগুলি। পাশাপাশি বেছে নিতে পারেন বোলেরো জ্যাকেট। এ ধরনের জ্যাকেটের ঝুল কোমর অবধিই হয়ে থাকে, শাড়ির সঙ্গে পরলে জ্যাকেট আকর্ষক লাগে।
খেয়াল রাখবেন
• পোশাকের রঙের সঙ্গে কনট্রাস্ট করে জ্যাকেট পরুন। তবে এক রঙের জ্যাকেট পরলে অবশ্যই ভিতরের পোশাকটি প্রিন্টেড পরতে হবে। আর প্রিন্টেড জ্যাকেট পরলে তার মধ্যে থেকে একরঙা ইনার বেছে নিন।
• ঘেরওয়ালা পোশাকের সঙ্গে পরতে হবে স্ট্রাকচারড জ্যাকেট। যদি পোশাক ফিটিংস হয়, তা হলে ঢিলেঢালা জ্যাকেট পরতেই পারেন।
• শাড়ির সঙ্গে জ্যাকেট পরলে শাড়ি আগে প্লিট করে নেবেন।
পোশাক ও ছবি সৌজন্য: অভিষেক দত্ত, পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়