শহরের এক রেস্তরাঁয় নববর্ষের বিশেষ বাঙালি থালি। ফাইল ছবি।
চৈত্র-শেষের জ্বালা ধরানো গরমে সুস্থ থাকতে দেওয়া হয়েছে একগুচ্ছ নিদান। রয়েছে পরিমিত আহারের পরামর্শও। কিন্তু কব্জি ডুবিয়ে খেতে পেটুক বাঙালির এমনিতেই কোনও অজুহাত লাগে না। আর সেখানে বৈশাখের প্রথম দিন তো সুবর্ণ সুযোগ। তাই গরমকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে রকমারি পেটপুজোর সন্ধানে রয়েছেন অনেকেই। আর এই গরমে পেট পুরে ভোজনের পরেও যাতে অস্বস্তি না হয়, সে দিকে খেয়াল রেখে প্রস্তুতি সেরেছে রেস্তরাঁগুলিও।
শহরে বাঙালি খাবারের অন্যতম পুরনো রেস্তরাঁ, পিয়ারলেস ইন-এর ‘আহেলী’ পা দিচ্ছে তিরিশে। তাদের বাংলা নববর্ষের খাদ্য তালিকায় তাই মিলবে এক-এক বছরের বাছাই করা পদ। গরমের কথা মাথায় রেখে চিরন্তন আমপোড়া সরবত বা ডাবের জলের পাশাপাশি রয়েছে ‘অবাক জলপান’-এর মতো বিশেষ পানীয়ও। নানা উৎসবের মেনু ও শেফদের উদ্ভাবনের তালিকা থেকে হাজির ধুম্রগন্ধী ইলিশ, জিরা ঝালে চিতল পেটি, রুই মাছের পাটিসাপটা, কোচবিহারি চিংড়ি পোলাওয়ের মতো পদ। হতাশ হবেন না নিরামিষাশীরাও। লুচি বা বাসন্তী পোলাওয়ের সঙ্গী হিসাবে তাঁদের জন্য রয়েছে ফুলকপি রাই সর্ষে পালং, তিল পোস্ত ভরা পটল, মোচার ধোকার ডালনা। থালি বা আ-লা-কার্তে— যা পছন্দ আপনার।
বাঙালি খাবারের সমঝদারদের জন্য ‘ওহ! ক্যালকাটা’ আবার হাজির করেছে একগুচ্ছ পদ। রবিবার দুপুর পর্যন্ত বুফের আয়োজনে রয়েছে সবাইকে খুশি করার মতো একাধিক রান্না। খাদ্য-পানীয়ের তালিকায় সুগন্ধী উপস্থিতি মরসুমি আম-গন্ধরাজ লেবু-আম আদার। কলকাতা ফিশ ফ্রাই, চিতল মাছের মুইঠ্যা, দই-কাতলা, সর্ষে-নারকোল চিংড়ি, কাজু-কিশমিশ পোলাও, লুচি-ছোলার ডালের পাশাপাশি ব্রাত্য নয় কাবাব বা দইবড়াও। নিরামিষের তালিকায় পেঁয়াজকলি আলুর দম, খেয়ালি কোর্মা, রাজবাড়ির কাঁচকলার কোফতা বা আম-আদা পনির রোস্টের লোভনীয় ডাক। শেষ পাতে গুড়ের পায়েস, কেশর কালাকাঁদ।
‘৬ বালিগঞ্জ প্লেস’-এর বিভিন্ন শাখায় মিলবে আমিষ-নিরামিষ থালি। গরমের কথা মাথায় রেখেই শুরুটা আম-পুদিনার শরবত সহযোগে। পরে বেছে নেওয়া যেতে পারে ছানা-মটরশুঁটির চপ, নবরত্ন পাতুরি, মোচার ঘন্ট, পটলের দোলমা। আমিষ থালিতে মিলবে আফগানি চিকেন কাটলেট, মুরগির আলওয়ানি কারি, কষা মাংস। স্বাদ উপভোগের জন্য সঙ্গতে গোবিন্দভোগের কেশরি পোলাও বা সাদা ভাত। হালকা খাবার চাইলে নিতে পারেন বড়ি দিয়ে মিষ্টি কুমড়োর ভর্তা, ঝুরঝুরে আলু ভাজা ও মটরশুঁটি দিয়ে মুগ ডাল। রাবড়ির সঙ্গে বেকড মিহিদানা, যমুনা ক্ষীরের পান্তয়ায় মিষ্টিমুখের আয়োজন।
বছরের আর পাঁচটা দিনে ‘ফিউশন’ ঘেঁষা পদ পরিবেশন করলেও নববর্ষের দিনটায় খাঁটি বাঙালি খাবারেই মন জয় করতে চায় দক্ষিণের ‘৩৭ রেলিশ রুট’। ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত মিলবে চার রকম থালি। এঁচোড়ের কালিয়া, নারকেলি ছোলার ডাল, দই পটলের মতো নিরামিষ পদের পাশাপাশি রয়েছে গন্ধরাজ চিকেন ফ্রাই, ধনেপাতা কাঁচালঙ্কা বাটা মুরগি, পাবনার পার্শে ঝাল, বরিশালি চিংড়ি বা কষা মাংসের হাতছানি। সঙ্গে মিষ্টি দই বা কমলাভোগে মধুরেণ সমাপয়েৎ। তবে, তার পরেও চেখে দেখতে পারেন বাতাসা-তেঁতুলের শরবত। প্রথমে হোক বা শেষ পাতে, গরম কমাতে এবং হজম করাতে এই শরবতের জুড়ি নেই বলেই জানাচ্ছেন সেখানকার শেফ।
গড়িয়াহাটের ‘বাবু কালচার’-এ আবার নববর্ষের এক দিন আগেই শুরু হয়েছে উৎসব। বিশেষ থালি মিলবে রবিবার পর্যন্ত। তাদের ‘ব্যালান্সড ডায়েট’-এ আমিষের পাশাপাশি সমান উপস্থিতি নিরামিষেরও। তাই বরিশালি মুরগি বাটা, কষা মাংস, গলদা মালাইকারিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে রয়েছে মোচার মালাই চপ, পটল কালোজিরে বাটা, কমলা কারিপাতা আলুর দম বা ফুলকপি আম-কাসুন্দি। এখানেও কাঁচা আমের গ্রীষ্ম-স্পেশ্যাল উপস্থিতি শরবত এবং চাটনি রূপে। শেষ পাতে পায়েসের শীতল ছোঁয়া।
বছরভর বিশ্বজনীন স্বাদের খোঁজে থাকলেও বিশেষ বিশেষ দিনে শিকড়ের খোঁজ করতে মন চায় বইকি! ১৪৩০-কে স্বাগত জানাতে তাই পাতে বাংলারই উজ্জ্বল উপস্থিতি।