অফিসের কাজ হোক বা কোনও অনুষ্ঠান... মেকআপ ছাড়া বাইরে বেরোন না অনেকেই। এমনকি যাঁরা মোটেই সাজগোজ পছন্দ করেন না, তাঁরাও আইলাইনার বা হালকা লিপস্টিকের রূপটান দিয়ে নেন। এ ছাড়া সকালবেলা বেরোলে সানস্ক্রিন লাগানো তো জরুরি। ফলে বাইরে বেরোনোর আগে না চাইতেই বেশ কিছু প্রসাধনী ব্যবহার করা হয়েই যায়। এবং তার বেশির ভাগটাই কৃত্রিম। ব্যস্ততার যুগে প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে রোজ রূপচর্চা বা মেকআপের সময় হয়তো অনেকেরই হয় না। কিন্তু দিনের শেষে মেকআপ রিমুভারের কাজটা যদি প্রকৃতির নানা উপাদান দিয়েই করা যায়, তা হলে যেমন মেকআপ তোলা যায় সহজে, তেমনই ত্বকও সুরক্ষিত থাকে।
বাজারচলতি কৃত্রিম মেকআপ রিমুভারের দু’টি প্রধান সমস্যা রয়েছে। তা ব্যবহার করলে হয় ত্বক অত্যন্ত শুকিয়ে যায়, নয়তো অতিরিক্ত তেলতেলে হয়ে যায়। সমস্যা হয় সংবেদনশীল ত্বকেও। ত্বকের ধরন অনুযায়ী মেকআপ রিমুভার অনেক রকমের হয়। কিন্তু কৃত্রিম প্রডাক্টের সঙ্গে তুলনায় প্রাকৃতিক উপাদানের বিকল্প নেই। দেখা যাক, কী কী উপাদান দিয়ে সহজেই তুলে ফেলা যায় মেকআপ।
তেল
ন্যাচারাল মেকআপ রিমুভারের তালিকায় প্রথমেই আসে তেলের নাম। নানা ধরনের তেলের মধ্যে রিমুভার হিসেবে নির্দ্বিধায় বেছে নিতে পারেন নারকেল, অলিভ, হোহোবা, সুইট আমন্ড জাতীয় তেল। যত গাঢ় মাসকারা বা লিপস্টিকই হোক, তেলের মাধ্যমে তা উঠবেই।
নারকেল তেল
এই তেল শুধু রান্নার জন্যই নয়, রূপচর্চার জন্যও উপকারী। নারকেল তেল আবার অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় ক্যারিয়ার হিসেবে। তবে বাজারচলতি কমদামি নয়, নারকেল তেল কিনুন অর্গ্যানিক এবং খাঁটি। সে ক্ষেত্রে হয়তো দামটা বেশি পড়বে। ছোট জারে করে রেখে দিতে পারেন এই তেল। মেকআপ তোলার জন্য হাতের তালুতে নিয়ে সারা মুখে হালকা বুলিয়ে নিলেই হল।
সুইট আমন্ড অয়েল
নারকেল তেলের গন্ধ যাঁরা সহ্য করতে পারেন না, তাঁরা ব্যবহার করতে পারেন সুইট আমন্ড অয়েল। হালকা, সুগন্ধযুক্ত এই তেল কিন্তু মেকআপ তুলতে দারুণ কাজে দেয়। এ ছাড়া শেভ করার পরেও ব্যবহার করতে পারেন এটি। এমনকি ওয়্যাক্সিংয়ের পরেও কাজে দেয় সুইট আমন্ড অয়েল। তবে হাতের তালুতে করে নয়, কটন বলে বা প্যাডে সামান্য তেল নিয়ে মেকআপ তুলুন।
হোহোবা অয়েল অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটারি গুণের জন্য হোহোবা অয়েল বেশ পরিচিত। আবার মেকআপ তোলার কাজেও ব্যবহার করতে পারেন এটি। এই তেল যেমন মেকআপ প্রডাক্ট ব্যবহারের ফলে বেরোনো র্যাশ থেকে মুক্তি দেয়, তেমনই ত্বকও ভাল রাখে।
সুইট আমন্ড, হোহোবা জাতীয় তেল অনলাইনে সহজলভ্য।
দুধ
ন্যাচারাল রিমুভারের ক্ষেত্রে তেলের পরেই আসে দুধ। শরীরের জন্য তো বটেই, ত্বকের জন্যও দুধ অত্যন্ত উপকারী। হাজার হাজার বছর আগে রাজপরিবারের সুন্দরী নারীরা দুধে গা ডুবিয়ে বসে থাকতেন— এ প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে বারবার। ফুল ক্রিম মিল্কে থাকা ফ্যাট ও প্রোটিন ত্বকের ময়শ্চার ফিরিয়ে আনে। এ ছাড়া অ্যাকনে, এগজ়িমা জাতীয় সমস্যা দূর করে ত্বক সুস্থ রাখে। এক বাটি দুধে এক চামচ আমন্ড অয়েল মিশিয়ে মেকআপ তুলতে পারেন।
শসা
শসার নানা গুণ সম্পর্কে আমরা অনেকেই ওয়াকিবহাল। নানা কৃত্রিম মেকআপ রিমুভার প্রডাক্টেও থাকে শসার নির্যাস। ত্বকের জ্বলুনি থেকে রক্ষা করে শসা। তাই একটি শসা মিহি করে বেটে নিন। সারা মুখে লাগিয়ে রাখুন সেটা। তার পরে নরম ও শুকনো কাপড় দিয়ে আলতো করে মুছে নিলে দেখবেন, সমস্ত মেকআপ উঠে গিয়েছে। যদি মেকআপ খুব কড়া হয়, তা হলে কুরিয়ে রাখা শসার সঙ্গে মিশিয়ে নিতে পারেন সামান্য দুধ কিংবা আমন্ড অয়েল।
টক দই
রান্নাঘরের আর একটি উপকরণও মেকআপ তোলার উপযোগী। সানবার্ন হোক বা ত্বকের জ্বালা-পোড়া... সব কিছু তুলতেই সাহায্য করে দই। মেকআপ তোলার জন্য তুলোয় অল্প দই লাগিয়ে নিন। এ বার সারা মুখে সেই দই লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। এর পরে ঠান্ডা জল দিয়ে মুখ ধুলেই দেখবেন, সব মেকআপ উঠে গিয়েছে।
মনে রাখা জরুরি
সারা দিনের ব্যস্ততার পরে যতই ক্লান্তি এসে ভর করুক না কেন, মেকআপ তুলে শুতে যাওয়া উচিত।
বেশির ভাগ মেকআপ প্রডাক্টে সামান্য পরিমাণ হলেও তেল থাকে। সারা রাত সেই প্রডাক্ট ত্বকে থাকলে, রোমকূপ বন্ধ হয়ে যায়, যা অস্বাস্থ্যকর।
তা হলে বাজারচলতি মেকআপ রিমুভার, ক্লেনজ়ার বা মাইসেলার ওয়াটার ব্যবহার না করে এ বার ভরসা রাখুন প্রকৃতির উপরেই। মেকআপও উঠবে, ত্বকও হবে তরতাজা।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।