দিল্লি শহরের তিন স্মৃতিসৌধ আজও মুঘল আমলের সেই তিন নারীর ইতিহাস বহন করে চলেছে। ছবি: সংগৃহীত।
পৃথিবীর যত বিখ্যাত স্থাপত্য রয়েছে, সেগুলির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কোনও না কোনও পুরুষের নাম। হয়তো ভালবেসে তাঁরা তাঁদের স্ত্রী, বোন বা মায়ের জন্যই তৈরি করেছিলেন সেই স্থাপত্য। কিন্তু সেখানে মহিলাদের কোনও কৃতিত্ব ছিল না। একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে মেয়েদের সমান অধিকার, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলা নিয়ে এত লড়াই হয় চারদিকে, তখন মুঘল আমলের ছকভাঙা তিন নারীর কথা না বললেই নয়। যাঁরা সেই সময়ে নিজ দায়িত্বে, নিজেদের নামে স্থাপত্য গড়ে তুলেছিলেন। দিল্লি শহরের সেই তিন স্মৃতিসৌধ আজও তাঁদের ইতিহাস বহন করে চলেছে।
দিল্লির কোন কোন সৌধের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে সেই সময়ের তিন বিদুষীর নাম?
১৫৬১ সালে মুঘল আমলের এক বিদুষী নারী মহাম আঙ্গা এই মসজিদটি তৈরি করেন। ছবি: সংগৃহীত।
১) খায়রুল মঞ্জিল
হুমায়ুন এবং শের শাহ সুরির যৌথ প্রচেষ্টায় ষোড়শ শতকে তৈরি হয়েছিল দিল্লির বিখ্যাত ‘পুরানা কিলা’। তার ঠিক ডান পাশেই রয়েছে এই স্থাপত্যটি। ১৫৬১ সালে মুঘল আমলের এক বিদুষী নারী মহাম আঙ্গা এই মসজিদটি তৈরি করেন। অবশ্য তাঁর আরও একটি পরিচয় আছে। সম্রাট আকবরের ধাত্রীমা ছিলেন তিনি।
মুঘল আমলের এক নর্তকীর নামে নামাঙ্কিত হয়েছিল এই মসজিদ। ছবি: সংগৃহীত।
২) মুবারক মসজিদ
মুঘল আমলের এক নর্তকীর নামে নামাঙ্কিত হয়েছিল এই মসজিদ। সেই সময়ে স্থানীয়দের কাছে যা ‘রন্ডি-কি-মসজিদ’ নামে পরিচিত ছিল। ইংরেজদের প্রতিনিধি হয়ে সে সময়ে দেশে এসেছিলেন ডেভিড অক্টারলনি। তাঁর ১৩ জন স্ত্রীর মধ্যে এক জন হলেন এই মুবারক বেগম। তিনি আসলে ছিলেন এক জন নর্তকী। হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে হয়েও সে সময়ে ধর্মান্তরিত হওয়ার মতো সাহসী পদক্ষেপ করেছিলেন এই মুবারক। নিজের তত্ত্বাবধানে, নিজের উপার্জনে এই মসজিদ তৈরি করেছিলেন।
১৭৪৮ সালে সম্রাট আহমেদ শাহ বাহাদুরের মা কুদসিয়া বেগমের নামে নির্মিত হয়েছিল এই প্রাসাদ। ছবি: সংগৃহীত।
৩) কুদসিয়া বাগ
১৭৪৮ সালে সম্রাট আহমেদ শাহ বাহাদুরের মা কুদসিয়া বেগমের নামে নির্মিত হয়েছিল এই প্রাসাদ। প্রায় ২০ একর জায়গা জুড়ে নির্মিত বিশাল এই বাগানবাড়ি তাঁর ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য তৈরি করেছিলেন নিজেই। ১৩ শতকে মহম্মদ শাহকে বিয়ে করার আগে কিন্তু কুদসিয়াও এক জন যৌনদাসী ছিলেন। স্বামীর দৌলতে ১৭৪৮ থেকে ১৭৫৪ সাল পর্যন্ত দিল্লির মসনদে প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী হন কুদসিয়া।