সিঁড়ি ভাঙলেই বুক ধড়ফড়, অল্পেই ক্লান্ত হলে তাকে অবহেলা করবেন না। ছবি: শাটারস্টক।
সিঁড়ি বেয়ে ফ্ল্যাটে ওঠা হোক বা বাজারে সারতে দামদর হেঁকে ফেরা। আজকাল আপনি আর আগের মতোও ফুরফুরে মেজাজে এ সব সামাল দিতে পারছেন না। অল্পেই হাঁপিয়ে যাচ্ছেন। সঙ্গে বুক ধড়ফড়, ক্লান্তি, সারাদিন অবসন্ন ভাব।
এই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকলে আর দেরি করবেন না। সিঁদুরে মেঘ দেখছেন চিকিৎসকরা। প্রতি দিন ভিড় জমানো রোগীদের মতো আপনিও হয়তো ডিফিউজ প্যারেনকাইমাল লাং ডিজিজ বা ‘ডিপিএলডি’-র শিকার। প্রতি দিন শরীরে তিলতিল করে বাড়ছে এই রোগ। সময় মতো চিকিৎসকের কাছে না গেলে ডিপিএলডি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে, এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের।
ডিপিএলডি কী
ডিফিউজ প্যারেনকাইমাল লাং ডিজিজ একটি জটিল রোগ, যাতে ফুসফুসের কার্যকারিতা ধীরে ধীরে বিনষ্ট হয়ে যায়। এই অসুখের প্রভাবে শ্বাসকষ্ট ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং এক সময় স্থায়ী রূপ নেয়, তখন পরিশ্রম ছাড়াও কষ্ট হতে থাকে। এর সঙ্গে রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস ও সারকোয়ডোসিস-এর সমস্যা থাকলে এই অসুখের প্রবণতা বাড়ে।
আরও পড়ুন: ‘টাকপোকা’ আসলে কী? কেমন করে ঠেকাবেন, প্রতিকার জানেন?
শৈশবেও হানা দিতে পারে এই অসুখ, তাই শিশুকে দূরে রাখুন দূষণ থেকে।
ডিপিএলডির প্রধান উপসর্গ
ডিপিএলডির রোগীরা শুকনো কাশির সমস্যায় ভোগেন। কিছুতেই সেই কাশি কমতে চায় না। আর শরীর প্রচণ্ড পরিমাণে অবসন্ন থাকে তাঁদের। এই দুইটি উপসর্গ নাছোড় হয়ে শরীরে বাসা বাঁধলেই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
ডিপিএলডির কারণ
ফুসফুস বিশেষজ্ঞ দোলনচাঁপা দাশগুপ্ত জানাচ্ছেন, ডিপিএলডি আক্রান্তের পরিমাণ তৃতীয় বিশ্বে হয় অনেক বেশি। এর মূল কারণই হল দূষণ। তাঁর কথায় মূলত দূষণ ও ধুলোই এই অসুখের প্রধান কারণ। গ্রেন ডাস্ট অর্থাৎ শস্য ঝাড়াইয়ের ধুলো, পাখির শুকনো বিষ্ঠা, কলকারখানা আছে এমন জায়গায় সিলিকার দূষণ ও অ্যাসবেস্টসের দূষণ ইত্যাদি কিছুই ডিপিএলডিকে ডোক আনে। সব থেকে বড় কথা, যেখানে সেখানে প্লাস্টিক পোড়ানোর ফলে লেড জাতীয় ধাতুর বিষাক্ত অক্সাইড ভেসে বেড়ায়। এগুলি ফুসফুসের বায়ুথলি বা অ্যালভিওলিগুলি মোটা করে, তার স্থিতাস্থাপকতা নষ্ট করে দেয়। তাই বুকের দূষণ বাইরে বেরতে পারে না। চিকিৎসক আরও জানাচ্ছেন অনেক সময়ে আমরা অন্য রোগ চেপে রেখেও ডিপিএলডি-র মত রোগ ডেকে আনি। বড় কারণ হিসেবে রয়েছে ধূমপানের মতো বদভ্যাসও।
আরও পড়ুন: গয়না কেনার সময় হলমার্ক ছাড়াও এ সব নিয়ম আদৌ মানেন? নইলে কিন্তু ঠকছেন
ধূমপান ছাড়ুন আজই।
আমাদের অজ্ঞানতা, আমাদের ভয়
ডিপিএলডি নির্ণয়ে আমাদের সবচেয়ে বড় বাধা আমরাই, এমনটাই মনে করছেন চিকিৎসকরা। বেশির ভাগ সময়েই কাশি বাড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই পাড়ার দোকান থেকে কাফ সিরাপ কিনে খাই আমরা। এতে সাময়িক কাশি চাপা পড়ে কিন্তু বিপদের সম্ভাবনা কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
ডিপিএলডির চিকিৎসার ক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি রোগ নির্ণয় করা যায় ততই মঙ্গল। রোগ ধরতেও যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। বুকের এক্স-রে, বিশেষ ধরনের সিটি স্ক্যান বা এইচআরসিটি করতে হয়। প্রয়োজন হয় স্পাইরোমেট্রি, ডিফিউশন ক্যাপাসিটি নির্ধারণের। এমনকি ব্রংকোস্কপি বা ফুসফুস বায়োপসিও করা দরকার হতে পারে। সুতরাং রোগ পুষে রাখবেন না। সুস্থ জীবন ফিরে পেতে সুচিকিৎসায় ভরসা রাখুন।
(ছবি: শাটারস্টক।)