অনুষ্ঠানের মঞ্চে বিচারকদের সঙ্গে পড়ুয়ারা। মঙ্গলবার, জি ডি বিড়লা সভাগারে। নিজস্ব চিত্র।
প্রাপ্তবয়স্ক নয় এখনও। তবে প্রাপ্তির ঝুলি ফুলেফেঁপে উঠেছে। আরও পাঁচ সমবয়সির মতো শুধু খেলনা কিংবা বই নেই তাতে। খেলা থেকে শিল্পকলায় নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করে সম্মান অর্জন করেছে ওরা। কেউ গল্ফ তো কেউ অঙ্ক, কেউ স্কেটিং তো কেউ কবিতা— নানা ক্ষেত্রে নজর কেড়েছে।
স্কুলপড়ুয়া কিশোর-কিশোরীরা আকাশ ছোঁয়ার আশ্বাস দেবে, এতে নতুন কী? অনেকের এমন মনে হতেই পারে। তবে এরা শুধু আভাস দেয়নি। ইতিমধ্যেই কয়েক পা এগিয়েও গিয়েছে। দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইনের এডুগ্রাফ তেমনই ১৮ জন স্কুলপড়ুয়াকে সম্মান জানাল। মঙ্গলবার জিডি বিড়লা সভাগারের মঞ্চে। অনুষ্ঠানে এসে বিশেষ অতিথি ‘ওয়ো’ গোষ্ঠীর কর্ণধার রোহিত কপূর বললেন, ‘‘এখানে উপস্থিত প্রত্যেক পড়ুয়া সম্পর্কে পড়েই আমি চমকে উঠছি। এই বয়সে যে এত কিছু করা যায়, কে জানত!’’
১৮ অনুত্তীর্ণ ১৮-কে সম্মান। নিজস্ব চিত্র।
দেশের নানা অঞ্চল থেকে প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার আবেদন জমা পড়েছিল। নাগাল্যান্ড থেকে ওড়িশা, এমনকি অরুণাচলপ্রদেশ থেকেও নাম লিখিয়েছিল। প্রাথমিক বাছাই পর্বের পর উঠে আসে ৫০ জনের নাম। সেখান থেকেই সেরা আঠেরোকে বেছে নেন নয় বিচারক— অভিনেত্রী পাওলি দাম, সঙ্গীতশিল্পী অনুপম রায়, মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম, দাবাড়ু দিব্যেন্দু বড়ুয়া, লেখক কুণাল বসু, অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী শ্রীনন্দাশঙ্কর, অলিম্পিক শ্যুটার জয়দীপ কর্মকার, আইআইটি খড়্গপুরের প্রাক্তন ডিরেক্টর পার্থপ্রতিম চক্রবর্তী এবং কলকাতার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করা সংস্থা ‘জঙ্গল ক্রোস’-এর অধিকর্তা পল ওয়ালশ।
কারা এই কৃতী ১৮? কাদের দেখে মুগ্ধ হলেন বিচারকরা?
সেরা আঠেরোর তালিকায় উঠে এল পূর্ব ভারতের প্রায় সব রাজ্যের স্কুলপড়ুয়ার নাম। দৈনন্দিন লেখাপড়ার বাইরেও তারা নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে খেলা কিংবা কলা জগতে। কলকাতার মেয়ে শিঞ্জিনী মুখোপাধ্যায় যেমন গল্ফ খেলে। জাতীয় স্তরে খেলে জয়ী হয়েছে দশম শ্রেণির শিঞ্জিনী। খেলেছে আন্তর্জাতিক স্তরেও। দেশের জুনিয়র গল্ফারদের মধ্যে ইতিমধ্যেই প্রথম দশের মধ্যে নেওয়া হয় তার নাম। খোয়াইশ শর্মা আবার শ্যুটার। পনেরো বছরের মেয়ে ২৭টি স্বর্ণ পদক পেয়েছে। তার সঙ্গে রুপো ও ব্রোঞ্জ তো আছেই। নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরের লিকুতা পার্সিকা তিস্সিকা তায়কোন্ডোয় পারদর্শী। জিতেছে জাতীয় পুরস্কারও। বছর চোদ্দোর বিদিশা মুন্দ্রা স্কেটিং করে। ৪টি স্বর্ণ পদক রয়েছে ঝুলিতে। পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে গতিশীল স্কেটার বলেও পরিচিত সে। টেনিস থেকে জিমনাস্টিক, সাঁতারের মতো আরও নানা ধরনের খেলার সঙ্গে যুক্তরাও উঠে এল তালিকায়।
তবে ক্রীড়ার আলোয় ঢাকা পড়েনি শিল্পের ঔজ্জ্বল্য। সেরা আঠেরোর তালিকায় রইল উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের চর্চায় যুক্ত তপলব্ধা সর্দার, রাজবংশীদের লোকগান সংরক্ষণে ব্যস্ত ফালাকাটার শ্রদ্ধা ওঁরাও, কটকে ‘জাতীয় নৃত্য প্রতিভা’-র সম্মান পাওয়া দিব্যা মোহান্তিরাও। সঙ্গে নাম জুড়ল অঙ্ক থেকে প্রযুক্তি, কুইজ, ডিবেট, বাণিজ্য চিন্তায় এগিয়ে থাকা পড়ুয়াদেরও।
সেরা আঠেরোর পাশাপাশি পুরস্কার দেওয়া হল আরও কয়েক জন কৃতীকে। বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হল খুদে কয়েক জন পড়ুয়ার কৃতিত্ব। দর্শকের পছন্দের পুরস্কারও পেল আরও কয়েক জন।