—ফাইল ছবি
আক্রান্তের ড্রপলেটের মাধ্যমে সাধারণত ছড়িয়ে পড়ছে করোনা। কিন্তু এই অতিমারির কি ‘উল্লম্ব সংক্রমণ’(ভার্টিক্যাল ট্রান্সমিশন)-ও ঘটে? অর্থাৎ মায়ের মাধ্যমে গর্ভস্থ শিশুও কি করোনা আক্রান্ত হতে পারে? বেশ কয়েকটি গবেষণাপত্র কিন্তু করোনা সংক্রমণের এই নতুন আশঙ্কার কথাও তুলে ধরছে। তবে এ নিয়ে এখনও পর্যন্ত জোরালো প্রমাণ মেলেনি।
করোনা যেন সর্বগ্রাসী। দ্রুত ঘিরে ফেলছে গোটা সভ্যতাকে। ক্রমশই ছোট হয়ে আসছে মানুষের বৃত্ত। গবেষকরা বলছেন, করোনা সাধারণত আক্রান্তের ড্রপলেটের মাধ্যমেই ছড়িয়ে পড়ে। করোনাভাইরাস রয়েছে এমন কোনও জায়গা স্পর্শ করলেও কেউ কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হতে পারেন। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) মেনে নিয়েছে বদ্ধ ঘরেও ড্রপলেট ছড়িয়ে পড়ার ফলে করোনা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এ সবের মধ্যেই নতুন একটি তত্ত্ব উঠে এসেছে। এক দল গবেষক দাবি করেছেন, মা করোনা আক্রান্ত হলে তাঁর ভ্রূণও করোনায় আক্রান্ত হতে পারে। তাঁদের দাবি, গর্ভাবস্থাতেই ছড়িয়ে পড়ে ওই রোগ। প্রায় ছ’টি গবেষণাপত্রে এমন আশঙ্কার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এই সংক্রমণ কী ভাবে হচ্ছে? গবেষকদের দাবি এটা ‘উল্লম্ব সংক্রমণ’। মায়ের থেকে তাঁর সন্তানের শরীরে করোনাভাইরাস যাচ্ছে কোন পথে? তা কি সন্তানসম্ভবার নাড়ী (প্ল্যাসেন্টা) বা জরায়ুমুখ (সার্ভিক্স)-এর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে? তা এখনও স্পষ্ট করে জানাতে পারেননি ওই গবেষকরা। কারণ প্ল্যাসেন্টা এবং প্রত্যেক মা-সদ্যোজাতের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।
কানাডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন জার্নাল (সিএমএজে)-এ প্রকাশিত হওয়া একটি গবেষণাপত্র জানাচ্ছে, জন্ম হওয়ার দিনই এক সদ্যোজাতের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। তার দু’দিন পরে তার রক্তরস এবং মলের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। সেগুলিতে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি লক্ষ করা গিয়েছে। কিন্তু ওই সদ্যোজাতের মায়ের কর্ড ব্লাড (নাড়ির রক্ত)-এর নমুনা সংগ্রহ করেননি গবেষকরা। তাই তাঁরা মনে করছেন, এটা জন্মগত ভাবে করোনা আক্রান্ত হওয়ার উদাহরণ হতে পারে।
আরও পড়ুন: জ্বর হলেই করোনার ভয়? বাড়িতে রাখতেই হবে এই সব মেডিক্যাল কিট
উল্টো দিকে প্যারিস স্যাক্লে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক ‘নেচার কমিউনিকেশনস’নামে একটি পত্রিকায় দাবি করেছেন, মায়ের থেকে সদ্যোজাতের শরীরে করোনা সংক্রমিত হয়েছে। তাঁদের দাবি, মায়ের রক্ত থেকে ভাইরাস প্ল্যাসেন্টায় পৌঁছেছে। সেখান থেকেই আক্রান্ত হয়েছে ওই সদ্যোজাত। বছর ২৩-এর মহিলা এবং তাঁর সদ্যোজাতের উপর পরীক্ষা চালান ফ্রান্সের ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।
তবে মা এবং সদ্যোজাতের শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতির তারতম্যও লক্ষ করা গিয়েছে। ফ্রান্সের ওই গবেষকদের দাবি, ওই মহিলার সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় যে রক্তক্ষরণ হয়েছিল তার থেকে তাঁর নাড়ির টিস্যুতে ভাইরাসের উপস্থিতি (ভাইরাল লোড) বেশি দেখা গিয়েছে। ওই পত্রিকায় এ-ও বলা হয়েছে, ‘‘আমাদের পরীক্ষা নিশ্চিত করেছে যে প্রসবের আগে শেষ কয়েক সপ্তাহে প্ল্যাসেন্টার মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। তবে গর্ভাবস্থার প্রথম দিকেও সংক্রমণের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।’’
আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় দেশে আক্রান্ত প্রায় ৩৯ হাজার, মহারাষ্ট্রে মোট সংক্রমণ তিন লক্ষ ছাড়াল
করোনা সংক্রমণ নিয়ে নয়া এই গবেষণার ফলের সঙ্গে একমত হতে পারছেন না রাজ্যের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। তাঁর বক্তব্য, ‘‘গত নভেম্বর থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত করোনাভাইরাস নিয়ে চিন, ইতালি, ইংল্যান্ড, আমেরিকা-সহ নানা দেশে বহু গবেষণা হয়েছে। করোনায় মৃতদের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে এবং ঘটনাক্রম ধরে ধরেও গবেষণা হয়েছে। কিন্তু প্ল্যাসেন্টার মাধ্যমে বা সাধারণ প্রসবে শিশু সংক্রমিত হয় না। কারণ করোনাভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে মায়ের শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় তা প্ল্যাসেন্টায় প্রবেশ করতে পারে না।’’
নয়া এই গবেষণা নিয়ে সন্দেহের সুর রাজ্যের মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাসের গলায়। তাঁর মতে, ‘‘করোনা অতিমারির মধ্যেই অনেকে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে করোনা সংক্রমণের কোনও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই।’’ তিনি আরও বলছেন, ‘‘একটি ভাইরাসকে জানতে ছ’মাস সময় যথেষ্ট নয়। তবে এমনটা ঘটতেও পারে। কাজেই সেই সম্ভাবনাকে খারিজ করে দেওয়া যাবে না।’’