আদতে ট্র্যাকশন হল হাড়ের ব্যথা বা ভেঙে যাওয়া নিরাময়ের পুরনো এক পদ্ধতি। অস্ত্রোপচার যখন এত উন্নত হয়নি, সে সময়ে ট্র্যাকশনই ছিল একমাত্র উপায়। ফ্র্যাকচারের ক্ষেত্রে যেখানে প্লাস্টার করা সম্ভব হচ্ছে না, সেখানে নড়বড়ে হাড় কোনও কাপড় দিয়ে টেনে বেঁধে রাখলে ব্যথা যেমন কমে, তেমনই এক সময়ে নিজে থেকেই তা জুড়ে গিয়ে সেরে যায়। টেনে ধরে রাখার এই পদ্ধতিই ট্র্যাকশন নামে পরিচিত। প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট দিকে পরিমিত ওজন ঝুলিয়ে দেওয়া হয় ট্র্যাকশনে, যা সেই অংশের মাসল রিল্যাক্স, নার্ভ রুটের উপরে তৈরি হওয়া প্রেশার কমানো, ইনট্রা ভার্টিব্রাল ডিস্কের কমপ্রেশন কমানোর ক্ষেত্রে উপকারে আসে। ফিজ়িক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশনের চিকিৎসক ডা. শঙ্করপ্রসাদ সিংহ বিশদে জানালেন, বিভিন্ন ধরনের ট্র্যাকশন সম্পর্কে:
স্কেলিট্যাল ট্র্যাকশন: লোকাল অ্যানাস্থেশিয়ার মাধ্যমে স্কাল বোনে লোহার আংটা প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়। এ বার হাড়ের অ্যালাইনমেন্ট ঠিক রেখে নির্দিষ্ট পরিমাণ ওজন দিয়ে এই ট্র্যাকশন দেওয়া হয়। অপারেশন করা না গেলে এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়।
সারফেস ট্র্যাকশন: এ ক্ষেত্রে শরীরের সারফেসের কোনও অংশে (ঘাড়, কোমর বা পা) কাপড়/বেল্ট বেঁধে তার দু’পাশে দু’টি আংটা দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া ওজন দিয়ে ট্র্যাকশন দেওয়া হয়।
দেওয়ার সময় ও ওজনের অনুপাত ভেদে ট্র্যাকশনকে আরও কয়েক প্রকারে ভাগ করা যায়। যেমন—
কন্টিনিউয়াস ট্র্যাকশন: ১০-১২ পাউন্ড ওজন আধঘণ্টা বা তার কিছু বেশি সময় ধরে দেওয়া হয় এ ক্ষেত্রে। ট্র্যাকশন ইউনিটের সাহায্যে কোমর বা ঘাড় থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় ওজন, যার পুলিংয়ের ফলে মাসল রিল্যাক্সড হয় এবং এখানকার নার্ভ রুট কমপ্রেশন কমে। কম ওজন-বেশি সময় ধরে দিনে তিন-চার বার দেওয়া যেতে পারে এই ট্র্যাকশন।
ইন্টারমিটেন্ট ট্র্যাকশন: অপেক্ষাকৃত বেশি ওজন, অল্প সময় ধরে দেওয়া হয় এ ক্ষেত্রে, কিছুটা বিরতি দিয়ে। ইদানীং আধুনিক মেশিনের দ্বারা দেওয়া যায় এই ধরনের ট্র্যাকশন, যেখানে একটি নির্দিষ্ট পুল টাইম এবং রিল্যাক্স টাইম দেওয়া থাকে।
ডা. সিংহের কথায়, ‘‘রোগী কতটা ওজন কতক্ষণ ধরে সহ্য করতে পারছে, সেটাও এ ক্ষেত্রে বিবেচ্য। কাকে কতটা ওজন দেওয়া হবে, এক্স রে ও বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আগেই। সার্ভাইক্যাল স্পাইনে ইনজুরি হলে প্রি-অপারেটিভ ট্র্যাকশন দেওয়া হয়ে থাকে।’’ ট্র্যাকশনের পাশাপাশি কাউন্টার ট্র্যাকশন দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করলেন তিনি।
যাঁদের কোনও অংশের মাসলের শক্ত হয়ে গিয়েছে, সোজা করা যায় না, সে ক্ষেত্রে মাসলটাকে স্ট্রেচ করার জন্যও সারফেস ট্র্যাকশন দেওয়ার চল আছে। ফিজ়িয়োথেরাপিস্ট সুরজিৎ রায় বললেন, ‘‘ফিক্সড ফ্র্যাকশন ডিফর্মিটির জন্য এখনও বিলো নি ট্র্যাকশন দিয়ে থাকি আমরা।’’
কখন ট্র্যাকশন চলবে না?
প্রেগন্যান্সি, হার্নিয়া, ক্যানসার, টিউবারকিউলোসিস, হার্ট বা ফুসফুসের সমস্যা থাকলে ট্র্যাকশন দেওয়া চলবে না। অস্টিয়োপোরোসিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের অ্যাডভান্সড স্টেজেও ট্র্যাকশন চলবে না। ভঙ্গুর বা দুর্বল হাড় ট্র্যাকশন নিতে সক্ষম নয়। ছোটদের অপরিণত হাড়ের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। ট্র্যাকশন দেওয়ার আগে সফট টিসু বা লিগামেন্টের ইনজুরির মতো ঘটনা থেকে সাবধান থাকা দরকার।