মনমোহন সিংহ। ছবি: সংগৃহীত।
দিল্লির এমস হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। ২০০৪ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদে ছিলেন এই রাজনীতিক এবং অর্থনীতিবিদ। প্রধানমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও তিনি ছিলেন সাদাসিধে জীবনযাপনের পক্ষে, যা তাঁর খাদ্যাভ্যাসেও প্রতিফলিত হত।
মনমোহন নিরামিষভোজী ছিলেন। তাঁর প্রিয় খাবারের মধ্যে ছিল উত্তর ভারতীয় সাদাসিধে সব পদ। বিশেষ করে, দই-ভাত, পাঁপড়, বেদানা এবং আচার। এ ছাড়া‘কড়ি-চাওয়াল’ অর্থাৎ দই আর বেসন দিয়ে তৈরি একটি টক-ঝাল-মিষ্টি পদের সঙ্গে সাদা ভাত— উত্তর ভারতীয় এই খাবার বড়ই পছন্দ করতেন তিনি।
‘স্ট্রিক্টলি পারসোনাল: মনমোহন অ্যান্ড গুরশরণ’ নামে স্মৃতিকথায় তাঁর কন্যা দমন সিংহ পরিবারের সঙ্গে কাটানো নানা ভ্রমণ অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন। সেই বইতে মনমোহনের প্রিয় খাবারের দোকানের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। দমন বলেন, ‘‘প্রতি দু'মাস অন্তর, আমরা কিছু পূর্বনির্ধারিত স্থানে খেতে যেতাম। দক্ষিণ ভারতীয় খাবারের জন্য দিল্লির কমলা নগরের ‘কৃষ্ণ সুইটস’, মোগলাই খাবারের জন্য দরিয়াগঞ্জের ‘তন্দুর’, চাইনিজ়ের জন্য মালচা মার্গে ‘ফুজিয়া’ আর চাট খেতে যেতাম বাঙালি বাজারে।’’ ‘ফুজিয়া’ রেস্তরাঁর কর্ণধার মনপ্রীত সিংহ সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘একটা সময় ছিল, যখন মনমোহন সিংহ মাঝেমধ্যেই সপরিবার আমাদের রেস্তরাঁয় আসতেন। আমারদের রেস্তরাঁর হট অ্যান্ড সাওয়ার স্যুপ স্প্রিং রোল খেতে খুব পছন্দ করতেন তিনি। তাঁর সন্তানেরা অবশ্য আমেরিকান চপসুয়ে বেশি পছন্দ করতেন। ২০০৭-এর পর অবশ্য তাঁদের আর এই রেস্তরাঁয় দেখতে পাইনি কখনও।’’
৭৭ বছরের পুরনো ‘ভীমসেন'স বেঙ্গলি সুইট হাউস’-এর দ্বিতীয় প্রজন্মের কর্ণধার জগদীশ আগরওয়ালের দাবি মনমোহন সিংহের পরিবার প্রায়শই তাঁদের দোকানে যেতেন। অনেক সময় বাড়ির কেউ না এলেও কাউকে না কাউকে পাঠানো হত রকমারি মিষ্টি কেনার জন্য। জগদীশ বলেন, ‘‘মনমোহন সিংহ মিষ্টি খেতে খুব ভালবাসতেন। তবে মিষ্টির প্রেমে তিনি কখনওই স্বাস্থ্যের কথা ভুলতেন না। স্বাস্থ্যের কথা ভেবে খুব কড়া স্বাদের কোনও মিষ্টি নয়, সন্দেশ এবং রসগোল্লার মতো মিষ্টিই খেতে ভালবাসতেন তিনি।’’
কঠোর নিরামিষভোজী হলেও, এক বার বাংলাদেশ সফরে গিয়ে মনমোহন তাঁর খাদ্যাভ্যাস বদলে ফেলতেও রাজি ছিলেন বলে জানান। তিনি পদ্মার ইলিশ ইলিশ খাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। ২০১১ সালে বাংলাদেশের এক সংবাদ সংস্থাকে বলেছিলেন, “আমি ইলিশ মাছ দিয়ে তৈরি রকমারি সুস্বাদু পদের কথা শুনেছি। সেই স্বাদ চেখে দেখতে আমি আমিষভোজী হতেও রাজি।”