সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল গির্জা। ফাইল চিত্র।
ঔপনিবেশিক স্থাপত্যে সমৃদ্ধ কলকাতায় এখনও নজর কাড়ে বেশ কিছু গির্জা। বড়দিনের আগে থেকেই এগুলি আলোকমালায় সেজে উদাসী শীতের মরসুমে আবারও শহরে উৎসবের মেজাজ ফিরিয়ে আনে।
ইংরেজরা এ দেশে আসার বহু আগেই খ্রিস্টধর্মাবলম্বী পর্তুগিজ ও আর্মেনীয়রা বাংলায় এসেছিলেন। পরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত ধরে ব্যবসায়ীদের আনাগোনা শুরু হয় কলকাতায়। এর পরেই একে একে বিভিন্ন স্থাপত্যশৈলীর প্রভাবে তৈরি হতে থাকে কলকাতার গির্জাগুলি। এই বড়দিনে কোন কোন গির্জায় ঢুঁ মারতে পারেন, রইল সেই হদিস।
আর্মেনিয়ান চার্চ: কলকাতার প্রাচীন গির্জাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বড়বাজার অঞ্চলের আর্মেনিয়ান চার্চ। ১৭ শতকের প্রথম ভাগে আর্মেনীয়রা চুঁচূড়া হয়ে বাণিজ্যিক কারণে কলকাতায় আসেন। কলকাতায় আসার পরে দীর্ঘ দিন তাঁদের উপাসনার জন্য কোনও গির্জা ছিল না। ১৬৮৮ সালে প্রথম বার তৈরি হয় গির্জাটি। তার পর ১৭২৪ সালে পুনর্নির্মাণ করা হয় আর্মেনীয় ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে। চার্চের ভিতরে রয়েছে একটি ছবির সংগ্রহশালা। এই চার্চের ভিতরের মার্বেলের স্থাপত্যকীর্তি দর্শকদের মুগ্ধ করে।
সেন্ট অ্যান্ড্রুজ চার্চ: কলকাতার স্কটিশ গির্জাগুলির অন্যতম ডালহৌসি অঞ্চলের সেন্ট অ্যান্ড্রুজ গির্জা। গ্রিক স্থাপত্যশৈলীর অনুপ্রেরণায় নির্মিত এই গির্জাটি আগে ছিল পুরনো মেয়র্স কোর্ট। সেখানেই এক বিচারসভায় মহারাজ নন্দকুমারের ফাঁসির আদেশ হয়েছিল। ১৭৯২ সালে আদালতের বাড়িটি ভেঙে ফেলা হয়। পরে ১৮১৫ সালে এই জায়গাটি স্কটিশদের গির্জা তৈরির জন্য দেওয়া হয়। ১৮১৮ সালে গির্জাটির উদ্বোধন হয়। ১৮৩৫-এ গির্জার চূড়ায় বসানো হয় একটি মূল্যবান ঘড়ি। গির্জার ভিতরে আজও দেখা যায় কিছু দুর্লভ তৈলচিত্র। এই চার্চে যেতে হলে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টোর মধ্যে পৌঁছতে হবে আপনাকে।
সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল: ১৮১৯ সালে বিশপ মিডলটনের উদ্যোগে ময়দান চত্বরে একটি গির্জা তৈরির পরিকল্পনা করেন খ্রিস্টানরা। এর পরেই সাহেবপাড়ার কাছাকাছি জমি খোঁজা শুরু হয়। ১৮৩৯ সালে গির্জাটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ইন্দো-গথিক স্থাপত্যের নিদর্শন এই গির্জাটি তৈরি করতে সময় লাগে আট বছর। ১৮৪৭ সালে সাধারণের জন্য খোলে গির্জার দরজা। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এই চার্চে আপনি ঢোকার অনুমতি পাবেন। এই গির্জার সবচেয়ে আকর্ষক বৈশিষ্ট্য হল এর স্থাপত্যের অভিনব নকশা।
সেন্ট জেমস চার্চ: ১৮২৯ সালে তৈরি এই গির্জাটির অবস্থান ছিল আমহার্স্ট স্ট্রিট অঞ্চলে। তবে উইপোকার আক্রমণে গির্জাটির অবস্থা হয়ে যায় বেহাল। শুরু হয় মেরামতির কাজ। তবে ১৮৫৯ সালে হঠাৎই ভেঙে পড়ে সেই গির্জা। এর পরে ওই নামেই একটি গির্জা গড়ে তোলার চেষ্টা হয়। লোয়ার সার্কুলার রোডে একটি বাড়ি সংলগ্ন বিশাল বাগান কেনা হয় গির্জা তৈরির জন্য। সেখানেই ১৮৬২ সালে গির্জা তৈরির কাজ শেষ হয়েছিল।
সেন্ট জনস চার্চ: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নির্মিত কলকাতা শহরের প্রথম ভবনগুলির মধ্যে এই গির্জা অন্যতম। কলকাতার তৃতীয় প্রাচীনতম গির্জা, সেন্ট জনস চার্চ ১৮৪৭ সাল পর্যন্ত কলকাতার অ্যাংলিকান ক্যাথিড্রাল হিসাবে কাজ করে। এই গির্জায় গেলেই আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে গির্জার মেঝে, যা গাঢ় নীল-কালো পাথর দিয়ে তৈরি। বিবাদী বাগের কাছে অবস্থিত এই গির্জা আপনি খোলা পাবেন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।