Technology

বাড়িও এ বার হবে ‘স্মার্ট’

বাড়িকে বানিয়ে তুলুন স্মার্ট এবং জীবন হয়ে উঠুক সহজ। জেনে নিন কী ভাবে তা সম্ভব।

Advertisement

কোয়েনা দাশগুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:৪৯
Share:

বাড়িকে বানিয়ে তুলুন স্মার্ট এবং জীবন হয়ে উঠুক সহজ। প্রতীকী ছবি।

সময় বদলে যায়। সঙ্গে প্রতিনিয়ত বদলায় প্রযুক্তি। তৈরি হয় নতুন পণ্যসামগ্রী। রোজকার জীবন হয়ে ওঠে সহজ। দৈনন্দিন কাজের সময় বাঁচাতে বাজারে চাহিদা বাড়ে আধুনিক নানা যন্ত্রপাতির। নিত্যনতুন প্রযুক্তিপণ্যের দিকে ঝুঁকে পড়া বা প্রযুক্তিবান্ধব পরিবেশে বসবাস এখন আর বিলাসিতা নয়। বরং জীবনযাপনের মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে তা সহায়ক। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় স্মার্ট হয়ে উঠছে দৈনন্দিন ব্যবহারের অনেক কিছুই। স্মার্ট হোম তেমনই একটি বিষয়, যা ক্রমশ আধুনিক জীবনযাপনে স্থান করে নিয়েছে।

Advertisement

স্মার্ট হোম কী?

জীবকুলে মানুষ সবচেয়ে উন্নত প্রাণী। কারণ, সে বুদ্ধিমান ও ‘স্মার্ট’। একই রকম বিষয় বাড়ির ক্ষেত্রেও। ইট, কাঠ, পাথরের বাড়িতে নানা ধরনের ‘বুদ্ধিমান’ যন্ত্রের সংযোজনে সহজ হয়ে ওঠে দৈনন্দিন কাজকর্ম। বাড়ি হয়ে ওঠে স্মার্ট। এই ধরনের বাড়িতে মূলত সব স্মার্ট গ্যাজেটই একটি ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের আওতায় থাকে। যাবতীয় তথ্য এবং নির্দেশ নিয়ন্ত্রিত হতে পারে স্মার্ট ফোন কিংবা ট্যাব থেকেই। পাশপাশি এই ধরনের ব্যবস্থায় ভয়েস কমান্ড বা রেকগনিশনের সুব্যবস্থাও থাকে।

Advertisement

হোম অটোমেশন কী?

স্মার্ট হোমে স্বয়ংক্রিয় ভাবে সব হার্ডওয়্যার ডিভাইস, সফটওয়্যার ও ইন্টারনেটের সমন্বয়ে নিয়ন্ত্রিত হওয়ায়, একে হোম অটোমেশন সিস্টেম বলা হয়। তবে বাড়ি ছাড়াও কারখানা, অফিস, লাইব্রেরি ইত্যাদি জায়গাতেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায়। গ্রন্থাগারের অসংখ্য বইয়ের ঠিক হিসেব রাখা, কোন পাঠকের কাছে কোন বই আছে, তা কবে জমা দেওয়ার কথা ইত্যাদি নানা কাজ সহজ হয় এই ব্যবস্থায়। পাশাপাশি অফিস, কারখানাতে কর্মীদের ঢোকা-বেরোনো সহ নিরাপত্তার নানা বিষয়েরও স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

স্মার্ট হোমে স্বয়ংক্রিয় ভাবে সব হার্ডওয়্যার ডিভাইস, সফটওয়্যার ও ইন্টারনেটের সমন্বয়ে নিয়ন্ত্রিত হওয়ায়, একে হোম অটোমেশন সিস্টেম বলা হয়। প্রতীকী ছবি।

স্মার্ট পরিবেশ ও তার সুবিধে

আমাজ়ন, অ্যাপল বা গুগলের মতো নানা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলি সাম্প্রতিক সময়ে স্মার্ট হোমের উপযোগী বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য করে তুলেছে। অত্যাধুনিক এই সব যন্ত্রপাতির সাহায্যে সহজ করে নিতে পারেন বাড়ির নানা কাজ।

সুরক্ষা ব্যবস্থা

বাড়িতে স্মার্ট লক সুনিশ্চিত করবে আপনার বাড়ির নিরাপত্তা। তালা-চাবির বদলে এই পদ্ধতিতে মোবাইল কিংবা ট্যাবের মাধ্যমে দরজা খোলা-বন্ধ করা সম্ভব। এতে চাবি হারানোর ঝামেলা থেকে যেমন মুক্তি, তেমনই তালা না দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার মতো ভুলের হাত থেকেও রেহাই মিলবে।

এর সঙ্গে বাড়ির বাইরে এবং ভিতরে ক্যামেরার সুবিধেও থাকে। ছবির পাশাপাশি ভিডিয়ো দেখা যায় সেখানে। থাকে ইন্টারকমের সুবিধে। ফলে বাইরে থেকেও যখন খুশি আপনার ফোনে দেখে নিতে পারবেন বাড়ির অবস্থা। এখন অধিকাংশ বাবা-মা চাকুরীজীবী। সেক্ষেত্রে হোম অটোমেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে বাচ্চাদের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করা সহজ হয়। বাড়িতে হঠাৎ কারও আগমন হলে, দরজা না খুলে ঘরে বসেই আগন্তুকের ছবি ও ভিডিয়ো দেখতে পাওয়া যায়। ঘরে বসেই দরজার বাইরে থাকা অতিথির সঙ্গে কথাও বলা যায়।

এই ব্যবস্থায় থাকা ইলেক্ট্রনিক লকে মুখ কিংবা আঙুলের ছাপ চিহ্নিতকরণ, ভয়েস কম্যান্ডের সুবিধে থাকে। অপরিচিত মানুষ বাড়ির তালা, কাচের দরজা-জানালা খোলা বা ভাঙার চেষ্টা করলে মোশন ডিটেকশন লাইটিং ও মোশন ডিটেকশন অ্যালার্মের মাধ্যমে পুলিশ এবং বাড়ির মালিকের কাছে স্বয়ংক্রিয় ভাবে বেজে ওঠে সাইরেন, যার ফলে সহজেই চুরি-ডাকাতি রোধ করা যায়।

স্মার্ট ঘর

নিরাপত্তার পাশাপাশি বাড়ির যাবতীয় গ্যাজেট ও অ্যাপ্লায়ান্সেস নিয়ন্ত্রিত হতে পারে স্মার্টলি। স্মার্ট টিভি, মিউজ়িক সিস্টেম, স্পিকার, প্রিন্টার এখন ঘরে ঘরে পরিচিত। পাশাপাশি বাড়িতে লাগাতে পারেন স্মার্ট আলো, পাখা। হাতে থাকা স্মার্ট ফোন দিয়েই পাখার গতি, আলোর রং কিংবা উজ্জ্বলতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। শীততাপ নিয়ন্ত্রণের যন্ত্রটিকেও এই স্মার্ট ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত করতে পারেন। এতে ঘোর গরমে বাড়ি ফেরার আগেই ঘর হয়ে যাবে ঠান্ডা। আবার আপনার মূল্যবান সময় বাঁচাবে স্মার্ট ভ্যাকুয়াম ক্লিনারটি। অফিসে বসে একবার শুধু চালিয়ে দিলেই হল। ঘরের নানা কোনার ধুলো খুঁজে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার নিজেই পরিষ্কার করে দেবে।

পাশাপাশি ঘরের পর্দাও নিয়ন্ত্রিত হতে পারে স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে। রয়েছে স্মার্ট আসবাবপত্রও। খাটের বক্স, আলমারির ড্রয়ার ইত্যাদি স্বয়ংক্রিয়ভাবে খোলা-বন্ধ করাও যায়। জলের ট্যাঙ্কও হতে পারে স্মার্ট। তাতে কতটা জল রয়েছে, সেই জলের তাপমাত্রা, কখন তাতে জল ভরা প্রয়োজন ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে ফোনের মাধ্যমেই। স্মার্ট ওয়াটার ফিল্টার নির্দিষ্ট সময়অন্তর তা পরিষ্কার করার কথা মনে করিয়ে দেবে।

স্মার্ট রান্নাঘর

এই ব্যবস্থায় গ্যাস আভেন থেকে শুরু করে মাইক্রো আভেন, রেফ্রিজারেটর, ইনডাকশন, কফি মেকার, ইলেকট্রিক কেটল, এয়ার ফ্রায়ার, স্যান্ডউইচ মেকার, জুসার, চিমনি ইত্যাদি রান্নাঘরের সকল আধুনিক জিনিসই স্বয়ংক্রিয় ভাবে কেবল আপনার কণ্ঠের নির্দেশের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হতে পারে।

স্মার্ট বাথরুম

বাথরুমের আলো, পরিবেশ, সুগন্ধের পাশাপাশি কল, শাওয়ার, গিজ়ার, ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদি শুধু মোবাইলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়, তাইই নয়, এই সবও বাড়ির বাইরে থেকেই চালু কিংবা বন্ধও করা যায়। ফলে বাড়ির কাজ সারার জন্য এখন আর একবারেই বাড়িতে থাকার প্রয়োজন নেই।

প্রয়োজনীয় অ্যালার্ম

স্মার্ট এই উপায় ব্যবহার করা যায় ফায়ার অ্যালার্মে। অনেক সময়েই বাড়ির গ্যাস, বিদ্যুৎ ইত্যাদি লাইনে সামান্য লিকেজ থাকার ফলে শর্ট সার্কিট হয়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটার ভয় থাকে। স্বয়ংক্রিয় এই ব্যবস্থায় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা কমে। আপৎকালীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু হয়ে যায় নিজে থেকেই।

রয়েছে নানা অসুবিধেও

বাড়িকে স্মার্ট বানানোর অর্থ কিন্তু এই নয় যে পুরনো বাড়ি বিক্রি করে, নতুন বাড়ি কিনতে হবে। পুরনো বাড়িতে এই ব্যবস্থা করতে শুধু প্রয়োজন পেশাদারের সাহায্য। তবে নানাবিধ সুবিধের পাশাপাশি এই স্মার্ট ব্যবস্থায় রয়েছে বহু অসুবিধেও।

এই ব্যবস্থা ব্যয়বহুল। আপনার বাড়ির বর্তমান অবস্থার সঙ্গে এই ব্যবস্থা কতটা মানিয়ে নিতে সক্ষম, তা বিনিয়োগের আগে ভাল করে খোঁজ নিয়ে নিন।

প্রযুক্তি নির্ভরতা ভাল, তবে হঠাৎ তা খারাপও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে অসুবিধেও বেশি। তাছাড়া, অটোমেশন ব্যবস্থা বাড়িতে শুধু এক বার ইনস্টল করলেই হয় না। নিয়মিত আপডেট করা প্রয়োজন। ঠিক সুবিধে পেতে সময়ের সঙ্গে বদলাতে হয় যন্ত্রপাতি।

পুরো বিষয়টিই নিয়ন্ত্রিত হয় ইলেকট্রিক এবং ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে। ইন্টারনেটবা ইলেকট্রিক পরিষেবা কখনও ব্যাহত হলে গুরুতর সমস্যারসম্মুখীন হতে হবে।

দৈনন্দিন কাজ সহজ হলেও এর ব্যবহার শেখা খুব সহজ নয়। এই ব্যবস্থা পরিচালনার জন্যও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন।

চুরি-ডাকাতির মতো বিষয় এড়াতে পারলেও ভয় থেকে যায় হ্যাকারদের। এ ক্ষেত্রে হ্যাকার যদি কোনও ভাবে মোবাইলটি হ্যাক করতে পারে, তবে বাড়ি চলে যাবে তার হাতের মুঠোয়।

মনে রাখবেন, স্মার্ট হোম কিন্তু একেবারেই পরিবেশ বান্ধব নয়। বরং এ ধরনের প্রযুক্তি কিন্তু পরিবেশের ক্ষতি করে।

তবে অসুবিধে তো সব জিনিসেই থাকে। তা বলে কি নতুনের সঙ্গে পা মিলিয়ে চলা বাদ যায়? ব্যবহার করতে করতেই সব জিনিস সহজ হয়ে ওঠে। তাই অসুবিধের কথা মাথায় রেখে সতর্ক ভাবে ক্ষমতা ও সুযোগ মতো স্মার্ট হোমের সঙ্গে ধীরে ধীরে আপনিও হয়ে উঠুন আরও স্মার্ট।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement