Bhaiphota Special

‘ভুবনমোহিনী’ না কি ‘লাবণ্য’, ভাইয়ের জন্য পছন্দ করবেন কাকে? কোথায় বা পাবেন তাকে?

ভাইয়ের পাতে সাজানোর জন্য তো আর যে সে মিষ্টি দিলে হবে না। বোন-দিদিদের চিন্তা দেখেই আসরে হাজির মিষ্টি বিক্রেতারা। কলকাতার নামী মিষ্টি ব্যবসায়ীরা ভাইফোঁটা উপলক্ষে এনেছে নতুন মিষ্টি। জেনে নিন, কোথায় গেলে মিলবে কোনটি?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৪ ১০:৫৮
Share:

ভাইয়ের মঙ্গলকামনায় কপালে ফোঁটা দিয়ে নিজে হাতে মিষ্টি সাজিয়ে দেবেন দিদি। —নিজস্ব চিত্র।

কোনওটিতে কামড় বসালে মিলবে সাত রকম উপাদানের মিশ্র স্বাদ। কোনওটি মনে করাবে কুলফির কথা। কোনওটিতে পাওয়া যাবে গন্ধরাজের গন্ধ। কোনওটিতে থাকবে দই-রাব়ড়ির মিলমিশ। স্বাদে-গন্ধে, রূপে-গুণে আলাদা হলেও, জাতে তারা একই। মিষ্টি। ভাইফোঁটা উপলক্ষেই নবরূপে, নব স্বাদে আবির্ভাব তাদের।

Advertisement

কালীপুজো শেষ। এ বার অপেক্ষা ভাইফোঁটার। ভাইয়ের মঙ্গলকামনায় কপালে ফোঁটা দিয়ে নিজে হাতে মিষ্টি সাজিয়ে দেবেন দিদি। ভাই স্বাস্থ্যসচেতন হোক বা না হোক, এ দিন ক্যালোরির সব হিসেব-নিকেশ বাদ।

কিন্তু ভাইয়ের পাতে সাজানোর জন্য তো আর যে-সে মিষ্টি দিলে হবে না। বোন-দিদিদের চিন্তা দেখেই আসরে হাজির মিষ্টি বিক্রেতারা। মিষ্টি তো মিষ্টি নয়, সে যে শিল্প। সেই কবে ছানা দিয়ে সাদা ধবধবে নরম তুলতুলে রসগোল্লা তৈরি করেছিলেন নবীনচন্দ্র দাস। বাগবাজারের নবীন ময়রার সৃষ্টির সুফল এখনও ভোজনরসিকরা ভোগ করছেন।

Advertisement

কলকাতার বুকে এখন ঝাঁ চকচকে অজস্র মিষ্টির দোকান। তার মধ্যে বয়েসে বেশ কয়েকটি শত বছরের পুরনো। তবে তাই বলে, প্রাচীনত্বকে আঁকড়ে বসে নেই তারা। রসগোল্লা থেকে সন্দেশ, সমস্ত কিছু নিয়েই চলছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। তারই ফলাফল ডাব সন্দেশ, কেশর ভোগ, সন্দেশ কুলফি, লাবণ্য, পারিজাত, সপ্তপদী, ভুবনমোহিনী— হরেক কিসিমের মিষ্টি।

এই ‘অমৃত কুম্ভের’ সন্ধান মিলবে কোথায়?

মধ্য কলকাতায় ধর্মতলার মোড়েই রয়েছে ‘কে সি দাস’-এর মিষ্টির দোকান। এখানকার রসগোল্লার নাম ছড়িয়েছে দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে। সেখানে সাদা রসগোল্লায় এখন জুড়েছে গন্ধরাজের স্বাদ-গন্ধ। তবে ভাইফোঁটার বাজারে তাঁদের চমক ডাব সন্দেশ। আকারে ডাব। গায়ে আবার স্বস্তিক চিহ্ন। বিক্রেতাদের দাবি, এতে কামড় বসালেই মিলবে ডাবের শাঁসের স্বাদ এবং গন্ধ। কেসি দাসের কর্ণধার ধীমান দাস জানালেন, কালীপুজো ভাইফোঁটা উপলক্ষে বিশেষ মিষ্টির তালিকায় থাকছে গন্ধরাজ রসগোল্লা এবং সন্দেশ, নারকেল কদম, ত্রিনয়নী, শুভদীপ মিষ্টি। এ ছাড়া মোহনভোগ, রাজভোগ, খাজা, বালুসাই তো আছেই। ভাইফোঁটায় চাহিদা থাকে ‘সুগার ফ্রি’ রসগোল্লা, সন্দেশেরও।

ভাইফোঁটায় থাকছে ডাব সন্দেশ, ত্রিনয়নী, ঘেবর, চকোবেল। — ছবি: কেসি দাস ।

মধ্য কলকাতা ছাড়িয়ে উত্তরে পাড়ি দিলে নকুড়ের দোকান। পুরো নাম অবশ্য ‘গিরিশচন্দ্র দে অ্যান্ড নকুড়চন্দ্র নন্দী’। তবে কলকাতাবাসীর কাছে তা এখন সংক্ষেপে নকুড়ের মিষ্টির দোকান। বাঙালি মিষ্টির প্রবাদপ্রতিম নকুড়চন্দ্র নন্দীর উত্তর প্রজন্ম পার্থ নন্দী অবশ্য জানাচ্ছেন, ভাইফোঁটা উপলক্ষে তাঁরা কোনও নতুন মিষ্টি আনেন না। তবে এই বছর তাঁদের সন্দেশ কুলফি বাজিমাত করতে পারে। এই মিষ্টির স্বাদ বেশ আলাদা। ছানার সন্দেশ কুলফি খেতে হয় ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে। রয়েছে তিন রকমের ফ্লেভার। আম, ব্লুবেরি এবং স্ট্রবেরি। দাম ৪৫ টাকা। নতুন মিষ্টির তালিকায় থাকছে ব্লুবেরি সন্দেশ। উপর থাকবে ক্রিমচিজের স্তর। এ ছাড়া, গুড়ের নাটি, মৌসুমী, মোহিনী, মনোহরা, নলেন গুড়ের রকমারি সন্দেশ তো আছেই। পার্থ বললেন, ‘‘ভাইফোঁটার বাজারে আমাদের মালাই শিঙাড়া, কাজু এবং চকোলেটের শিঙাড়াও বেশ জনপ্রিয়।’’

ভাইফোঁটায় বিশেষ মিষ্টির তালিকায় থাকছে রকমারি সন্দেশ কুলফি। — ছবি: নকুড়।

উত্তর কলকাতার আর একটি বেশ পুরনো মিষ্টির দোকান রয়েছে শ্যামবাজারে। দ্বারিক গ্র্যান্ড সন্স। এখানকার লাবণ্য সন্দেশ এবং পারিজাতের বেশ সুনাম। দুধের সরের সঙ্গে কাজুর যুগলবন্দিতে হাল্কা মিষ্টির স্বাদ মেলে লাবণ্যে। নতুন মিষ্টির তালিকায় থাকছে সূর্যমুখী। আনারসের নির্যাস দিয়ে বানানো হয়েছে এটি। দোকানের অন্যতম অংশীদার সুমিত ঘোষ জানালেন, এ ছাড়াও তালশাঁস, ভাইফোঁটা লেখা এবং ছাপ দেওয়া মিষ্টি, বেকড রসগোল্লা, সরভাজা, চকোলেট সন্দেশেরও আলাদা বাজার আছে।

কলকাতার বুকে চার পুরুষের দোকান নলীনচন্দ্র দাসদের। নলীনচন্দ্র দাস সন্দেশ এবং চকোলেট ফিউশন মিষ্টির পথীকৃৎ। নলীনচন্দ্র অ্যান্ড সন্সের শাখা এখন কলকাতার বিভিন্ন জায়গায়। সংস্থার কর্ণধার তপনকুমার দাস বললেন, ‘‘ভাইফোঁটা উপলক্ষে এনেছেন আতা ছানার পায়েস। মাটির খুড়িতে ১০০ গ্রাম ওজনের মিষ্টি থাকবে। দাম ৮০ টাকা। এ ছাড়া, কেশর ছানার পায়েস, চকোলেট সন্দেশের রকমারি, মালাই রোল, বাটার স্কচ, আম দই, পেস্তা সন্দেশ, রস মালাই সবই থাকছে।’’ ‘ফিউশন’ বা নতুন ধরনের মিষ্টি নিয়ে আগ্রহ থাকলেও ভাইফোঁটা মিষ্টির কদর থাকে বরাবরই। সে কথা মাথায় রেখে, আম, চকোলেট, কেশর-সহ পাঁচটি স্বাদের মিষ্টি এনেছেন।

ভাইফোঁটা স্পেশাল আতা ছানার পায়েস। রকমারি মিষ্টিতে থাকছে ব্ল্যাক কারেন্ট সন্দেশ। —ছবি:নলীনচন্দ্র অ্যান্ড সন্স

ভাইফোঁটার বাজারে টক্কর দিতে প্রস্তুত হুগলির রিষড়ার নাম করা প্রতিষ্ঠান ফেলু মোদকও। তাঁদের এ বারের নতুন মিষ্টি সপ্তপদী এবং ভুবন মোহিনী। শতবর্ষ পুরনো ফেলু মোদকের কর্ণধার অমিত দে বললেন, ‘‘সপ্তপদীতে মিলবে সাত রকমের উপাদানের স্বাদ এবং গন্ধের সংমিশ্রণ। বিভিন্ন রকমের বাদাম, মশলার সমাহারে এটি তৈরি। আর থাকছে ভাইফোঁটা স্পেশ্যাল ভুবন মোহিনী। এতে একসঙ্গেই মিলবে দই এবং রাবড়ির স্বাদ। উপর থেকে ছড়ানো থাকবে বাদাম কুচি।’’ তা ছাড়া, ভাইফোঁটা উপলক্ষে প্রায় ৭০-৮০ রকমের মিষ্টি থাকছে।যেমন আম সন্দেশ, ম্যাঙ্গো মোহিনী, কোকো মোহিনী, আতা সন্দেশ, গজা, লবঙ্গ লতিকা। থাকছে ৭ রকমএবং ১১ রকম মিষ্টি দিয়ে তৈরি দু’টি থালিও।

ভাইফোঁটা স্পেশালে থাকছে সপ্তপদী এবং ভুবনমোহিনী। — ছবি: ফেলু মোদক

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement