ADHD Core symptoms

আপনার সন্তানের কি এডিএইচডি রয়েছে? সতর্ক হবেন কখন? লক্ষণ মিলে গেলেই কি রোগাক্রান্ত?

মনোরোগ চিকিৎসক আলতাফ হোসেন এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলেন আনন্দবাজার ডট কমের সঙ্গে। রোগের কারণ, উপসর্গ, উপশমের উপায়ের পাশাপাশি জানালেন, লক্ষণ মিলে যাওয়া মানেই এডিএইচডি রয়েছে, এমন নয়।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৫ ১৭:১৯
Share:
What are the symptoms of ADHD, differences between regular attention deficiency and the disease

এডিএইচডি-র মূল তিনটি উপসর্গ কী কী ছবি: সংগৃহীত।

অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিজ়অর্ডার ওরফে এডিএইচডি। খটোমটো নাম, অথচ সকলের মুখে মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে। রোগ তো নতুন নয়, কিন্তু সমাজমাধ্যম এবং আলিয়া ভট্টের প্রভাবে এডিএইচডি-র নাম এখন খুবই সাধারণ বিষয়। বলিউড অভিনেত্রী যে দিন জানালেন, তাঁর এই রোগ শনাক্ত হয়েছে, তার পর থেকে আরও বেশি করে আলোচনা শুরু। উপসর্গের তালিকা মেলানোর পর অনেকেরই মনে হচ্ছে, তাঁদেরও এই রোগই রয়েছে, আর সব সমস্যার মূলে এটিই। এখানেই প্রয়োজন চিকিৎসকের পরামর্শ।

Advertisement

মনোরোগ চিকিৎসক আলতাফ হোসেন এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলেন আনন্দবাজার ডট কমের সঙ্গে। রোগের কারণ, উপসর্গ, উপশমের উপায়ের পাশাপাশি জানালেন, লক্ষণ মিলে যাওয়া মানেই এডিএইচডি রয়েছে, এমন নয়।

অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিজ়অর্ডার এক ধরনের নিউরোডেভেলপমেন্টাল কন্ডিশন। একটি শিশু বড় হওয়ার সময়ে তার মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটে। সেই সময়েই ধীরে ধীরে এই রোগের লক্ষণগুলি দেখা দেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জিনগত ভাবে পরের প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চারিত হলেও এডিএইচডি-র ক্ষেত্রে পরিপার্শ্বকে অস্বীকার করা যায় না। আচরণগত বৈশিষ্ট্যগুলি সৃষ্টি হয় পরিবেশের প্রভাবেই। সহজে বললে, ঘাত-প্রতিঘাতের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা এক এক জনের এক এক রকম। কেউ কেউ নরম প্রকৃতির, আবার কেউ বা তাড়াতাড়ি ভেঙে পড়েন না। জিনগত কারণেই এই ভিন্নতা তৈরি হয়। তাই একে বলা হয় জিনগত এবং পরিপার্শ্বের মিলিত প্রভাবে তৈরি হওয়া অবস্থা।

Advertisement
 What are the symptoms of ADHD, differences between regular attention deficiency and the disease

বড় হওয়ার পর এডিএইচডি-র লক্ষণ দেখা গেলে তাকে ‘অ্যাডাল্ট এডিএইচডি’ বলা হয়। ছবি: সংগৃহীত।

লক্ষণ

মূল ৩ উপসর্গ

চঞ্চল, অস্থির প্রকৃতি (হাইপারঅ্যাকটিভিটি)

মনোযোগের অভাব (অ্যান্টেনশন ডেফিসিট)

হুজুগে চলা, না ভেবেচিন্তে কিছু করা বা বলা (ইম্পালসিভনেস)

কিন্তু এই তিনটি ছাড়াও একাধিক লক্ষণ দেখা যায়। যেমন অল্পে রেগে যাওয়া বা কান্নাকাটি করা, অর্থাৎ আবেগকে ধরে রাখতে না পারা, সামাজিক পরিবেশে মানিয়ে চলতে না পারা, কোনও কাজে অনুপ্রাণিত হতে না পারা, সিদ্ধান্ত নিতে না পারা ইত্যাদি।

প্রশ্ন উঠতে পারে, অধিকাংশের (বিশেষ করে শিশুদের) মধ্যেই তো কমবেশি এই ধরনের আচরণগত বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। তা হলে কি তাদের প্রত্যেকেরই এডিএইচডি রয়েছে?

চিকিৎসক জানাচ্ছেন, এই ধরনের আচরণের তীব্রতা কত বেশি, তার উপর নির্ভর করে তার এই রোগ আছে কি না। পাশাপাশি দেখা যায়, বয়সের সঙ্গে মানানসই ব্যবহার করছে কি না, সে সবও দেখা হয়। চিকিৎসক বলছেন, ‘‘উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, মন তো সকলেরই খারাপ হয়। সকালে বিষণ্ণ লাগছে, বিকেলে ঠিক হয়ে যাচ্ছে, এক দিন-দু’দিন কিছুই ভাল লাগছে না, আবার পরে মন ভাল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যদি একটানা দীর্ঘ দিন সমস্ত পরিস্থিতিতেই মনখারাপ থেকে গেলে সেটিকে 'অবসাদ' বলছি আমরা। এডিএইচডি-র ক্ষেত্রে বিষয়টা এ রকম।’’

কিন্তু শৈশবে কী ধরনের পরিবেশ পাচ্ছে একটি মানুষ, তার উপর নির্ভর করে এই রোগের তীব্রতা। বাড়ি অথবা স্কুলের কারণে এই রোগ বেড়ে যেতে পারে, অথবা কমেও যেতে পারে। আবার একই সঙ্গে ছোটবেলায় সচেতন, সংবেদনশীল পরিবেশে বড় হলেও প্রাপ্তবয়সে পৌঁছে কলেজ বা কর্মক্ষেত্রে খারাপ পরিবেশ পেলে হঠাৎ করেই সেই রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। বড় হওয়ার পর এডিএইচডি-র লক্ষণ দেখা গেলে তাকে 'অ্যাডাল্ট এডিএইচডি' বলা হয়।

অভিভাবকদের উদ্দেশে তাই চিকিৎসকের বক্তব্য, ‘‘সন্তানদের মন বুঝে কথা বলা বা কাজ করা দরকার বাবা-মায়ের। তার মানে এমন নয় যে, তারা যা চাইবে, তাই এনে দিতে হবে। পার্থিব চাহিদা পূরণ করার বদলে মনের চাহিদা পূরণের চেষ্টা করতে হবে। তাদের ভুল ধরিয়ে দেওয়ার মধ্যেও সংবেদনশীলতা প্রয়োজন। তারা কী করছে না, সেটার উপর জোর না দিয়ে, কী কী করছে, সেগুলিকে স্বীকৃতি দিলে ছোটরা খুশি হয়, অনুপ্রাণিত হয়। স্কুলে কোনও সমস্যায় পড়ছে কি না, সেটাও দেখতে হবে বাবা-মাকেই।’’

রোগ উপশমের বিষয়ে চিকিৎসক জানালেন, ছোটদের জন্য ওষুধ কার্যকরী হলেও বড়দের (অ্যাডাল্ট এডিএইচডি) জন্য ততটাও নয়। অ্যাডাল্ট এডিএইচডি নিরাময়ের জন্য রুটিনমাফিক জীবনযাত্রা মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসক। ইচ্ছা না হলেও বা আলস্য এলেও জোর করে করতে হবে। খুব তীব্র হয়ে গেলে তবে ওষুধের সাহায্য নেওয়া হয়। তবে ছোটদের ক্ষেত্রে নিজে বুঝে রুটিন মেনে চলার কাজটি কঠিন। তাই ওষুধের সাহায্য নেওয়া হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement