করোনা আবহে মানসিক উদ্বেগ, বাড়ছে ঋতুস্রাবের সমস্যা। ছবি-শাটারস্টক থেকে নেওয়া
করোনা-কালে অনিয়মিত ঋতুস্রাবে ভুগছেন অনেক মহিলা । কারও ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট তারিখ এগিয়ে যাচ্ছে, তো কারও পিছিয়ে৷ কারও খুব কম ঋতুস্রাব হচ্ছে তো কারও এত হচ্ছে যে সামলাতে হিমশিম অবস্থা৷ দু-এক মাস পিছিয়ে গেলে বা না হলে, গর্ভসঞ্চার হল ভেবে বাড়ছে উদ্বেগ৷ অথচ সংক্রমণের ভয়ে যেতে পারছেন না ডাক্তারের চেম্বারে৷ যার অবধারিত পরিণতি খিটখিটে মেজাজ৷ অধৈর্য৷ অশান্তি বেড়ে গিয়েছে সংসারে৷ অথচ কোনও সমাধান খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না৷
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ শংকরনাথ মিত্র জানিয়েছেন, “এত টেনশনের কিছু নেই৷ এ সময় এ রকম হতেই পারে৷ কারণ সংক্রমণের ভয়ে সবারই মানসিক চাপ বেড়েছে৷ উদ্বেগপ্রবণ মানুষের আরও বেড়েছে৷ লকডাউনের মধ্যে খাওয়া-ঘুম-ব্যায়াম, সব নিয়মেই ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছিল৷ তার প্রভাবও পড়েছে৷
ঠিক কীভাবে কী হয়, তা হুবহু না জানা গেলেও এটা ঠিক যে মানসিক চাপ বাড়লে ব্রেনের হাইপোথ্যালামাসের কাজে কিছুটা ব্যাঘাত হয়৷ যার হাতে আছে পিটুইটারি গ্রন্থির ভার, যে নিয়ন্ত্রণ করে ওভারিকে৷ আর ওভারির কার্যকারিতা এলোমেলো হওয়ার অর্থ স্ত্রী হরমোনের তারতম্য৷ ফল, পিরিয়ডের গোলমাল৷ কখনও এর সঙ্গে শুরু হয় চুল পড়া ও ব্রণর উপদ্রব৷ কারও ওজন কমে৷”
আরও পড়ুন: করোনা আবহে ডায়ারিয়া! এই অবস্থায় শিশুদের সুরক্ষা নিন এ ভাবে
সমাধান
করোনা আবহেই রাস্তাঘাটে বেরোতে হবে, কাজ করতে হবে৷ সে কারণে যদি মানসিক চাপ আরও বাড়তে থাকে, শুধু পিরিয়ডের গোলমাল নয়, শারীরিক অসুস্থতা থেকে মানসিক বিপর্যয় হতে পারে৷ কাজেই নিজের মন ভাল রাখার রাস্তা খুঁজুন৷ যেমন—
বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করুন৷ দেখবেন তাঁদের মধ্যেও কারও কারও এই সমস্যা হয়েছে৷ কাজেই আপনি একা নন৷ এতে মাথা কিছুটা হালকা হবে৷ ধীরে ধীরে লকডাউন থেকে পুরোনো ছন্দ ফিরছে জীবন। তাতেও কিছুটা সুরাহা হতে পারে৷ যোগাভ্যাস ও মেডিটেশনে মানসিক চাপ কমে তার নিশ্চিত প্রমাণ আছে৷ কাজেই নিয়মিত অন্তত মিনিট ২০ যোগব্যায়াম করুন ৷ মিনিট ২০ একটু জোর কদমে হাঁটুন৷ এতেও মানসিক চাপ কম থাকে৷ স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন৷ অন্য কোনও কারণে এ রকম হচ্ছে কিনা তাও জানা দরকার৷ প্রয়োজনে তাঁর পরামর্শমতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান ও ওষুধ খান৷ এতদিন যেমন ঘরে বানানো সুষম খাবার খেয়ে এসেছেন, এখনও সেটা বজায় রাখুন৷ সম্ভব হলে কিছুটা পুষ্টি বাড়ানোর দিকে নজর দিন৷
আরও পড়ুন: খাবারে চিনি, রোজ পাতে মিষ্টি ? হৃদরোগের সম্ভাবনা কতটা ?
কয়েকটি ঘরোয়া অনুপানে পিরিয়ডের সমস্যা কমে বলে জানা গেছে৷ খেয়ে দেখতে পারেন৷ তাতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে, যার এই মুহূর্তে খুবই প্রয়োজন৷ যেমন-
কাঁচা পেপের রস খেলে পিরিয়ড নিয়মিত হয় বলে জানা গেছে৷ কয়েক মাস খেয়ে দেখতে পারেন৷ তবে পিরিয়ড চলাকালীন খাবেন না৷ কাঁচা হলুদ হরমোনের ক্ষরণ কিছুটা স্বাভাবিক করতে পারে৷ প্রদাহ কম রাখে, তাতে ব্যথা কমে৷ হলুদের ব্যথানাশক গুণও আছে৷ কাজেই রোজ সকালে এক চামচ কাঁচা হলুদ বাটা এক গ্লাস উষ্ণ দুধে মিশিয়ে খান৷ একটু গোলমরিচ গুড়ো মিশিয়ে কাঁচা হলুদ বাটা খান ভাতের সঙ্গে৷ পিরিয়ডের গোলমাল ঠিক হওয়ার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে, যা এই মুহূর্তে খুবই দরকার৷ অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী গাছ থাকলে পাতার ভেতরের মজ্জা মধু দিয়ে খালিপেটে খেতে পারেন৷ এতেও পিরিয়ড স্বাভাবিক হতে পারে৷ এক চামচ আদাবাটা জলে ৫ মিনিট ফুটিয়ে সেই জল দিনে ৩ বার খান, খাওয়ার পরে৷ দু-চামচ জিরে সারারাত জলে ভিজিয়ে রেখে সেই জল খান সকালে৷ গরম দুধে একচামচ দারচিনির গুড়ো মিশিয়ে খেলে পেটব্যথা কিছুটা কমবে৷