সবুজসম্ভার।
শাক খাওয়ার অভ্যেস ছোটবেলা থেকেই গড়ে তোলা উচিত। তবে যা উচিত, তা করতে বেশির ভাগ মানুষেরই অনীহা। তাই পিৎজ়া-বার্গার খাওয়ার অভ্যেস আজকের প্রজন্মের মধ্যে যত তাড়াতাড়ি গড়ে ওঠে, শাক খাওয়ার প্রবণতা তার ধারেকাছেও নয়। অনেক সময়েই তা খাওয়ার পাতে ব্রাত্য। তবে সবুজ শাকের পুষ্টিগুণ অপরিমেয়। সুস্থ থাকতে এবং রোগবালাই দূরে রাখতে এর জুড়ি মেলা ভার।
ডায়াটিশিয়ান কোয়েল পাল চৌধুরীর মতে, সবুজ শাকে আয়রনের পরিমাণ খুব বেশি থাকে। তাই কিশোরীদের ডায়েটে এর পরিমাণ একটু বেশি থাকাই বাঞ্ছনীয়। কিশোরীদের রোজকার ডায়েটে এর পরিমাণ ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম হলে ভাল। বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে যদি অন্য কোনও সমস্যা না থাকে, তবে এই পরিমাণ চলতে পারে।
বাঙালি বাড়িতে যে শাকগুলি মূলত বেশি খাওয়া হয়, তা হল পালং, নটে, কলমি, সরষে, মেথি, বেতো শাক ইত্যাদি। সাধারণত সব ধরনের শাকেই কম-বেশি ভিটামিন, খনিজ, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস থাকে।
পালং শাক: এতে কার্বোহাইড্রেট কম, তবে ফাইবারের পরিমাণ খুব বেশি। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে এটি খুবই উপযোগী। এ ছাড়া উচ্চ মানের ভিটামিন এ, সি, কে ওয়ান, আয়রন, ক্যালশিয়ামও যথেষ্ট পরিমাণে থাকে। ফোলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ এই শাক অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের জন্য বিশেষ ভাবে উপযোগী।
নটে শাক: এই শাকে ফাইবার, ক্যালশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ়ের পরিমাণ বেশি। ডায়াবিটিস, হার্টের অসুখের নিরাময়ের জন্যও এই শাক পথ্য হিসেবে ভাল। গ্যাসট্রাইটিসের সমস্যায়ও এই শাকের যথেষ্ট উপকারিতা রয়েছে।
কলমি: এই শাকে অ্যামিনো অ্যাসিড, আয়রন, বিটা ক্যারোটিন বেশ ভাল পরিমাণে থাকে। রক্তাল্পতা, ডায়াবিটিস, হার্টের অসুখ, জন্ডিস, চোখের সমস্যায় এটি ভাল কাজ দেয়।
সরষে: ভিটামিন এ, কে ও সি-র উৎস এটি। উৎকৃষ্ট মানের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট পাওয়া যায়। কার্ডিয়োভাসকুলার সমস্যায় এই শাক খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
মেথি: এই শাকের উপকারিতা অপরিসীম। স্তন্যদাত্রী মায়েদের এই শাক খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কারণ ব্রেস্ট মিল্ক উৎপাদনে এই শাক খুব সাহায্য করে। এ ছাড়া ডায়াবিটিস, কার্ডিয়োভাসকুলার রোগের মোকাবিলায় এটি ব্যবহৃত হয়। শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ভাল কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে মেথি। বদহজম, বুক জ্বালার উপশমেও এই শাক ভাল।
লাল নটে: রক্তাল্পতা দূরীকরণে এই শাকের উপযোগিতা রয়েছে। ঋতুস্রাবজনিত নানা সমস্যার পথ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয় এটি।
বেতো: ফসফরাস, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম সমৃদ্ধ এই শাক কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে।
হেলেঞ্চা: এই শাক খিদে-ঘুম বাড়ায়। ত্বকের সমস্যা দূরীকরণে সাহায্য করে। বদহজম, পেটের গোলমালেও আরাম দেয়।
পুঁই: এতে কপার, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ভাল পরিমাণে থাকে। হার্টের অসুখ, ডিমেনশিয়া, ডিপ্রেশনের সমস্যায় শাক খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
লাউ শাক: অ্যানিমিয়া নিরাময়ে কাজ দেয়। চোখের সমস্যা আর লিভার যাতে ভাল ভাবে কাজ করে, তার জন্য এই শাক খেতে বলা হয়।
কুমড়ো শাক: প্রোটিনের উৎকৃষ্ট উৎস। ফাইবারও ভরপুর থাকে। ওজন কমাতে সাহায্য করে। স্তন্যদাত্রী মায়েদের জন্য এই শাক খুব উপযোগী।
ডায়েটে শাক কখন বারণ?
সাধারণত যে কোনও রোগীর পথ্যে শাক রাখাই বাঞ্ছনীয়। তবে ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম, বদহজম ও পেটের সমস্যায় ডায়েটে শাক নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এ ছাড়াও কারও কোনও শাকে অ্যালার্জি হলে, সেই শাক তার ক্ষেত্রে বর্জনীয়।
শাক খাওয়া নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা
অনেকে শাক কাটার পরেও তা জলে ধুতে থাকেন। এতে শাকের মধ্যে জলে দ্রাব্য যে খনিজ পদার্থ থাকে, তা ধুয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই শাক ধোয়ার ক্ষেত্রেও সচেতন হতে হবে।
শরীরে কোনও কারণে আয়রনের অভাব হলে, অনেকে সবুজ শাক খাওয়ার পরামর্শ দেন। তবে শাকের আয়রন শরীরে সরাসরি আত্তীকরণ হয় না। তাই শাক খাওয়ার সময়ে তার উপরে একটু পাতিলেবুর রস ছড়িয়ে নিলে, তা শরীরে তাড়াতাড়ি শোষিত হয়। আয়রনের শোষণে সাহায্য করে পাতিলেবুর ভিটামিন সি।
কিডনির সমস্যা যাঁদের থাকে, তাঁদের ক্ষেত্রে পটাশিয়াম নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তাই তাঁদের ক্ষেত্রে শাক সিদ্ধ করার পরে সেই জল ফেলে দেওয়া শ্রেয়। এতে ডায়েটে ওই রোগীদের ক্ষেত্রে শাকের পটাশিয়াম নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ডায়েটে যেমন শাক রাখা জরুরি, তেমনই কোনও শাক অতিরিক্ত খাওয়াও ভাল নয়।
সাধ্য-সাধনা করলেও অনেক শিশু কিছুতেই শাক খেতে চায় না। তাদের জন্য স্যান্ডউইচের মধ্যে শাকপাতা দিয়ে দিতে পারেন। এতে কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের পরিমাণ কমে। আবার শাকও খাওয়া হয় অমলেট বা স্ক্র্যাম্বেলেও সবুজ শাকপাতা দিতে পারেন বাড়িতে তো ডাল রান্না হয়েই থাকে। তার মধ্যে কয়েকটা পালং পাতা দিতে পারেন। আবার পালং চিকেন, পালং পনির রাঁধতে পারেন। অন্য দিকে যে কোনও শাক দিয়ে বড়া, পকোড়া ভেজে নিয়ে, সস দিয়ে খেতে ভালই লাগে