গরমকালটা বেশ কষ্টে কাটে সোহিনীর। একেই তাঁর ওজন বেশি। ফলে অল্পেই ঘাম হয়। তার সঙ্গে গরমে গা ভর্তি ঘামাচি। একটা পর্যায়ের পরে তা রীতিমতো কষ্টদায়ক হয়ে ওঠে।
ছোট্ট অহনাকে নিয়ে জেরবার তার মা। লকডাউনে বাড়িতে এমনিতেই শিশুদের এক জায়গায় অনেকক্ষণ শান্ত ভাবে রাখা মুশকিল। তাই সারা দিন বাড়িতেই ছুটোছুটি, জামা ভিজে যায় ঘামে। সারা পিঠ জুড়ে লাল র্যাশ।
গরমকালে বাড়তে থাকা তাপমাত্রা তো কষ্টদায়কই। তার পাশাপাশি সামার র্যাশ, প্রিকলি হিট, ফোঁড়া বা ত্বকের নানা ইনফেকশন সেই কষ্ট বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু সব র্যাশ এক নয়। তাই জেনে রাখা প্রয়োজন কোন র্যাশের চরিত্র কেমন?
সামার র্যাশের নানা ধরন
হিট র্যাশ বা অ্যাকিউট সানবার্ন: সূর্যের কড়া রোদে অনেকক্ষণ থাকলে হিট র্যাশ বেরোয়। এতে শরীরের খোলা অংশে লাল প্যাচের মতো তৈরি হয়। কখনও সেই অংশে তীব্র জ্বালা, চিড়বিড়ানি ধরে। শিশুরা অনেক সময়ে হিট র্যাশে কাবু হয়ে সাময়িক ভাবে অচৈতন্য হয়েও পড়তে পারে।
ইনটেন্স সান ট্যান: সূর্যের সংস্পর্শে এসে ত্বকের খোলা অংশের রং বদলায়। বাদামি বা কালচে ছোপ ধরে। সান ট্যানের জেরে ওই অংশে যেমন জ্বালা হয়, তেমনই আবার পাশাপাশি ত্বকের দু’ধরনের রংও স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায়।
মিলিয়ারিয়া বা প্রিকলি হিট: এর অর্থ সহজ কথায় ঘামাচি। যাঁদের শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম বেরোয়, অনেক সময়ে তাঁদের ত্বকের রোমকূপ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ছোট ছোট ফুসকুড়ির মতো প্যাচ তৈরি হয়। এটাই পরিচিত প্রিকলি হিট বা মিলিয়ারিয়া নামে।
পোকামাকড় থেকে অ্যালার্জি: গরম কালে প্রচুর পোকামাকড় বেরোয়। আর কখনও ঝড় হলে কথাই নেই। পোকমাকড় কামড়ালে বা সামান্য চেটে দিলে ত্বকে নানা ধরনের র্যাশ, অ্যালার্জি বেরোতে পারে। ফলে কিছু ক্ষেত্রে চুলকানি হয়। কখনও ভীষণ জ্বালা করে।
সংক্রমণ: ব্যাকটিরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস, প্যারাসাইট থেকে ত্বকে সংক্রমণ হওয়া অস্বাভাবিক নয়। করোনা পূর্ববর্তী সময় থেকেই প্রকট হয়েছে এই ধরনের সংক্রমণ। এ ছাড়াও হারপিস, চিকেন পক্স, মিজ়লস, কাওয়াসাকি ডিজ়িজ়, সেলুলাইটিস, এগজ়িমা, ছুলি তো রয়েছেই। অনেক সময় স্ক্যাল্পেও র্যাশ বেরোয়। চুলের ডগায় ঘাম জমে ছড়াতে পারে সংক্রমণও।
সচেতনতাও জরুরি
একবার সামার র্যাশ বেরিয়ে গেলে, পরে চিকিৎসা করা যাবে— এ মনোভাব ঠিক নয়। এতে র্যাশ সারানো যায়। কিন্তু প্রাথমিক জ্বালা-যন্ত্রণা এড়ানো যায় না। অনেকে বাজারচলতি ট্যালকম পাউডার বা লোশনের উপরে ভরসা করেন। তা না করে, বরং আগে থাকতে কিছু নিয়ম পালন করুন।
• গরম হলেও সুতির ফুল স্লিভ জামাকাপড় পরে রাস্তায় বেরোন। রংও বাছুন হালকা। কালো পোশাক এড়িয়ে চলুন। কারণ কালো রং তাপমাত্রা শোষণ করে বেশি।
• সানস্ক্রিন লাগিয়ে বেরোনো অত্যন্ত জরুরি। এমনকি শিশুদের ত্বকেও ব্যবহার করুন মেডিকেটেড সানস্ক্রিন।
• দিনে দু’-তিন বার স্নান করলে প্রিকলি হিটের হাত থেকে অনেকাংশে রক্ষা পাওয়া যায়। শিশুদের অনেক সময়ে ঠান্ডা লাগার ধাত থাকে। সে ক্ষেত্রে পরিষ্কার ঠান্ডা জলে তোয়ালে ভিজিয়ে শিশুর গোটা শরীর কোল্ড স্পাঞ্জ করাতে পারেন। মোদ্দা কথা, শরীরে কোনও মতেই ঘাম জমতে দেওয়া চলবে না।
• পোকমাকড় থেকে অ্যালার্জি হলে ল্যাক্টো ক্যালামাইন জাতীয় লোশন লাগান। জ্বলুনি বা প্রদাহের তীব্রতা অনুযায়ী চিকিৎসক মাইল্ড স্টেরয়েড অথবা স্টেরয়েড-অ্যান্টি বায়োটিক কম্বিনেশনের লোশন অন্তত পাঁচ-ছ’দিন লাগানোর পরামর্শ দেন। চুলকানি এড়াতে ওরাল অ্যান্টি-অ্যালার্জিক ওষুধও দেওয়া হতে পারে।
অতিরিক্ত ঘাম ও অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব
অত্যন্ত বেশি পরিমাণে ঘাম হলে ত্বক, শ্বাসযন্ত্র সংক্রান্ত অ্যালার্জি হতে পারে শিশুদের মধ্যে। তা পরিচিত অ্যাটোপিক অ্যালার্জি নামে। আবার ঘামের বেশি নিঃসরণ শরীরে সোডিয়াম, পটাশিয়ামের মাত্রা কমিয়ে দেয়। তাই গরম কালে শিশুকে ঘনঘন ওআরএস কিংবা নুন-চিনির জল খাওয়ান।
রোদে বেশিক্ষণ থাকা মানেই অতিবেগুনি রশ্মির সরাসরি সংস্পর্শে আসে ত্বক। ফলে গায়ে অনেক সময়ে সাদাটে প্যাচ বা দাগ দেখা দেয়। সেখানে চুলকানিও হয়। তাই দিনের বেলা বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়ে অথবা ছোটদের স্কুলে পাঠানোর আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরি। বাড়ির ছোটরা যদি কোনও খেলাধুলোর সঙ্গে যুক্ত থাকে, তা হলে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে নিয়ম করে।
তবে সচেতন হতে গিয়ে কোনও কিছু অতিরিক্ত করা উচিত নয়। অনেক সময়ে রোজকার স্নান করার আগে অনেকে জলে অ্যান্টিসেপটিক গুলে দেন। এতে শরীরের আভ্যন্তরীণ ব্যাকটিরিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অনেকাংশে বাইরে থেকে সংক্রমণেরও প্রকোপ বাড়ে। তাই পরিচ্ছন্ন থাকার কোনও বিকল্প
পথ নেই। নিয়মিত স্নান, হাত-পা ধোয়া এবং ঘাম বসতে না দেওয়াই সামার র্যাশকে কাবু করার প্রধান উপায়।
তথ্য সহায়তা: ত্বক বিশেষজ্ঞ ড. সন্দীপন ধর
মডেল: সুস্মেলি দত্ত, অলিভিয়া সরকার
ছবি: অমিত দাস
মেকআপ: সুমন গঙ্গোপাধ্যায়
লোকেশন: লাহাবাড়ি