বেড়ানোর সময়ে অনেক সময়েই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সুযোগ থাকে না। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বা গহিন অরণ্যে পরিচ্ছন্ন শৌচালয় পাওয়া মুশকিল। ট্রেনে বা গাড়িতে ট্রাভেল করার সময়েও তাই। তা ছাড়া পরিশ্রুত পানীয় জলের সমস্যা, ফুড পয়জ়নিংয়ের আশঙ্কা, হঠাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তনে শরীর খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা, পোকামাকড়ের আক্রমণ ইত্যাদি তো রয়েছেই। তবে সাধারণ কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলে ভ্রমণের সঙ্গী হবে না দুশ্চিন্তা।
জরুরি পরিচ্ছন্নতা
যে সব জায়গায় পরিচ্ছন্নতার সমস্যা থাকতে পারে, সেখানে আগে থেকেই প্রস্তুত হয়ে বেরোনো প্রয়োজন। ধরুন, আপনি গাড়িতে অনেকটা পথ যাচ্ছেন একটানা। হাইওয়ের উপরের ফুয়েল পাম্প, ধাবা বা হোটেল ইত্যাদি জায়গাই তখন শৌচালয়ে যাওয়ার একমাত্র উপায়। সেখানে শৌচাগারে যাওয়ার সময়ে অবশ্যই টয়লেট সিটে স্যানিটাইজ়ার স্প্রে ব্যবহার করুন। স্প্রে করার পরে দশ সেকেন্ড মতো অপেক্ষা করে তার পরে ব্যবহার করুন টয়লেট সিট। শৌচাগার না থাকলে বা ব্যবহারের অযোগ্য হলে সে ক্ষেত্রে ব্যবহার করার জন্য সঙ্গে রাখতে পারেন মলি শিট জাতীয় ডিসপোজ়েবল আন্ডারপ্যাড। শিশু কিংবা বৃদ্ধদের নিয়ে জার্নি করলে খুবই কাজে লাগে এগুলি। কাজ চলতে পারে পুরনো, বাতিল কাগজ দিয়েও।
সংক্রমণ থেকে সাবধান
বেড়াতে গেলে বাচ্চাদের জল ফুটিয়ে খাওয়ান অনেকে। কেউ আবার মিনারেল ওয়াটার কিনে খাওয়ায় বিশ্বাসী। ওয়াটার ফিল্ট্রেশন বা পিউরিফিকেশন ডিভাইস রয়েছে, এমন জলের বোতল কিনতে পাওয়া যায়। এই ধরনের বোতলের ফিল্টার প্রায় ৪০০০ লিটার জল পরিশ্রুত করার ক্ষমতা রাখে। অর্থাৎ একবার কিনলে তা বছর তিনেক ব্যবহার করা যেতে পারে। বেড়ানোর সময়ে এ রকম একটি বোতল সঙ্গে নিয়ে বেরোলে বারবার জল কিনে বা ফুটিয়ে খাওয়ার ঝঞ্ঝাট থাকবে না। তা ছাড়া জল পরিশ্রুত করার জন্য ওয়াটার পিউরিফাইং লিকুইড, পাউডার, ট্যাবলেট ইত্যাদিও পাওয়া যায়।
দুশ্চিন্তার তালিকায় যুক্ত হয়েছে কোভিডের সংক্রমণ। পর্যাপ্ত পরিমাণে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার সঙ্গে রাখুন। ভিড়, বাজারজাতীয় জায়গা এড়িয়ে চলুন। যে সব রাজ্যে ট্রাভেল করার আগে আরটিপিসিআর টেস্ট করানো আবশ্যক, সে সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে রাখতে হবে আগে থেকেই।
ব্যাক টু বেসিক
বেড়ানোর আগে গোছগাছ করার সময়ে হজমের ওষুধ, প্যারাসেটামল, ব্যান্ড-এড, তুলো, আয়োডিন ইত্যাদি সমেত ফার্স্ট-এড কিট সঙ্গে রাখা জরুরি। জঙ্গলে গেলে মশা, পোকামাকড়ের হাত থেকে বাঁচার মলম বা স্প্রে সঙ্গে ক্যারি করুন। জোঁকের আক্রমণ থেকে বাঁচতে তামাক পাতা রাখা যায় মোজার মধ্যে।
অনেকে বেড়াতে গেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভোগেন। তার জন্য ওষুধ বা লিকুইড সঙ্গে নিন। বাচ্চাদের জন্য সঙ্গে নিতে পারেন গ্লিসারিন সাপোসিটরি। বেড়াতে গিয়ে সঙ্গে জলের বোতল রাখাটা দরকার। নিজেকে হাইড্রেটেড রাখলে শরীর আপনিই তরতাজা থাকবে।
জানুন জায়গাটিকে
যে অঞ্চলে আপনি বেড়াতে যাচ্ছেন, সেখানকার আবহাওয়া, রাস্তাঘাটের সুগমতা, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি বিষয়ে একটু গবেষণা করে নেবেন সব সময়ে। যেমন, লাদাখ বা গুরুদোংমারের মতো উঁচু জায়গায় বেড়াতে গেলে যে অল্টিচিউড সিকনেস হতে পারে, তা আগে থেকে জেনে প্রস্তুত হয়ে যাওয়াই ভাল। বিশেষ কিছু ওষুধ পাওয়া যায়, এই ধরনের অসুস্থতা এড়াতে। যে জায়গাতেই যান, সেখানকার জলবাতাসের সঙ্গে ধাতস্থ হওয়ার জন্য অ্যাক্লাইমেটাইজ়েশন খুব জরুরি। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় এক-দু’দিন ‘রেস্ট ডে’ রাখুন। সে দিনটা পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখুন। শরীর নিজের মতো অ্যাডজাস্ট করে নেওয়ার সুযোগ পাবে। না হলে হঠাৎ বেশি উচ্চতায় গেলে বমি পাওয়া, মাথা ঘোরা, শ্বাসকষ্টের মতো নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
সাধারণ কিছু সাবধানতা বেড়ানোর দিনগুলি নিশ্চিন্ত করে তুলতে পারে। দরকার শুধু ঠিকঠাক পরিকল্পনার।