Throat Choking

শুধু বিষম লেগেই বছরে মৃত্যু লক্ষাধিক মানুষের, কাদের ঝুঁকি বেশি

তাড়াহুড়ো করে খাবার খেতে গেলে বিষম খেয়ে বা গলায় খাবার আটকে শ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

Advertisement

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২০ ১৩:০৩
Share:

প্রতি বছর ১ কোটি মানুষ গলায় খাবার আটকে বিপদে পড়েন। ফাইল ছবি।

করোনার ভয়ে অন্যান্য শারীরিক সমস্যা মোটেও হাত গুটিয়ে বসে নেই। ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া বা হেপাটাইটিসের মতো সংক্রামক রোগের সঙ্গে প্রবল পরাক্রমে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে লাইফস্টাইল ডিজিজ। তবে এ সবের মধ্যে সব থেকে সমস্যা, নিজেদের ভুলে গলায় খাবার বা অন্য কিছু আটকে গিয়ে দম বন্ধ হয়ে যাওয়া। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলে ‘চোকিং’। প্রতি বছর ১০ মিলিয়ন মানুষ গলায় খাবার আটকে বা অন্য কিছুতে শ্বাস আটকে গিয়ে ভয়ানক বিপদে পড়েন।

Advertisement

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতি ২ ঘণ্টায় ১ জন মানুষ গলায় খাবার বা অন্য কিছু আটকে গিয়ে স্রেফ দম বন্ধ হয়ে মারা যান। সব থেকে বেশি গলায় আটকে যাওয়ার ঘটনা ঘটে শিশু ও সিনিয়র সিটিজেনদের। ৫ বছরের কম ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষদের মধ্যে তাড়াহুড়ো করে খাবার খেতে গিয়ে বিষম খেয়ে দম আটকে খুব কষ্টকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয়, বলছিলেন মেডিসিনের চিকিৎসক দীপঙ্কর সরকার। তাই ধীরেসুস্থে খাবার খেতে পরামর্শ দিলেন দীপঙ্করবাবু।

একই সঙ্গে তিনি এও জানালেন যে, শুকনো খাবার গলায় আটকে যেতে পারে, এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এক সঙ্গে অনেকটা খাবার খাওয়া ও খাওয়ার সময় কথা বলার ব্যাপারেও সাবধানতা মেনে চলা উচিত।

Advertisement

আরও পড়ুন: বাঁচবে সময়, খেতেও দারুণ, করোনা আবহে বাড়ির খাবার হোক এ রকম

পুরনো সেই দিনের কথা

১৯৬০ সালে বাঙালি প্রথম এক অবিশ্বাস্য আর ভয়ানক ঘটনার কথা শুনেছিল। ভারতীয় বায়ুসেনার প্রথম বাঙালি এয়ার মার্শাল সুব্রত মুখোপাধ্যায় ১৯৬০ সালের ৮ নভেম্বর জাপানের টোকিও শহরের এক নামি রেস্তোরাঁয় বন্ধুর সঙ্গে ডিনার করতে গিয়ে গলায় খাবার আটকে শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যান। বেশ কয়েক বছর আগে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ গলায় খাবার আটকে প্রায় মৃত্যুর দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু চিকিৎসকদের তৎপরতা ও দক্ষতা বাঁচিয়ে দিয়েছিল তৎকালীন মার্কিন সাম্রাজ্যের সর্বময় কর্তাকে। অবশ্য এতটা সৌভাগ্য হয়নি বেসবল খেলোয়াড় জিমি ফক্স বা নাট্যকার টেনিসি উইলিয়ামের। গল্পগুজব করতে করতে খাওয়ার সময় গলায় মাংসের হাড় আটকে মারা গিয়েছেন এঁরা দু’জনেই।

অ্যাস্ফিক্সিয়া থেকে অ্যানোক্সিয়া

এই খটমট শব্দ দু’টি বেশির ভাগ মানুষের কাছে একেবারেই অচেনা। খাবারের টুকরো গিলতে গিয়ে বিষম খেয়ে বা বা ফরেন বডি গলা দিয়ে শ্বাসনালীতে আটকে গিয়ে প্রাণঘাতী সমস্যা হয়। শ্বাসনালীতে কিছু আটকে গেলে ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। এর ফলে নিঃশ্বাসের কষ্ট আর কাশি অবধারিত। শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাবার ডক্তারি নাম ‘অ্যাস্ফিক্সিয়া’। শ্বাসনালী একেবারে বন্ধ হয়ে গেলে অক্সিজেন সরবরাহ প্রায় বন্ধ হয়ে গেলে হার্ট ও ব্রেন অক্সিজেনের অভাবে কাজ করতে পারে না। শরীরের অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক হয়ে ওঠে। এই অবস্থাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে ‘অ্যানোক্সিয়া’। এই অবস্থায় অবিলম্বে কৃত্রিম উপায়ে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ শুরু না করলে রোগীকে বাঁচানো মুশকিল হয়ে পড়ে।

পাঁজরের ঠিক নিচে চাপড় মারলেও শ্বাসনালীতে আটকে থাকা খাবারের টুকরো বেরিয়ে আসে। ফাইল ছবি

কখন সাবধান হবেন

বাচ্চাই হোক বা বয়স্ক মানুষ, গলায় কিছু আটকে গেলে কয়েকটা লক্ষণ দেখলে অবিলম্বে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্যে নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। মনে রাখবেন, এখানে সময়ের দাম অনেক বেশি। সময় নষ্ট করলে জীবন দিয়ে তার দাম দিতে হবে। শ্বাসনালীতে কিছু আটকে গেলে প্রথমেই মানুষটির নিঃশ্বাসের কষ্ট হবে। এর জন্যে কাশি হবে, বুকের মধ্যে সাঁই সাঁই শব্দ, বমি বা বমি বমি ভাব, কথা বলতে না পারা, এমনকি বা অক্সিজেন ইনটেক একেবারে বন্ধ হয়ে গেলে রোগীর ঠোঁট নীল হয়ে সে অজ্ঞান হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে ৭ – ১২ মিনিটের মধ্যে চিকিৎসা শুরু না করলে রোগীকে বাঁচানো মুশকিল।

আরও পড়ুন: রোগ প্রতিরোধে পাতে থাকুক টক দই, তবে খাওয়ার আগে মাথায় রাখুন এ সব

কাদের ঝুঁকি বেশি

খাওয়ার সময় বিষম খেলেই যে দম আটকে যায় তা নয়, কিছু কিছু অসুখ থাকলে সাবধান হওয়া উচিত। অ্যাজমা, সেরিব্রাল পলসি, স্ট্রোক, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস, নার্ভের অসুখ, ইসোফেগাস বা খাদ্যনালীর টিউমার, পার্কিনসনস ডিজিজ, মাসকিউলার ডিস্ট্রফি, মস্তিষ্কে চোট আঘাত, কাঁপুনি ও জ্বর, এপিলেপ্সি, খাবার গিলে খাওয়ার অসুবিধে ইত্যাদি সমস্যা থাকলে খাওয়ার সময় সতর্ক থাকা দরকার। অবশ্য সাধারণ মানুষেরও তাড়াহুড়ো করে খাবার খেতে গেলে বিষম খেয়ে বা গলায় খাবার আটকে শ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

কী করতে হবে

আতঙ্কিত না হয়ে মাথা ঠান্ডা রেখে রোগীকে কাশতে বলুন। একই সময়ে পিঠে চাপড় মেরে গলায় আটকানো খাবারের টুকরো বেরিয়ে আসতে পারে। কিন্তু এতেও সমস্যা না কমলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে, বললেন ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ পুষ্পিতা মণ্ডল।

আরও পড়ুন: জ্বর না হয়েও করোনা আক্রান্ত অনেকেই, এ সব বিষয়ে সতর্ক হতে বলছেন চিকিৎসকরা​

পিঠে চাপড় মারার পাশাপাশি পাঁজরের ঠিক তলায় চাপড় মারলেও শ্বাসনালীতে আটকে থাকা খাবারের টুকরো বেরিয়ে আসে। হেনরি হেইলমলিক নামক এক চিকিৎসক-নির্দেশিত ‘হেইলমলিক ম্যানিউভার’ নামক এক বিশেষ পদ্ধতিতে রোগীকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ডায়াফ্রাম অর্থাৎ পেট ও পাঁজরের সংযোগস্থলে (এপিগ্যাসট্রিয়াম) দু’হাতে মোচড় দেওয়ার মতো জোরে ধাক্কা দিলে আটকানো খাবারের টুকরো বেরিয়ে আসে। তবে প্রশিক্ষিত প্যারামেডিক্যাল স্টাফেরা এই কাজ করতে পারেন।

বাড়িতে বয়স্ক মানুষ থাকলে ব্যাপারটা জেনে রাখলে ভাল হয়। স্কুল, কলেজ, রেস্তরাঁ, পাড়ার ক্লাব মেম্বার আর অ্যাম্বুলেন্সের কর্মীদের এই প্রশিক্ষণ থাকলে অনেক বড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement