Coronavirus

করোনার সঙ্গে যৌথ জীবনযুদ্ধে জিততে বদলাতে হবে নিজেকে 

এই পথ চলার নির্দিষ্ট নিয়মনীতি কারও কাছেই ছিল না। এত দিন খড়িমাটির গণ্ডি টেনে সরকারই অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে সাবধান করেছে।

Advertisement

অভিজিৎ চৌধুরী (চিকিৎসক)

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২০ ০৪:৩৮
Share:

প্রতীকী ছবি

এ দেশে প্রায় মাস দুয়েক ধরে চলছে করোনাভাইরাস আর মানুষের লুকোচুরি। দেশ জুড়ে সংক্রমণের গতি এখনও ঊর্ধ্বগামী। বাইরে ভাইরাসের হুঙ্কার, ভিতরে সন্ত্রস্ত ও ক্ষুধার্ত মানুষ। থমকে থাকা দেশে প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েছে অর্থনীতি। এমন চালচিত্রে দেশবাসীকে ভাল রাখার ভাবনা নিয়ে সরকার দড়ির উপর দিয়ে হাঁটছে।

Advertisement

এই পথ চলার নির্দিষ্ট নিয়মনীতি কারও কাছেই ছিল না। এত দিন খড়িমাটির গণ্ডি টেনে সরকারই অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে সাবধান করেছে। নিতান্ত এক অসম লড়াইয়ে নাগরিকদের সুরক্ষায় নানা ব্যবস্থাও করেছে। তার প্রতুলতা এবং গুণমান নিয়ে যত বিতর্কই থাক। মানুষ মৃত্যুর শব্দ শুনে এই সময়ে যথেষ্ট শৃঙ্খলাবদ্ধ থেকেছেন। কিন্তু লকডাউনের পর্দা ওঠার পরে আমাদের জীবন অবশ্যই আলাদা হবে। ভাইরাসের সঙ্গে মানুষের সে এক যৌথ জীবন। সাতপাকের বাঁধন না থাকলেও সে জীবনে ছন্দ ও পরিকল্পনা দুই-ই লাগবে। সতর্কতা মেনে এই সহাবস্থান না হলে জীবন আবার থমকে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

এই সময়ের মধ্যে কী কী জেনেছি এবং বুঝেছি, সেগুলি স্পষ্ট করা জরুরি। বিজ্ঞানকে সারথি মানতে হবে, গোঁয়ার্তুমি এবং রাজনীতির হিসেবকে নয়। বিজ্ঞানীদের মতে, করোনা সাগরে আমাদের ভেলা নিয়ে ভেসে থাকতে হবে বহু দিন। কত দিন, কেউ জানেন না। ঝড় থেমে গেলে সব শান্তি, এমনটা ভাবার কারণ নেই। সরকার লকডাউন তুলে দিলেই ফের হই-হুল্লোড়ের জীবন কিন্তু আত্মঘাতী বোমারুর মতো বিপদ ডেকে আনতে পারে।

Advertisement

মনে রাখতে হবে


• আতঙ্কিত না হয়ে করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ মানুন

• অহেতুক বাইরে বেরোবেন না

• কোনও সামাজিক অনুষ্ঠান বা জমায়েত এখনও নয়

• মাস্ক পরা অপরিহার্য

• সাবান দিয়ে একাধিক বার হাত ধোয়ার অভ্যাস বন্ধ নয়

মনে রাখতে হবে, প্রতিটি মানুষের পথচলা, কথা বলা সরকারের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। উচিতও না। পুলিশ দিয়ে করোনা মোকাবিলা দুর্ভাগা দেশের অলঙ্কার হতে পারে, তা দীর্ঘদিন মানুষকে রক্ষা করতে পারবে না। মানুষের সচেতনতা এবং আত্মনির্ভরতা আগামী দিনগুলির ভালমন্দ নির্ধারিত করবে। এই সময়ে রপ্ত করা অনুশাসন আগামী দিনে আরও আঁটোসাঁটো করতে হবে। বার বার সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। দলবদ্ধ ভাবে আড্ডা মারার সংস্কৃতি কয়েক বছর ভুলে যেতে হবে। তা নয়তো দল বেঁধে কোয়রান্টিন কেন্দ্র বা হাসপাতালে ঠাঁই হবে। সামাজিক বন্ধন বজায় রেখে শারীরিক দূরত্বের যে ছ’ফুট স্লোগান রপ্ত করেছি, সেটাই এখন মজ্জাগত করতে হবে।

বলা যতটা সহজ, করা অবশ্য তত সহজ নয়। নিজের সঙ্গে কথা বলে এই অভ্যাস রপ্ত করা প্রয়োজন। পরীক্ষিত তথ্যের উপরে দাঁড়িয়ে বিজ্ঞান স্থির করেছে, দু’জন ব্যক্তির মধ্যে ছ’ফুট দূরত্ব রাখা বাঞ্ছনীয়।

আরও পড়ুন: খুদেদের অনলাইন গেমেও এখন মাস্কের রমরমা

অপরিচিতের সঙ্গে সাক্ষাতে আরও সতর্ক হতে হবে। বাস্তবে এগুলি প্রয়োগে অসভ্যতা নেই, বরং সকলের কল্যাণের ইঙ্গিত আছে। মনে রাখতে হবে লকডাউন ওঠার পর মাঝেমধ্যেই করোনা সংক্রমণের ঢেউ আছড়ে পড়বে। অসতর্কতা সে ক্ষেত্রে কাল হতে পারে। কাজের জায়গায় থার্মাল স্ক্রিনিং চালু রাখতে হবে। ন্যূনতম শরীর খারাপ হলে করোনা পরীক্ষা করাতে হবে।

গত দু’মাসে কিছু মানুষের মনে হয়েছে, করোনা ধরা পড়া যেন জেলে যাওয়ার আতঙ্ক! তাই কেউ কেউ উপসর্গ বুঝেও বেমালুম চেপে যাচ্ছেন। জটিল হলে তখন হাসপাতাল আর পরীক্ষানিরীক্ষার কথা ভাবছেন। বাঘ আসতে পারে ভেবে ভয়ে চোখ বন্ধ করে থাকলে সে এসে তো ঘাড়েই ঝাঁপাবে। বরং চোখ খুলে বাঘের সঙ্গে লড়তে হবে।

ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে মাস্কের ব্যবহার। করোনা হাঁচি-কাশি এমনকি জোরে কথা বলার মাধ্যমেও ছড়ায়। তাই নিজেকে রক্ষা করা এবং অন্যকেও সংক্রমণ উপহার না দেওয়ার বৈজ্ঞানিক কবচ এটি। মনে রাখা দরকার যে কায়দা করে মুখে রুমাল বেঁধে থাকলেই হবে না। নাক-মুখ ঢাকা দু’স্তরের আবরণী সম্পন্ন মাস্কের ব্যবহার করতে হবে। আমরা মানসিক ভাবেও ‘ধুত্তোর, কিছুই হবে না’ জীবনযাপনে অভ্যস্ত। তাই হাত ধোয়া, শারীরিক দূরত্বের নিয়ম আর ঘুমোনোর সময় ছাড়া সর্বদা মাস্ক পরার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।

জীবিকা এবং মানসিক চাহিদা মেটানোর প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই থাকবে। তা সত্ত্বেও করোনার আবরণে পাল্টে যাওয়া পরিমণ্ডলের কথা মনে রাখতে হবে। যে শৃঙ্খলার জীবন গত কয়েক সপ্তাহে ভয় কিংবা ভক্তিতে রপ্ত করেছি, তাকে মাঝখানে রেখেই দরজা খুলে হাঁটতে হবে। করোনা পরবর্তী পৃথিবীতে সবাই সবার থেকে ফারাক রেখে পথ চলবে। মাঝে মধ্যেই ঝপাঝপ দরজা বন্ধের ডাক আসতে পারে, সেই মানসিক প্রস্তুতিও থাকতে হবে।

অঘোষিত এই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলবে বেশ কিছু সময়। সরকার প্রথম অবস্থায় হাত ধরে হাঁটিয়েছে বা গৃহবন্দি করেছে। এর পরে কিন্তু বিজ্ঞানকে সঙ্গী করে নিজেদেরই হাঁটতে হবে।

আরও পড়ুন: ৫৩তম দিন: আজকের যোগাভ্যাস

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement