নারীদের যৌনাঙ্গের চেনা সমস্যা ভ্যাজাইনাল ইস্ট ইনফেকশন বা ক্যানডিডিয়াসিস। যোনি থেকে অস্বাভাবিক ক্ষরণ, সহবাস বা মূত্রত্যাগের সময়ে জ্বালা করা, যৌনাঙ্গে চুলকানি ইত্যাদি এর অন্যতম লক্ষণ। এই লক্ষণগুলি অন্যান্য সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ইনফেকশনের (এসটিআই) ক্ষেত্রেও হতে পারে অবশ্য। ইস্ট ইনফেকশন হলে তা নিয়ে তেমন ভয় পাওয়ার দরকার নেই, কারণ সহজেই চিকিৎসার মাধ্যমে এর নিরাময় সম্ভব।
বাসা বাঁধে ফাঙ্গাস
ক্যানডিডা নামে এক ধরনের ইস্ট বা ফাঙ্গাস থেকে এই ইনফেকশনের উৎপত্তি। শরীরের বাইরে ত্বকের উপরে এবং শরীরের মধ্যে গলায়, মুখের ভিতরে, যৌনাঙ্গের ভিতরের বিভিন্ন জায়গায় থাকতে পারে এই ফাঙ্গাস, কোনও ক্ষতি না করেই। গাইনিকলজিস্ট ডা. অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘অনেক মহিলাই শরীরের নানা অংশে এই ফাঙ্গাস বয়ে বেড়ান, কোনও ভাবে আক্রান্ত না হয়েই। বিভিন্ন কারণে এই ফাঙ্গাস যৌনাঙ্গে ছড়িয়ে পড়লে তা সংক্রমণের আকার ধারণ করে।’’
হরমোনের তারতম্য, শরীরের অনাক্রম্যতার পার্থক্য, ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাব ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে ক্যানডিডার গ্রোথ বাড়তে পারে যৌনাঙ্গে। তখনই তা ইনফেকশনের রূপ নেয় ও পীড়াদায়ক হয়ে ওঠে।
উপসর্গ
যৌনাঙ্গের চারপাশে ও ভিতরে চুলকানি, জ্বালা করা ও লাল হয়ে যাওয়া।
মূত্রত্যাগের সময়ে জ্বালা করা।
সহবাসের সময়ে ব্যথা বা জ্বালা করা।
যৌনাঙ্গ থেকে সাদা, দুর্গন্ধহীন স্রাব নিঃসরণ।
এই ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই সমীচীন। এসটিআই কিংবা ব্যাকটিরিয়াল ভ্যাজাইনোসিসের উপসর্গও সমগোত্রীয়, যার চিকিৎসা যথাসময়ে শুরু না করলে তা অন্যান্য অসুখ ডেকে আনতে পারে।
কাদের ঝুঁকি বেশি
ইস্ট ইনফেকশন যে কোনও বয়সি মহিলারই হতে পারে। তবে পিউবার্টির আগে কিংবা মেনোপজ়ের পরে সাধারণত এই রোগের উপসর্গ দেখা যায় না। সন্তানসম্ভাবনার সময়ে, হরমোনাল বার্থ কন্ট্রোল পিল সেবন করলে, স্টেরয়েড বা অ্যান্টিবায়োটিক নিয়মিত খেলে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে, রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকলে সেই সকল মহিলার এই সংক্রমণের কবলে পড়ার সম্ভাবনা বেশি। এই কারণগুলির মধ্যে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঠিক মাত্রায় হরমোনের ওষুধ বা স্টেরয়েড খাওয়া— এগুলি নিজেদের আয়ত্তেই থাকে। এ ছাড়া সুতির অন্তর্বাস ব্যবহার করলে এই ধরনের ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে।
রোগ চেনার উপায়
কী করে বুঝবেন, অন্য কোনও যৌনবাহিত রোগ নয়, ভেজাইনাল ক্যানডিডিয়াসিসেই ভুগছেন আপনি? স্রাবের নমুনা সংগ্রহ করে তা ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠাতে হয় ফাঙ্গাল কালচারের জন্য। অনেক সময়ে আবার উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসাও করা হয়ে থাকে। এই সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার সময়ে কারও সঙ্গে যৌন সংসর্গে এলে
সেই ব্যক্তিরও সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। তাই অসুখ সারিয়ে নিয়ে তবেই স্বাভাবিক যৌনজীবনে ফেরা ভাল।
প্রতিকার কী?
সাধারণত অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধের সাহায্যেই এই ধরনের ইনফেকশন সারিয়ে তোলেন চিকিৎসকেরা। অনেক সময়ে ওষুধের দোকানে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই এই ধরনের অ্যান্টিফাঙ্গাল মলম বিক্রি করা হয়। তবে আপনার ইস্ট ইনফেকশনই হয়েছে, নাকি অন্য যৌনবাহিত সংক্রমণ, সে বিষয়ে আগে নিশ্চিত হয়ে নিন চিকিৎসকের কাছে গিয়ে। ক্রিম, ট্যাবলেট, জেল বা মলম, সাপোজ়িটরিস... বিভিন্ন ফর্মে এর ওষুধ পাওয়া যায়। খাওয়ার ওষুধও দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।
সাবধানের মার নেই
যৌনাঙ্গের সাধারণ সংক্রমণ থেকে বাঁচতে পরিচ্ছন্ন থাকার পাশাপাশি কয়েকটি সাধারণ নিয়ম মেনে চলুন।
জেট স্প্রে ওয়াশের মাধ্যমে যৌনাঙ্গের ভিতরে সজোরে জল দেবেন না। এতে এমন কিছু ব্যাকটিরিয়া ধুয়ে চলে যায়, যা যৌনাঙ্গকে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে।
যৌনাঙ্গে সুগন্ধিযুক্ত কোনও প্রডাক্ট, বাবল বাথ, স্প্রে, সুগন্ধি প্যাড কিংবা ট্যাম্পনের ব্যবহার না করাই ভাল।
নিয়মিত প্যাড, প্যান্টি পাল্টে পরুন। তা যেন খুব টাইট না হয়। অনেক সময়ে বেশিক্ষণ জিনস পরে থাকলেও ঘাম ও ময়শ্চারে ফাঙ্গাল ইনফেকশন দেখা দিতে পারে। অন্তর্বাস সুতির তৈরি হলেই ভাল।
যৌনাঙ্গের সংক্রমণ ও তার অস্বস্তি সবচেয়ে পীড়াদায়ক। তাই ছোট ছোট কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখলেই এড়ানো সম্ভব ইনফেকশন।