India vs Pakistan

রুশ-ইজ়রায়েলি বর্মে আকাশ ঢেকেছে ভারত, ‘ঢিলেঢালা’ চিনা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় পা কাঁপছে পাকিস্তানের

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতের আবহে দুই দেশের ফৌজের হাতে থাকা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সক্ষমতা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। ইসলামাবাদ এ ব্যাপারে পুরোপুরি চিনা হাতিয়ারের উপর নির্ভরশীল। রাশিয়া ও ইজ়রায়েলের পাশাপাশি নয়াদিল্লির কাছে আছে দেশীয় প্রযুক্তির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও লেজ়ার অস্ত্র।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৫ ১৫:০৪
Share:
০১ ২০
India’s air defence system far ahead than Pakistan, comparison starts after Pahalgam incident

পহেলগাঁও গণহত্যার বদলার দায়িত্ব পুরোপুরি তিন সেনার উপর ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভারতীয় ফৌজ প্রত্যাঘাতের সবুজ সঙ্কেত পেতেই যুদ্ধের আতঙ্কে কাঁপছে পাকিস্তান। পুরোদস্তুর লড়াই বাধলে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র আটকানোর আদৌ ক্ষমতা রয়েছে ইসলামাবাদের? পাক বায়ুসেনার হামলাই বা কী ভাবে ঠেকাবে নয়াদিল্লি? উত্তেজনার পারদ চড়তেই চলছে এই সমস্ত প্রশ্নের চুলচেরা বিশ্লেষণ।

০২ ২০
India’s air defence system far ahead than Pakistan, comparison starts after Pahalgam incident

ক্ষেপণাস্ত্র বা বিমানহামলা আটকানোর জন্য ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর হাতে রয়েছে ছ’টি করে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম)। কিন্তু, তার পরও এ ব্যাপারে নয়াদিল্লিকে কয়েক গুণ এগিয়ে রাখছেন বিশ্বের তাবড় প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা। তাঁদের দাবি, নয়াদিল্লির কবচ ভেদ করা শুধু কঠিনই নয়, একরকম দুঃসাধ্য। এর নেপথ্যে একাধিক কারণের কথা বলেছেন তাঁরা।

Advertisement
০৩ ২০
India’s air defence system far ahead than Pakistan, comparison starts after Pahalgam incident

ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মূল হাতিয়ার হল রাশিয়ার তৈরি এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ। সীমান্তে ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকাকে অভেদ্য বর্মে ঢেকে ফেলার ক্ষমতা রয়েছে মস্কোর এই অস্ত্রের। শত্রুর ছোড়া ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বা যুদ্ধবিমানকে মাঝ-আকাশেই ধ্বংস করতে পারে এস-৪০০। শুধু তা-ই নয়, এর ‘অ্যাক্টিভ ইলেকট্রনিক্যালি স্ক্যানড অ্যারে’ বা এইএসএ রাডারের সাহায্যে একসঙ্গে ৩০০ টার্গেট চিহ্নিত করা যায়।

০৪ ২০

এস-৪০০ ট্রায়াম্ফে স্বল্প, মাঝারি এবং দূরপাল্লার মিলিয়ে মোট তিন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। শব্দের চেয়ে ১৪ গুণ গতিতে (পড়ুন ম্যাক ১৪) ছুটতে পারে সেগুলি। ২০২১ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত নয়াদিল্লিকে মোট তিনটি এস-৪০০ বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহ করেছে মস্কো। চলতি বছরে এই হাতিয়ারের আরও একটি ব্যাচ ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে পাওয়ার কথা রয়েছে। সেটি চলে এলে আকাশেই দুর্ভেদ্য দুর্গ তৈরি করতে সক্ষম হবে এ দেশের বিমানবাহিনী।

০৫ ২০

অন্য দিকে, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঠেকাতে পাক ফৌজের হাতে রয়েছে চিনের তৈরি এইচকিউ-৯পি/এইচকিউ-৯বিই। ১০০ থেকে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত সুরক্ষা দিতে পারে এই বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। বেজিঙের এই হাতিয়ারেও রয়েছে এইএসএ রাডার। পাশাপাশি, এস-৪০০র মতো এতেও ১৪ ম্যাক গতির ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যা দিয়ে মাঝ-আকাশে লড়াকু জেট বা ক্ষেপণাস্ত্রকে ধ্বংস করা সম্ভব।

০৬ ২০

সূত্রের খবর, মূলত লাহোর এবং রাজধানী ইসলামাবাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এইচকিউ-৯পি/এইচকিউ-৯বিই মোতায়েন করেছে পাক ফৌজ। কিন্তু, ২০২২ সালের ৯ মার্চ ভুলবশত ভারত থেকে ছোড়া ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র লাহোর সংলগ্ন মিয়া চন্নু এলাকায় আছড়ে পড়ে। ক্ষেপণাস্ত্রটিকে চিহ্নিত পর্যন্ত করতে পারেনি চিনের তৈরি বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। অন্য দিকে, গত তিন বছর ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার আকাশকে সুরক্ষা দিয়ে নিজের জাত চিনিয়েছে এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ।

০৭ ২০

এস-৪০০র পর অবশ্যই বলতে হবে বারাক-৮ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার কথা। ইজ়রায়েলের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এটি তৈরি করেছে নয়াদিল্লি। ৭০ থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় সুরক্ষা দিতে সক্ষম এই হাতিয়ার। ভারতীয় বায়ুসেনার পাশাপাশি নৌবাহিনীও এটিকে ব্যবহার করে থাকে। বারাক-৮র ক্ষেপণাস্ত্রগুলি সর্বোচ্চ দুই ম্যাক গতিতে ছুটতে পারে। মূলত পাকিস্তানের বাবর ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্রের কথা মাথায় রেখে এটিকে তৈরি করা হয়েছে।

০৮ ২০

ভারত-রুশ যৌথ উদ্যোগে তৈরি ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্রকে আটকাতে চিনের এলওয়াই-৮০/এলওয়াই-৮০ই নামের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উপর ভরসা রেখেছেন রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তারা। ৪০ থেকে ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় সুরক্ষা দিতে পারে এই হাতিয়ার। এইচকিউ-৯পি/এইচকিউ-৯বিইর গতিবেগ ২.৫ ম্যাক। সেখানে শব্দের তিন গুণের চেয়ে বেশি গতিতে ছুটতে পারে ব্রহ্মোস। ফলে এর কার্যকারিতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

০৯ ২০

পাক বিমানবাহিনীর বহরে রয়েছে মূলত দু’টি লড়াকু জেট। সেগুলি হল, যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৬ এবং চিনের জেএফ-১৭। এর মধ্যে আমেরিকার যুদ্ধবিমানটি ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারবে না ইসলামাবাদ। শুধুমাত্র আক্রমণ ঠেকানোর জন্য এই লড়াকু জেট ওড়ানোর অধিকার রয়েছে রাওয়ালপিন্ডির সেনা অফিসারদের। ফলে যুদ্ধ বাধলে বেজিঙের জেএফ-১৭র উপর পুরোপুরি ভরসা করতে হবে পাক বিমানবাহিনীকে।

১০ ২০

সাড়ে চার প্রজন্মের যুদ্ধবিমান জেএফ-১৭কে মাঝ-আকাশে ধ্বংস করতে ভারতের হাতে রয়েছে দেশীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিওর তৈরি আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। ৭০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁত নিশানায় হামলা করার ক্ষমতা রয়েছে এই হাতিয়ারের। ২.৫ ম্যাক গতিতে ছুটতে পারে ডিআরডিওর আকাশ। মধ্য এশিয়ার দেশ আর্মেনিয়া ইতিমধ্যেই ভারতের থেকে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাটিকে কিনেছে।

১১ ২০

ভারতীয় বায়ুসেনার বহরে রয়েছে ফরাসি সংস্থা দাসোঁ অ্যাভিয়েশনের তৈরি রাফাল যুদ্ধবিমান। এই লড়াকু জেট স্কাল্প নামের একটি আকাশ থেকে মাটিতে আক্রমণ শানানোর ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। সংশ্লিষ্ট ক্ষেপণাস্ত্রটির প্রহার সামলাতে পাক ফৌজের ভরসা চিনের তৈরি এফএম-৯০। মাত্র ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকার সুরক্ষা প্রদান করতে পারে এটি। উপরন্তু, যুদ্ধবিমানকে ধ্বংস করার ক্ষমতা এর নেই।

১২ ২০

সীমান্তে ১৫ থেকে ৩৫ কিলোমিটার এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইজ়রায়েলি স্পাইডার নামের হাতিয়ার ব্যবহার করে ভারতীয় সেনা। এতে রয়েছে পাইথন-৫ এবং ডার্বি ক্ষেপণাস্ত্র। ফ্রান্সের তৈরি ক্রোটালে নামের অনুরূপ একটি ব্যবস্থা রয়েছে পাক ফৌজের হাতেও। তবে সেটি বেশ পুরনো। ১৯৯০ সাল থেকে সংশ্লিষ্ট হাতিয়ারটি ব্যবহার করছে তাঁরা।

১৩ ২০

এ ছাড়া ডিআরডিওর তৈরি কুইক রিয়্যাকশান সার্ফেস টু এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র এবং শর্ট রেঞ্জ সার্ফেস টু এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে ভারতীয় ফৌজের হাতে। প্রথমটি নিয়ন্ত্রণরেখা (লাইন অফ কন্ট্রোল বা এলওসি) সংলগ্ন এলাকায় মোতায়েন রেখেছে নয়াদিল্লি। দ্বিতীয়টি ব্যবহার করে ভারতীয় নৌসেনা। আইএনএস বিক্রান্তের মতো বিমানবাহী রণতরীর নিরাপত্তায় সেটি ব্যবহার হয় বলে জানা গিয়েছে।

১৪ ২০

অন্য দিকে, আমেরিকার তৈরি এমপিকিউ-৬৪ সেন্টিনাল রেডার রয়েছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর কাছে। স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র চিহ্নিত করার ক্ষমতা রয়েছে এই ব্যবস্থার। তবে সেগুলিকে মাঝ-আকাশে ধ্বংস করতে পারে না এই রাডার।

১৫ ২০

চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল অত্যাধুনিক লেজ়ার হাতিয়ারের সফল পরীক্ষা চালায় ডিআরডিও। অস্ত্রটির পোশাকি নাম ‘এমকে-টু(এ) লেজ়ার’। এটি প্রকৃতপক্ষে একটি ‘ডিরেক্ট এনার্জি ওয়েপন সিস্টেম’ বা ডিইডব্লিউ। বর্তমান বিশ্বের হাতেগোনা কয়েকটি দেশের কাছে আছে এই হাতিয়ার।

১৬ ২০

‘এমকে-টু(এ)’র পরীক্ষায় সাফল্য পাওয়ার পর নতুন প্রজন্মের হাতিয়ারটিকে নিয়ে বিবৃতি দেয় ডিআরডিও। প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থার তরফে বলা হয়েছে, ‘‘ভারত এ বার উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন লেজ়ার অস্ত্র ব্যবস্থার অধিকারী দেশগুলির ক্লাবে ঢুকে পড়ল।’’ হাতিয়ারটি একসঙ্গে গুচ্ছ গুচ্ছ ড্রোন হামলাকে রুখে দিতে পারবে বলে দাবি করেছে ডিআরডিও। পাকিস্তানের কাছে এই ধরনের কোনও অস্ত্র নেই।

১৭ ২০

পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর থেকে ভারত রুদ্ররূপ ধরতেই বিষয়টি নিয়ে সুর চড়াচ্ছে পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্ব। পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটির একগুচ্ছ নেতা-মন্ত্রী তো পরমাণু আক্রমণের হুমকি পর্যন্ত দিয়েছেন। যদিও তাকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না কেন্দ্রের মোদী সরকার।

১৮ ২০

২৯ এপ্রিল গভীর রাতে (স্থানীয় সময় অনুসারে রাত ২টো) আপৎকালীন সাংবাদিক বৈঠক করেন পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার। তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা-তথ্য পেয়েছি যে, ভারত আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে সামরিক পদক্ষেপ করার পরিকল্পনা করছে।” তাঁর ওই মন্তব্যের পর আরও চড়েছে উত্তেজনার পারদ।

১৯ ২০

এ দিকে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফের সঙ্গে কথা বলেছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার নিন্দা জানানোয় সমাজমাধ্যমে তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জয়শঙ্কর। অন্য দিকে, ভারতের অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করে গুতেরেসের কাছে নয়াদিল্লির নামে নালিশ ঠুকেছেন শাহবাজ়।

২০ ২০

এ হেন সংঘাতের আবহে যুদ্ধের উস্কানি কিন্তু সমানে দিয়ে চলেছে ইসলামাবাদ। জম্মু ও কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন অব্যাহত রেখেছে পাক সেনা। পহেলগাঁও কাণ্ডের পর টানা ছ’দিন সেখানে গুলিবর্ষণ করেছে তাঁরা। পাল্টা জবাব দিচ্ছে ভারতীয় ফৌজ। এই পরিস্থিতি পুরোদস্তুর লড়াইয়ে বদলে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement