তৃণা: ঝিলিক সবে ক্লাস ফোর। এখনই পিরিয়ডস শুরু হয়ে গিয়েছে!
সুদেষ্ণা: আমার মেয়েরও পিরিয়ডস শুরু হয়েছে ক্লাস ফোরেই।
তৃণা: এখন সব কিছুই বড্ড তাড়াতাড়ি হচ্ছে। তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যাচ্ছে ওরা।
সুদেষ্ণা: যা বলেছিস। আমার তো পিরিয়ডস শুরু হয়েছিল ক্লাস সিক্সে...
এহেন চিন্তা শুধু তৃণা বা সুদেষ্ণার নয়, এ প্রজন্মের অনেক মহিলাই বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। এটা বোধহয় অস্বীকার করা যায় না, এখন অধিকাংশ বাচ্চাদের যে বয়সে পিউবার্টি শুরু হচ্ছে, বছর কুড়ি আগে তা শুরু হত আরও কিছুটা দেরিতে। তার মানে কি বয়ঃসন্ধি এগিয়ে এসেছে?
কাকে বলে আর্লি পিউবার্টি?
তার জন্য জানা প্রয়োজন, কোন বয়সে বয়ঃসন্ধির সূচনা হলে তাকে বলব আর্লি পিউবার্টি। অ্যাডভান্সড ল্যাপরোস্কোপিক সার্জন অ্যান্ড ইনফার্টিলিটি স্পেশ্যালিস্ট ডা. অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘মেয়েদের আট বছর বয়সের আগে যদি ব্রেস্ট ডেভেলপমেন্ট হয় বা পিউবিক হেয়ার জন্মায় এবং ছেলেদের ন’বছরের আগে যদি টেস্টিকুলার এনলার্জমেন্ট, পেনাইল এনলার্জমেন্ট বা পিউবিক হেয়ার জন্মায়, তাকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হয় আর্লি পিউবার্টি বা প্রিকশাস পিউবার্টি।’’
বয়ঃসন্ধির লক্ষণ
পিউবার্টির পদচারণার লক্ষণ অনুভূত হয় সেকেন্ডারি সেক্সুয়াল ক্যারেক্টারিস্টিকসের উপস্থিতির মাধ্যমে অর্থাৎ মেয়েদের প্রথমে ব্রেস্ট বাড দেখা দেবে ও ক্রমে ব্রেস্ট ডেভেলপমেন্ট হবে। তার পরে পিউবিক হেয়ার ও আর্মপিট হেয়ার জন্মাবে। ছেলেদের ক্ষেত্রে টেস্টিকুলার ও পেনাইল এনলার্জমেন্ট হবে। এই সব লক্ষণ দেখা দেওয়ার বছর দুয়েকের মধ্যে মেয়েদের পিরিয়ডস শুরু হয়ে যায়।
আর্লি পিউবার্টির কারণ কী?
খুব কম ক্ষেত্রেই পিউবার্টি সময়ের চেয়ে এগিয়ে আসে। কখনও-সখনও তা হতে পারে যদি পিটুইটারি গ্ল্যান্ডে বা ব্রেনের কিছুটা অংশ যা পিটুইটারিকে নিয়ন্ত্রণ করে, সেখানে কোনও অস্বাভাবিকত্ব থাকলে। এর কারণে প্রিকশাস পিউবার্টি হলে তাকে বলা হয় সেন্ট্রাল প্রিকশাস পিউবার্টি। এ ছাড়া পেরিফেরাল কারণেও প্রিকশাস পিউবার্টি হতে পারে। যেমন, ওভারিতে কোনও টিউমর বা সিস্ট থাকলে যা থেকে ইস্ট্রোজেন সিক্রেশন হচ্ছে বা টেস্টিস থেকে টেস্টোরাল সিক্রেশন হলে। ‘‘এ সব ক্ষেত্রে আমরা চিকিৎসার পরামর্শ দিই। তা না হলে উচ্চতা কম হতে পারে বা হাড়ের বৃদ্ধিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে অথবা এন্ডোক্রিন সিস্টেমেও সমস্যা হতে পারে। চিকিৎসা হিসেবে ইনজেকশন দেওয়া হয় মান্থলি বা তিন মাস অন্তর কিংবা নেজ়াল স্প্রেও দেওয়া হয়। এতে প্রিকশাস পিউবার্টি এক-দু’বছর পিছিয়ে যায়,’’ বললেন ডা. চট্টোপাধ্যায়।
এখন অধিকাংশ বাচ্চা মেয়েরই বয়ঃসন্ধি শুরু হয়ে যায় নয় বা দশ বছরের মধ্যে এবং পিউবার্টির বয়স যে আগের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে এসেছে, তা বোধহয় অস্বীকার করা যায় না। এ বিষয়ে ডা. চট্টোপাধ্যায়ের মত, ‘‘এখনকার অধিকাংশ মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত পরিবারে একটি বা দুটি সন্তান এবং বাবা-মায়েরা ছেলেমেয়ের পুষ্টির দিকটা খেয়াল রাখেন। অনেক ক্ষেত্রে আবার বাচ্চাদের ওজন বেশির সমস্যাও থাকে। তাই পশ্চিমি দেশগুলোয় যে বয়সে পিউবার্টি হয়, এখানেও এখন সে বয়সেই বয়ঃসন্ধি হচ্ছে। তা ছাড়া মায়ের যদি পিরিয়ডস তাড়াতাড়ি শুরু হয়ে থাকে, তাঁর মেয়ের ক্ষেত্রেও সেটা হতে পারে। অনেক সময়ে দেখা গিয়েছে, যারা খুব রোগা, হয়তো পুষ্টির অভাব রয়েছে, তাদের ঋতুচক্র শুরু হতে দেরি হচ্ছে।’’
ডিলেড পিউবার্টি
১৩ বছর বয়সেও ব্রেস্ট ডেভেলপমেন্ট না হলে এবং ১৬ বছর বয়সের মধ্যে পিরিয়ডস শুরু না হলে অবশ্যই গাইনিকলজিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। কারণ পিরিয়ডস শুরু না হওয়ার পিছনে অন্য কোনও কারণও থাকতে পারে। যদি দেখা যায় ব্রেস্ট ডেভেলপ করে গিয়েছে, কিন্তু পিরিয়ডস হচ্ছে না, তা হলেও ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। আবার যদি কোনও সেকেন্ডারি সেক্সুয়াল ক্যারেক্টারিস্টিকস দেখা না যায়, তা হলেও ১২ বছর বয়সে ডাক্তারের সঙ্গে অবশ্যই যোগাযোগ করা উচিত।