Dengue

Dengue in Kolkata: কোভিডের দোসর ডেঙ্গিও, অসচেতনতায় বাড়ছে বিপদের আশঙ্কা

অতিমারির চতুর্থ ঢেউয়ের মধ্যেই মাথাচাড়া দিচ্ছে ডেঙ্গি। এমন ঘটনা অস্বাভাবিক কিছু নয় বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২২ ০৮:২৪
Share:

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, দু’টি রোগই ভাইরাসঘটিত হলেও, ছড়ানোর পদ্ধতি আলাদা। ফাইল ছবি

আচমকাই জ্বর, সঙ্গে সর্দি-কাশিতে বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন বছর বাইশের যুবক। পরীক্ষা করাতে দেখা গেল, তিনি কোভিড পজ়িটিভ। দিন সাতেক পরে সুস্থ হয়ে উঠলেও কয়েক দিন পরে ফের জ্বর। পরীক্ষায় দেখা গেল, তিনি এ বার ডেঙ্গিতে আক্রান্ত!

Advertisement

অতিমারির চতুর্থ ঢেউয়ের মধ্যেই মাথাচাড়া দিচ্ছে ডেঙ্গি। এমন ঘটনা অস্বাভাবিক কিছু নয় বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, বেশি না হলেও এমন রোগী মিলছে। আবার ভাইরাসজনিত দু’টি রোগে একসঙ্গেও আক্রান্ত হচ্ছেন কেউ কেউ। সে ক্ষেত্রে ঝুঁকি আরও বাড়ছে। জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, প্রায় আড়াই বছর ধরে করোনার প্রকোপ চলছে। আর ডেঙ্গি পুরনো রোগ। ফলে দু’টির ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষ জানেন। তবুও বেশির ভাগ মানুষের উদাসীনতায় কোভিডের বাড়বাড়ন্ত এখনও রয়েছে। একই সঙ্গে ডেঙ্গিও বাড়ছে। সরকার বা প্রশাসনের পক্ষে এই রোগগুলিকে আটকানো অসম্ভব, যদি না সাধারণ মানুষ সচেতন হন।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, দু’টি রোগই ভাইরাসঘটিত হলেও, ছড়ানোর পদ্ধতি আলাদা। কোভিড ড্রপলেটের মাধ্যমে নাক-মুখ দিয়ে প্রবেশ করছে। আবার মশার কামড়ে ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে। কিন্তু অতিমারি পরিস্থিতি চললেও বেশির ভাগ মানুষই মাস্ক ছাড়া ঘুরছেন। তাতে সহজেই শরীরে ড্রপলেট ঢুকছে। আবার বাড়িতে বা আশপাশে জমা জল থাকলেও মানুষ উদাসীন। তাতে মশার লার্ভা জন্মাচ্ছে। বারাসত মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিনের শিক্ষক চিকিৎসক জ্যোতির্ময় পাল বলেন, ‘‘লং কোভিডের প্রভাব কতটা, তা এখনও নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। তবে কোভিডের থেকে ডেঙ্গিকে সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কোভিডের ডেল্টা ভাইরাস ফুসফুস, হৃদ্‌যন্ত্রে প্রভাব ফেলে। আবার ডেঙ্গিতে রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়ার উপরে প্রভাব পড়ে। তাই দু’টি রোগ একসঙ্গে হলে ভয়াবহতা বেশি।’’ কিন্তু বেশির ভাগ মানুষই ভেবে নিচ্ছেন, একটি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সেরে ওঠার পরে অন্যটি হবে না। এই ভ্রান্ত ধারণাই বিপদ ডেকে আনছে বলে মত সংক্রামক রোগের চিকিৎসক যোগীরাজ রায়ের।

Advertisement

ভাইরোলজিস্ট সিদ্ধার্থ জোয়ারদার জানাচ্ছেন, ভাইরাস দেহের কোষকে ব্যবহার করে বংশবৃদ্ধি করে। তাতে কোষের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা কমে যায় বা নষ্ট হয়। পেশি ও অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় কোষের উপর ভাইরাস হানার প্রভাব বোঝা যায়, দুর্বলতা বা অসুস্থতায়। তাঁর কথায়, ‘‘শরীরে প্রতিরক্ষার কাজে নিয়োজিত কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে হামলা চালায় রোগ সৃষ্টিতে পটু ভাইরাস বা ব্যাক্টিরিয়া। নানা উপ-প্রজাতির করোনাভাইরাস প্রতিরক্ষা-কোষকে ফাঁকি দিয়ে সংখ্যায় বাড়ছে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে দিচ্ছে না। ফলে স্বল্প ব্যবধানে দু’টি ভাইরাস হামলার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।’’ দু’টিতে একসঙ্গে আক্রান্ত হলে, ওষুধ প্রয়োগের সময় দশ বার ভাবতে হয় বলেও জানাচ্ছেন জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই।

তাঁর কথায়, ‘‘কোভিডের জন্য যে ওষুধ বা স্টেরয়েড লাগছে, তা ডেঙ্গিতে বিপদ বাড়াতে পারে। তাই কোনটা বেশি প্রভাব ফেলেছে তা বুঝতে হয়। দু’টি রোগেই শরীরে সাইটোকাইন ঝড় তৈরি হয়ে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি করে। দু’টি রোগ একসঙ্গে হলে ঝুঁকির তো বটেই।’’ এম আর বাঙুর হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ারের চিকিৎসক শুভব্রত পাল জানাচ্ছেন, ডেঙ্গিতে ‘এআরডিএস’ (অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিন্ড্রোম)-এ ফুসফুসের ‘অ্যালভিওলাই’ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে অক্সিজেন প্রবাহ ব্যাহত হয়। কোভিডেও একই সমস্যা হয়। তিনি আরও বলেন, ‘‘দু’টি রোগ একসঙ্গে হলে ‘এআরডিএস’-র আশঙ্কা দ্বিগুণ হয়। ডেঙ্গি হেমারেজিক শকে রক্তনালি ফুলে ওঠে। কোভিডের সাইটোকাইন ঝড়েও সেই সমস্যা দেখা যায়। ফলে দু’টি রোগে একসঙ্গে আক্রান্ত হলে ঝুঁকি অনেক বেশি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement