Cheating in Relationship

হৃদয়ের ইমোজি পাঠান? স্ত্রীকে লুকিয়ে বান্ধবীর ভিডিয়ো দেখেন? আপনি কতখানি ‘বিশ্বাসঘাতক’?

আপাত দৃষ্টিতে তুচ্ছ, নগণ্য, ছোট ঘটনা। কিন্তু সব কিছু ঘটছে আপনার সঙ্গীর নজর এড়িয়ে। অনেকেই এই আচরণগুলিকে 'বিশ্বাসঘাতকতা' বলে না-ও মনে করতে পারেন, কারণ এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ কোনও ঘনিষ্ঠতা জড়িয়ে নেই। কিন্তু এর কারণেই আপনার ঘর ভাঙতে পারে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৫ ১৩:৪৪
Share:
What is micro cheating which is different from physical and emotional attachment

আপনি কি আপনার সঙ্গীর সঙ্গে প্রতারণা করছেন? ছবি: সংগৃহীত।

স্ত্রীকে লুকিয়ে প্রাক্তনের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলেন? সমাজমাধ্যমে সেই বান্ধবীর ছবি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়েন? অফিসের সহকর্মীর রিল দেখে লাইক করার অভ্যাসও রয়েছে? আবার টুকটাক ইমোজি না পাঠালে মন আনচান করে? আপনি কি জানেন, আপনিও ‘বিশ্বাসঘাতক’দের দলে পড়ছেন।

Advertisement

তর্ক উঠতে পারে, শারীরিক সম্পর্ক তো হয়নি, অথবা প্রেমের সম্পর্ক তো নয়, তবে বিশ্বাসভঙ্গের কথা উঠছে কেন? এই ধরনের আচরণের সঙ্গে শারীরিক এবং মানসিক প্রতারণার পার্থক্য রয়েছে বটে, কিন্তু এগুলিকেও এক ধরনের প্রতারণাই বলা হচ্ছে।

আপাতদৃষ্টিতে তুচ্ছ, নগণ্য, ছোট ঘটনা। কিন্তু সব কিছু ঘটছে স্বামী/ স্ত্রী বা সঙ্গীর আড়ালে। অনেকেই এই আচরণগুলিকে বিশ্বাসঘাতকতা বলে না-ও মনে করতে পারেন, কারণ এর সঙ্গে যৌনতা জড়িয়ে নেই। কিন্তু জানেন কি, এর কারণেই আপনার ঘর ভাঙতে পারে? আপনি পুরুষ হোন বা নারী, সঙ্গীর বিশ্বাস ভাঙছেন সচেতন ভাবে, বা অসচেতন ভাবেই। এই আচরণগুলি কিন্তু নতুন নয়, কিন্তু সম্প্রতি এটি নিয়েই কথাবার্তা চলছে দেশেবিদেশে। মনোবিদেরা এগুলিকেই ছোটখাটো ‘প্রতারণা’ হিসেবে গণ্য করছেন। পশ্চিমী বিশ্ব এটিকে বলছে, ‘মাইক্রো-চিটিং’। এই বিষয়ে বিশদ জানাচ্ছেন ফ্লোরিডার মনোবিদ লিডিয়া আন্তোনাতোস এবং ওহায়োর স্নায়ুরোগ চিকিৎসক হেইডি মোয়াওয়াড।

Advertisement

কোন কোন আচরণকে এই ধরনের প্রতারণার অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হতে পারে। বিশ্বাসঘাতকতার সংজ্ঞা এক এক জনের কাছে এক এক রকম। কিন্তু আপনি কি আপনার এই সমস্ত কাণ্ড সঙ্গীর কাছে গোপন করছেন? তা হলেই কিন্তু আপনিও বিশ্বাসঘাতক। মনোবিদেরা কয়েকটি উদাহরণের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেছেন।

আপাতদৃষ্টিতে তুচ্ছ হলেও মনোবিদেরা এগুলিকেই ছোটখাটো ‘প্রতারণা’ হিসেবে গণ্য করছেন। ছবি: সংগৃহীত।

ক্ষুদ্র, ছোটখাটো এই প্রতারণার কয়েকটি উদাহরণ

১. প্রাক্তন বা অন্য কোনও ব্যক্তিকে রোম্যান্টিক মেসেজ পাঠানো।

২. সমাজমাধ্যমে বিশেষ কারও ছবি বা ভিডিয়ো দেখে ‘লাইক’ করা।

৩. আপনি যে আপনার সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কে রয়েছেন, সেটির ব্যাপারে সমাজমাধ্যমে মিথ্যা বলা, বা লুকিয়ে রাখা।

৪. হাতের পাঁচ হিসেবে অন্য কাউকে বেছে নিয়ে কথাবার্তা বলা (বর্তমান সঙ্গীকে গোপনে করে)। আর তাই ডেটিং প্রোফাইল সক্রিয় রাখা।

৫. সহকর্মীকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য সেজেগুজে অফিস যাওয়া।

৬. নিজের যৌনজীবন সম্পর্কে বাইরের কোনও মানুষের সঙ্গে কথা বলা, নগ্ন ছবি পাঠানো অথবা যৌন উস্কানিমূলক কথাবার্তা চালানো।

৭. আপনাকে পছন্দ করেন, এমন কারও সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা।

৮. সঙ্গী ছাড়া অন্য কাউকে মাঝেমধ্যেই লুকিয়ে আলিঙ্গন করা।

৯. বিশেষ কাউকে হৃদয়ের ইমোজি পাঠানো।

১০. নিজের সঙ্গীর সম্পর্কে অন্যের কাছে অভিযোগ করার ঘটনাও এই প্রবণতারই একটি উদাহরণ।

এমনই আরও ছোটখাটো পরিস্থিতির কথা বলা যেতে পারে এখানে।

আপনার সঙ্গী আপনার বিশ্বাস ভাঙছেন কি না, কী ভাবে বুঝবেন? ছবি: সংগৃহীত।

শরীরী প্রতারণার সঙ্গে পার্থক্য কোথায়?

অন্য ব্যক্তির সঙ্গে যৌনসম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে, তা মূল প্রতারণার আওতায় পড়ে। কিন্তু এই ধরনের ক্ষুদ্র প্রতারণার ক্ষেত্রে খুব সহজে এই আচরণগুলিকে শনাক্ত করা যায় না। হাতেনাতে প্রমাণ করার মতো কিছুই ঘটছে না। এ ক্ষেত্রে রোম্যান্টিক অথবা যৌন উস্কানিমূলক কথাবার্তা চালানোই আসল। সেটিই ‘মাইক্রো’ প্রতারণার আওতায় পড়ে।

মানসিক প্রতারণার সঙ্গে পার্থক্য কোথায়?

আপনি যদি অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গে রোম্যান্টিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন (ধরে নেওয়া যাক, যৌনসম্পর্ক হয়নি), সেটিকে ‘মানসিক প্রতারণা’ হিসাবে সহজেই চিহ্নিত করা যায়। কিন্তু এখানেই ক্ষুদ্র প্রতারণা এ সবের থেকে আলাদা। এখানে আলোচ্য প্রতারণায় কোনও সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে না আপাত ভাবে। কিন্তু কথাবার্তা, টুকটাক রোম্যান্টিক আলাপ-আলোচনা চলতেই থাকছে। আপনি ভাবছেন, এতে আর ক্ষতি কী? কিন্তু মানসিক প্রতারণা এবং শারীরিক প্রতারণার মতো মূল প্রতারণার আওতায় পড়ার আগের ধাপই হল এই ‘তুচ্ছ’ কাজকর্ম। এ ক্ষেত্রেও প্রমাণ করার উপায় নেই।

উল্টো দিকে আপনার সঙ্গী আপনার গোপনে এই ধরনের আচরণ করছেন কি না, কী ভাবে বুঝবেন?

মনোবিদেরা কয়েকটি প্রবণতার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে গিয়ে কিছু উদাহরণ দিয়েছেন। যেগুলির মধ্যে নিজেকে কয়েকটি প্রশ্ন করে দেখলেই উত্তর পেয়ে যাবেন।

১. আপনার সঙ্গী কি নিজের ফোনের পাসওয়ার্ড গোপন রেখেছেন আপনার কাছে?

২. আপনার সঙ্গী কি নিজের ফোনটিকে উল্টো করে রাখেন সব সময়? যাতে মেসেজ বা ফোন এলে চট করে কারও চোখে না পড়ে?

৩. ফোন এলে আপনার সামনে থেকে চলে গিয়ে ফিসফিস করে কথা বলেন কি তিনি?

৪. ফোন থেকে মেসেজ বা চ্যাট মুছে দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে কি আপনার সঙ্গীর?

এই ধরনের ঘটনা বার বার ঘটলেই সচেতন হয়ে যেতে হবে।

উপায় কী?

ক্যালিফোর্নিয়ার সাউথ প্যাসাডিনার মনোবিদ মলি বুরেটস বলছেন, ‘‘সম্পর্কে অতৃপ্ত বোধ করলে, অথবা নিজের অপূর্ণ চাহিদাগুলি মেটানোর জন্যই হয়তো অসচেতন ভাবে কেউ কেউ এমন ধরনের কাজ করে থাকেন। কিন্তু সেটি এক প্রকার প্রতারণাই বটে। কোনটি উচিত, আর কোনটি অনুচিত, সে বিষয়ে আপনি এবং আপনার সঙ্গী একমত কি না জানতে হবে। প্রেমের সম্পর্ককে কে কী ভাবে দেখছেন, কার কী প্রত্যাশা, সেই সব নিয়ে আলোচনা করা উচিত দু’টি মানুষের। এমন অপ্রীতিকর ঘটনা চোখে পড়লে সঙ্গীর সঙ্গে কথা বলতে হবে। বিবাদে না জড়িয়ে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গিকে একে অপরের সামনে তুলে ধরতে হবে। নীরব থাকলেও সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement