গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
প্রতি বছর এক ঝাঁক নতুন মুখের আগমন ঘটে বিনোদন ও ক্রীড়াজগতে। কেউ অল্প দিনেই প্রচারের আলোয় উঠে আসেন। কেউ হারিয়ে যান আলোকবৃত্ত থেকে। ২০২৩ সালে বেশ কিছু ‘নতুন মুখ’ এসেছে। যাঁদের কাজের দিকে ভবিষ্যতেও নজর থাকবে। আনন্দবাজার অনলাইনের বিচারে বছরের সেরা পাঁচ তারা কারা, দেখে নিন। জেনে নিন।
সারা সেনগুপ্ত
ছবি: সংগৃহীত।
বড় পর্দায় নজর কেড়েছিলেন আগেই, ২০২৩ সালে ফ্যাশন দুনিয়ায় যাত্রা শুরু করেছেন সারা সেনগুপ্ত। গত মার্চে ইউরোপের বিলাসবহুল ফ্যাশন সংস্থা ‘ক্রিস্টিয়ান ডিয়োর’-এর মডেল হয়ে র্যাম্পে হেঁটেছিলেন অভিনেতা যিশু সেনগুপ্তের কন্যা সারা। বয়স তাঁর সবে ১৮, এর মধ্যেই বিশ্বের বাছাই ১০০ মডেলের মধ্যে উঠে এসেছে সারার নাম। ২০১৮ সালে যিশুর সঙ্গেই প্রথম বড় পর্দায় দেখা দিয়েছিলেন সারা। মাত্র ১২ বছর বয়সেই সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘উমা’ ছবিতে স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয় আর মায়াময় চোখে মন জিতে নিয়েছিলেন তিনি। ছোটবেলায় মেকআপ, সাজগোজ, গয়না পরা পছন্দ করতেন না। অল্পবয়সে ব্যালে শিখতেন। পরে ভরতনাট্যমও শেখেন। নাচ ছাড়াও স্কেটিং, টেনিস, বাস্কেটবল খেলতেন। বাবার মতোই খেলাধুলোয় দক্ষ ছিলেন। এ বার ফ্যাশন দুনিয়া কাঁপাতে প্রস্তুত অষ্টাদশী সারা। অবশ্য অভিনয়ের পথও খোলা রাখছেন। বিভিন্ন পরিচালকের কাছ থেকে চিত্রনাট্য শুনছেন মাঝেমাঝেই।
পারিজাত চৌধুরী
ছবি: সংগৃহীত।
দেবালয় ভট্টাচার্য পরিচালিত ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ সিরিজ়ে পারিজাত চৌধুরীকে দেখা গিয়েছে। কিশোরী ইন্দুবালার চরিত্রে পারিজাতের সাবলীল অভিনয় যথেষ্ট প্রশংসনীয়। যদিও অভিনেত্রী হিসাবে অপর্ণা সেনের ‘আরশিনগর’ ছবিতে ক্যামেরার সামনে প্রথম আগমন তার। তার পরে ‘ক্ষত’, ‘পরবাস’, ‘মহানায়ক’ ছবিতে ছোট ছোট চরিত্রে কাজ করেছে। তবে ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ সিরিজ়ে পূর্ববঙ্গের কন্যার চরিত্রে বাঙাল ভাষায় পারিজাতের স্পষ্ট সংলাপ, তীক্ষ্ণ চাউনি, দক্ষ অভিনয়—তার বাকি চরিত্রগুলি ছাপিয়ে গিয়েছে সব দিক থেকে। ১৬ বছরের পারিজাত শ্রীরামপুরের বাসিন্দা। বাবা অধ্যাপক হলেও ইন্ড্রাস্ট্রির সঙ্গে তাঁর যোগ রয়েছে। বাবার হাত ধরেই অভিনয়ের জগতে আসা পারিজাতের। একাদশ শ্রেণির ছাত্রী পারিজাত ভবিষ্যতে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করতে চায়। মনে করে, অভিনয়ের পাশাপাশি পড়াশোনাকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে।
ঐহিকা মুখোপাধ্যায়
ছবি: সংগৃহীত।
ক্রীড়াজগতে মহিলাদের মধ্যে নজরে এসেছেন ঐহিকা মুখোপাধ্যায়। ‘অর্জুন’ পুরস্কার পাচ্ছেন টেবিল টেনিস খেলোয়াড় ঐহিকা। এশিয়ান গেমস ২০২২-এ টেবিল টেনিসে নজির গড়েছেন এই বঙ্গতনয়া। মহিলাদের ডাবল্সে সুতীর্থা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যৌথ ভাবে ব্রোঞ্জ পদক এনেছেন। এশিয়াডের টেবিল টেনিসে সেই প্রথম পদকজয় ভারতের। বাবা গৌতম মুখোপাধ্যায় বিএসএফের হয়ে ফুটবল খেলেছেন। চাইতেন কন্যাও খেলাধুলোয় আসুক। বাবার ইচ্ছাপূরণ করতেই ছ’বছর বয়সে ঐহিকা ভর্তি হন মিহির ঘোষের কোচিং সেন্টারে। এর পরে সাব-জুনিয়র, জুনিয়র ও সিনিয়র বিভাগে রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বরাবর সফল। স্লোভাকিয়া, পোল্যান্ড এবং বেলজিয়াম ওপেনে জুনিয়র বিভাগে পদক জিতেছেন। এ বার ঐহিকার লক্ষ্য অলিম্পিক্স ২০২৪-এ পদক জয়।
কিরণ মজুমদার
ছবি: সংগৃহীত।
শহর জুড়ে বিজ্ঞাপনের হোর্ডিংয়ে এখন একটাই মুখ— কিরণ মজুমদার। একটি গয়নার সংস্থার প্রচারমুখ তিনি। মডেলিংয়ের পাশাপাশি ‘এসভিএফ’-এর বেশ কিছু প্রচারমূলক ভিডিয়োতেও কাজ করেছেন কিরণ। তাঁর অভিনয়ও জনপ্রিয় হয়েছে। ২০১৯ সালে মডেলিং করতে শুরু করেছেন। তবে কয়েক বছর আগে ফ্যাশন দুনিয়ায় আসার কথা কল্পনাও করতে পারেননি। স্কুলে পড়াশোনার সময়ে কিরণের ওজন ছিল ১২০ কেজি। বিনোদন জগতে আসার জন্য নয়, বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার হাত থেকে নিস্তার পেতেই ‘ফ্যাট থেকে ফিট’ হওয়ার যাত্রা শুরু করেন। স্কুল থেকে কলেজের মাঝে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ কেজি ওজন ঝরিয়ে ফেলেন। লকডাউনের সময় সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল কিরণের একটি ভিডিয়ো। তার পরেই একের পর এক কাজের প্রস্তাব আসতে শুরু করে। সমাজমাধ্যমে পরিচিত মুখ কিরণ এর পরে সিরিয়াল নয়, বড় পর্দায় কাজ করতে চান।
অভিকা মালাকার
ছবি: সংগৃহীত।
ছোট পর্দায় নতুন মুখের তালিকায় নজর কেড়েছে ‘তোমাদের রাণী’ সিরিয়ালের অভিকা মালাকার। এই সিরিয়ালের টিআরপি প্রথম দশের মধ্যেই ঘোরাফেরা করে। সিরিয়ালের প্রধান চরিত্র ‘রাণী’র ভূমিকায় অভিনয় করছে অভিকা। এখনও স্কুলের গণ্ডি পার করেনি সে। পড়াশোনা সামলেই অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছে। তার অভিনয় মনে ধরেছে ছোট পর্দার দর্শকের। বয়সে ছোট হলেও অভিনয় দেখে বোঝার উপায় নেই। নাচতে ভালবাসে অভিকা। নাচের শিক্ষকের হাত ধরেই অভিনয় জগতে পদার্পণ। ছোট থেকেই সিনেমা আর সিরিয়ালে অভিনয় করার স্বপ্ন ছিল। ২০২৩ সালে নাচের শিক্ষকের হাত ধরে শিলিগুড়ি থেকে টলিপাড়ায় এসে কাজ শুরু করেছে অভিকা। ২০২৩-এর অগস্টে শুরু হয়েছে তার সিরিয়াল। কয়েক মাসেই সকলর মনে জায়গা পাকা করে নিয়েছে এই শিল্পী। তবে যাত্রা সবে শুরু। এখনও অনেক পথ চলা বাকি অভিকার।